জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী বা ইউএনডিপি (UNDP) বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসাবে পরিচিত শেখ পরিবার দ্বারা পরিচালিত সিআরআইকে বিভিন্ন প্রজেক্টে অর্থায়ন করছে ইউএনডিপি। সম্প্রতি WOMEN’S SAFETY IN PUBLIC PLACE (WSPP) শিরোনামে একটি জরিপে সি আর আই এবং এন এইচ সি আর নামের একটি এনজিও কাজ করছে। এই জরিপের অর্থের যোগানদাতা হচ্ছে ইউএনডিপি।
WOMEN’S SAFETY IN PUBLIC PLACE (WSPP) এর ওয়েবসাইটের তথ্য থেকে জানা গেছে, আওয়ামী সিআরআই এর যুব প্লাটফর্ম YOUNG BANGLA, HUMAN RIGHTS PROGRAMME (HRP), ইউএনডিপি (UNDP) এবং NATIONAL HUMAN RIGHTS COMMISSION (NHRC) এক হয়ে কাজ করছে। ইউএনডিপিতে আওয়ামী লীগ কতখানি অনুপ্রবেশ করেছে তারই এক উদাহরণ এই প্রকল্প।
বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দল, ভিন্নমতের সাংবাদিক ও মুক্তমতামত প্রকাশের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে শেখ পরিবারের প্রভাবশালীদের দ্বারা পরিচালিত সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। আওয়ামী লীগের ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ হিসাবেও পরিচিত এই সংগঠনটি।
ইতোমধ্যে সিআরআই (CRI) আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি প্রোগাগাণ্ডা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এনিয়ে অতীতে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল সুইডেন ভিত্তিক অনলাইন সংবাদ মাধ্যম নেত্রনিউজ।
উল্লেখ্য, মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগে সিআরআইয়ের অন্যতম কর্মী তন্ময় আহমেদকে সম্প্রতি জার্মানির কনরাড এডুনার স্কুল ফর ইয়ং পলিটিশিয়ান্সয়ে একটি সম্মানজনক ফেলোশিপ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
সুইডেনভিত্তিক নেত্রনিউজের খবর থেকে জানা গেছে, নেত্র নিউজ-এর এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল এবং ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই অপপ্রচার করছিল সিআরআই। এমন পরিস্থিতিতে তন্ময়ের অপপ্রচার সম্পর্কে কনরাড এডুনার ফাউন্ডেশনকে ইমেইলে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডেভিড বার্গম্যান। ওই ইমেইলের সূত্র ধরেই তারা একটি এথিক্স কমিটি গঠন করে এবং তন্ময় আহমেদের কাছে ব্যাখ্যা চায়। কিন্তু তন্ময় ফাউন্ডেশনের সামনে তথ্য-প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন। পরে ফেলোশিপ থেকে বের হতে হয় তাকে।
নেত্র নিউজের খবর থেকে আরো জানা গেছে, সিআরআই নামক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান যথাক্রমে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এছাড়া, শেখ হাসিনার ছোটবোন শেখ রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক এবং ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এই প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি। বলাবাহুল্য এই চারজন শেখ হাসিনার পরিবারের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য।
আরো জানা গেছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুও সিআইএর আরেকজন ট্রাস্টি।
সুতরাং এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, সিআর আই কোন নিরপেক্ষ সাধারণ থিঙ্কট্যাঙ্ক নয়। বরং শেখ হাসিনার পারিবারিক থিঙ্কট্যাঙ্ক। এটিকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করে এএলবিডি ওয়েবটিম। এ এল বি ডির পূর্ণাঙ্গরূপ হল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ।
এটা বিষ্ময়কর যে, ঢাকার ইউএনডিপি সরকার দলীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনে কাজ দিয়েছে।
ইউএনডিপির ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, এর আবাসিক প্রতিনিধি (বাংলাদেশ) হিসেবে কাজ করছেন ভারতীয় নাগরিক সুদীপ্ত মুখার্জি। আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে ই-মেইলে জানতে চাওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রপাগাণ্ডা প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত সিআরআইকে তিনি কিভাবে বিভিন্ন প্রজেক্টে সম্পৃক্ত করছেন? একটি দলীয় প্রতিষ্ঠানকে ইউএনডিপি আদৌ অর্থায়ন করতে পারে কি না? দুর্ভাগ্যজনকভাবে ই-মেইল প্রেরণের পর ৪ দিন পার হয়ে গেলেও তার কোন জবাব পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা হয়েছে। আইন ও বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন এমন ভয়াবহ স্তরে পৌছেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ডিসেম্বরের ১০ তারিখে বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান ও র্যাব প্রধানসহ আরো কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসাবে পরিচিত সিআরআইকে বিভিন্ন প্রজেক্টে ইউএনডিপির অর্থায়ন নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ঢাকায় জাতিসংঘের এ অফিস মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত কি না সেটাও জনগণের প্রশ্ন। উৎসঃ আমার দেশ