বিশু / সমীপ, শিলচর (অসম): রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল গতকাল আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেছিলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় অসম আন্দোলনের ফসল। মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ছাত্র সংগঠন আকসা-র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তথা গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী প্রদীপ দত্তরায়।
প্রদীপ বলেন, ১৯৮০-র দশকে বরাকের ছাত্রছাত্রীদের ব্রহ্মপুত্র উপত্যাকায় পড়াশোনা করতে গিয়ে উগ্র অসমিয়া জাতিয়তাবাদীদের কাছে প্রচণ্ড অসুবিধার সম্মুখীন হতে হতো। ছাত্র সংস্থা আসু এবং তত্কালীন অসম গণ সংগ্রাম পরিষদের যুবকর্মীরা বইখাতা ছেঁড়া থেকে শুরু করে তাঁদের প্রায়ই শারীরিক লাঞ্ছনা করতেন। যার ফলে বরাকের ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। ওই সমস্যার সমাধানকল্পে ১৯৮৩ সালের ১৫ মে শিলচরের অরুণ চন্দ আইন মহাবিদ্যালয়ে অল কাছাড় করিমগঞ্জ ছাত্র সংস্থা (আকসা) নামের ছাত্র সংগঠনে জন্ম হয়। তাঁদের প্রধান দাবি ছিল, বরাক উপত্যকায় একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। ওই দাবির ভিত্তিতে ১০ বছরের আন্দোলন এবং এই আন্দোলনের ফলে আসু কর্তৃক ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বরাকের ছাত্রছাত্রীদের উপর নিগ্রহ আরও বেড়ে যায়।
প্রাক্তন ছাত্রনেতা দত্তরায় বলেন, ১০ বছরের কঠোর আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ১৯৮৯ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর উদ্যোগে সংসদের উভয় কক্ষে ‘আসাম বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করতে আইন পাশ হয়। অসমের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লকুমার মহন্ত সরকার এই আইন পাশ হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছিল। এমন-কি সাংসদ বিজয়া চক্রবর্তী ওই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে সংসদে বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। এছাড়া আইনটি পাশ হওয়ার পরও তত্কালীন অগপ সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমির ব্যবস্থা করতে অস্বীকার করে। পরবর্তীতে হিতেশ্বর শইকিয়া মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন দরগাকোণায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২,৫০০ বিঘা জমির বন্দোবস্ত করে দেন। যদিও অসম চুক্তিতে একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ ছিল। কিন্তু অসম চুক্তির হোতারা কোনও দিনই চাননি বরাকে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হোক। উল্টো তাঁরা তেজপুরে এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তরের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন।
এছাড়া অসম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সূত্র ধরেই তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে তেজপুরে অনুরূপ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ নিয়েছেন এবং সেই অর্থে তেজপুরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নেপথ্যে আকসা-র অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আন্দোলনের পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে।
প্রদীপবাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিলচরের বর্তমান সাংসদের বাবা প্রয়াত বিমলাংশু রায় আকসা-র আন্দোলনে সক্রিয় ও বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু সাংসদ রাজদীপ রায় গতকালের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও মূখ্যমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যের কোনও বিরোধিতা করেননি তিনি। বাকি বিধায়কদের নীরব ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ ব্যক্ত করেন প্রদীপ দত্তরায়।
দত্তরায় বলেন, হয়-তো মুখ্যমন্ত্রীকে অন্যরা এ ব্যাপারে ভুল বুঝিয়েছেন বা তিনি প্রকৃত ইতিহাস জানেন না। মুখ্যমন্ত্রীর এই অবাঞ্ছিত বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন প্রদীপ দত্তরায়। পাশাপাশি তিনি বরাকের সমস্ত জনসাধারণকে সম্মিলিতভাবে মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান প্রদীপ দত্তরায়।





