ডিমসা ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (ডিএনএলএ) এর মোট ৪৬ জন ক্যাডার অস্ত্র সমর্পণ করে এবং ডিমা হাসাও জেলার হাফলং থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে খেপ্রে একটি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগদান করে
পঙ্কজকুমার দেব, হাফলং: গত শনিবার পাহাড়ের খেপ্রে বাজার অডিটোরিয়ামে অসম পুলিশের দ্বারা আয়োজিত অনুষ্ঠানে পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের সিইএম, ইএম এবং রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের উপস্থিতিতে অস্ত্র ত্যাগ করে মূলস্রোতে ফিরে আসেন ডিএনএলএ ক্যাডাররা।
সংগঠনের অধ্যক্ষ ইথিকা ডিফুসা এবং মুখ্য সেনাধ্যক্ষ মুস্রাং সরংফোংয়ের নেতৃত্ব এদিন আনুষ্ঠানিকতা রক্ষা করে ৪৬ ক্যাডার জঙ্গল ছেড়ে মূলস্রোতে সামিল হোন। সঙ্গে ৩টি একে সিরিজের রাইফেল, ১টি এম সিক্সটিন রাইফেল,৩টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল এবং ২টি পয়েন্ট ২২ পিস্তল তুলে দেয়। এর আগে অসমের ডিমা হাসাও পুলিশের তরফে ডিমাসা রিশা দিয়ে তাদেরকে বরন করে নেওয়া হয়। এদিন খেপ্রের জঙ্গল থেকে সরাসরি এসেই উগ্রপন্থী সদস্যদের অস্ত্র ত্যাগ করতে দেখা যায়।
সিইএম দেবোলাল গর্লোসা বলেন ‘ ডিএনএলএ সদস্যদের মূলস্রোতে প্রত্যাবর্তন অবশ্যই পার্বত্য জেলার জন্য ভালো খবর। এতে জেলাজুড়ে স্থায়ী কায়েম হবে। প্রগতির পথ আরও প্রশস্থ হবে। সরকারের এহেন পদক্ষেপ অবশ্যই প্রশংসনীয়।’ এদিন স্বাগত বক্তব্যে ডিমা হাসাও জেলার পুলিশ সুপার জয়ন্ত সিং বলেন ডিএনএলএ গোষ্ঠীকে হিংসা পরিহার করে মূলস্রোতে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সমাজকর্মী পবিত্র নুনিসা এবং মুক্তেশ্বর কেম্প্রাইর অবদান অনস্বীকার্য। এতে পার্বত্য ডিমা হাসাও জেলার বিভিন্ন দল সংগঠনের সহযোগিতাও ছিল প্রশংসনীয়। অন্যথা এই অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না।
বক্তব্য রাখেন আইজিপি (আইন শৃঙ্খলা) দীপককুমার কেডিয়া, সিইএম দেবোলাল গর্লোসা,জেলা শাসক পল বরুয়া প্রমুখ।উল্লেখ্য, অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার উপস্থিতিতে গত ২৮ অক্টোবর দিসপুরে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করার একপক্ষ কালের মাথায় শনিবার মাইবাং থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরের খেপ্রে বাজার অডিটোরিয়ামে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের সিইএম দেবোলাল গর্লোসা, অসম পুলিশের এডিজিপি (বিশেষ শাখা) হীরেন নাথ, আইজিপি (আইন শৃঙ্খলা) দীপককুমার কেডিয়া, ইএম রতন জারাম্বুসা, বিশ্বজিৎ দাওলাগুপু, জেলাশাসক পল বরুয়া, ১১ আসাম রাইফেলসের কমান্ডিং অফিসার প্রকাশ ভান্ডারি ছাড়া ছাত্র সংগঠন ডিমাসা স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, আডসু, ডিমাসা অ্যাপেক্স বডি জাদিখে নাইশ্বো হসম, মাদার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অস্ত্র ত্যাগ করে মূলস্রোতে ফিরে আসেন ডিএনএলএ ক্যাডাররা।
ভিড়ে ঠাসা অডিটোরিয়ামে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়া যুবকদের করতালি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।এদিন খেপ্রেতে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ‘ নর্থ ইষ্ট নাও* ‘ র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ডিএনএলএ চেয়ারম্যান ইথিকা ডিফুসা বলেন ‘ আমাদের ইতিমধ্যে সরকারের সঙ্গে ছয় মাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এবার কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে আমাদের দাবি নিয়ে আলোচনা হবে। আর এতে নিশ্চয় বৃহত্তর ডিমাসা সমাজ ভালো কিছু ফলাফল লাভ করতে সক্ষম হবেন। তবে আমাদের দাবি নতুন কিছু নয়। সেটা আগেও বলেছি যে মহাভারতের যুগেই ডিমাসাদের পৃথক রাজ্য ও রাজত্ব ছিল। ওই রাজ্য অর্থাৎ হিড়িম্বারাজি রাজ্যের দাবিতেই ডিএনএলএর সশস্ত্র আন্দোলন। এছাড়াও ডিমাসাদের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে।’
তিনি বলেন আজ ৪৬ ক্যাডার আনুষ্ঠানিকতা রক্ষা করে এসেছে যদিও মোট তিন শতাধিক নেতা ক্যাডার রয়েছে বলে স্পষ্ট করে দেন ইথিকা। রাজ্য পুলিশের বিশেষ শাখার এডিজিপি হীরেন নাথ বলেন ডিএনএলএ দুই পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন কুটাঘাত মূলক কার্য সংঘটিত করে। এতে আইন শৃঙ্খলা জনিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ৭ সেপ্টেম্বর একপক্ষীয় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রারম্ভিক আলোচনা হয়। এরপর যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। আজ বেশ কিছু ক্যাডার আসছে। অবশিষ্টরাও অচিরেই মূলস্রোতে ফিরে আসবেন।
তিনি আশাবাদী যে ডিএনএলএই হবে পার্বত্য জেলার অন্তিম উগ্রপন্থী সংগঠন। এতে শান্তি চিরস্থায়ী হবে। এর পাশাপাশি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পলিসির ভিত্তিতে ক্যাডারদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুনঃ সংস্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে। সঙ্গে আলোচনাও চলতে থাকবে।প্রসঙ্গত, ডিমাসা ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (ডিএনএলএ) ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে আত্মপ্রকাশ করে।
পৃথক ডিমাসা রাজ্য গঠনের লক্ষ্যেই এদের আন্দোলন চলতে থাকে। এতে সেনা ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কিছু নেতা ক্যাডারের মৃত্যু হয়েছে। ডিমাসাদের সাংবিধানিক তথা ঐতিহাসিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে প্রথমে ডিমাসা ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্স (ডিএনএসএফ) নামের সশস্ত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছিল এবং এরপর ছিল ডিএইচডি, ডিএইচডি (জুয়েল)। এবার চতুর্থ ডিমাসা সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে ডিএনএলএ সরকারের কাছে অস্ত্র তুলে দিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে মূলস্রোতে ফিরে আসে।