- গাজা-বৈরুত-তেহরানে উল্লাস!
- নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি ‘ফল ভুগতে হবে’।
- ইরানের আরো কঠোর হামলার হুঁশিয়ারি।
- লেবাননে আরো সৈন্য পাঠাচ্ছে ইসরাইল।
লণ্ডন, ০২ অক্টোবর- দখলদার ইসরাইলি সেনা হামলার পাল্টা জবাবে ইসরাইলের সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে মঙ্গলবার রাতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরাইলে ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ছে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র। ইরানি সেনার দাবি, ইতোমধ্যেই প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে ইসরাইলে। এরমধ্যে অন্যতম ছিল নেভাতিম বিমান ঘাঁটি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন হামলার ভিডিও বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, নেভাতিম ঘাঁটিতে অন্তত কয়েক ডজন মিসাইল ছুড়েছে ইরান। যেগুলো একের পর এক ঘাঁটিতে আঘাত হানতে দেখা গেছে। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, তারা যে দুটি ভিডিও বিশ্লেষণ করেছে সেগুলোর মধ্যে একটি ধারণ করা হয়েছে আরাত আন-নাকাব শহর থেকে। এটি বিমান ঘাঁটির ঠিক দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। ভিডিওতে যেসব ভবন দেখা গেছে; সেগুলোর সঙ্গে পুরোনো ছবির সাদৃশ্যতা খুঁজে পেয়ে সিএনএন নিশ্চিত করেছে; ভিডিওটি ঘাঁটির পাশ থেকেই ধারণ করা হয়েছে।
আকাশের উপর দিকে ধরা রাখা ক্যামেরায় ধরা পড়েছে কয়েক ডজন মিসাইল এই ঘাঁটির উপর পড়ছে। ওই সময় সেখানে সাইরেন বাজছিল। ওই সময় আরও দেখা যায়, মিসাইল ঠেকানোর একটি প্রতিরোধী মিসাইল ব্যাটারি থেকে ছুড়ছে ইসরাইলি বাহিনী। এছাড়া ঘাঁটির কন্ট্রোল টাওয়ারও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল। ঠিক তখনই ঘাঁটিতে মিসাইল পড়তে থাকে এবং সেগুলো বিস্ফোরিত হতে থাকে। এরপর ওই ঘাঁটি থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি বের হওয়া শুরু করে। তখনও ঘাঁটিতে একের পর এক মিসাইল পড়তে ও বিস্ফোরিত হতে থাকে।
গাজা-বৈরুত-তেহরানে উল্লাস
ইসরাইলের ওপর ইরানের একটি প্রতিশোধমূলক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় লক্ষ্য অর্জিত হওয়ায় জনগণ বৈরুত, গাজা এবং তেহরানে উদযাপন করতে রাস্তায় নেমে আসে। ইসরাইলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০০ থেকে ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ইরানি মিডিয়া জানিয়েছে যে, বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। ফলে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে। তেহরান এবং ইরান জুড়ে অন্যান্য শহরগুলোতে লোকেরা এ উপলক্ষে তাদের বাড়িঘর থেকে বেরিয়ে আসে। রাস্তায় এবং হাইওয়েতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, নাগরিকরা উদযাপনে ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিয়েছে। মার্কিন ও ইসরাইলি সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার সময় ইরানের জনসাধারণ ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এর জন্য তাদের সমর্থনের কথাও প্রকাশ করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ফুটেজে দেখা গেছে, গাজার ফিলিস্তিনিরাও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা উদযাপন করছে, যা এই অঞ্চলে ঘটনার প্রভাবকে আরো তুলে ধরেছে।
নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি, ‘ফল ভুগতে হবে’
এই হামলার পরেই ইরানকে হুঁশিয়ারি দিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফল ভুগতে হবে ইরানকে। অন্য দিকে, ইরানকে সতর্ক করেছে আমেরিকাও। ইরান হামলার পরে মঙ্গলবার রাতেই মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকেন নেতানিয়াহু। সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের বলেছেন, ‘ইরান হামলা করে ঠিক কাজ করেনি। এর ফল ভুগতে হবে তাদের।’
প্রতিশোধ নিলে ইরানের আরও ‘কঠোর’ হামলার হুঁশিয়ারি
তেহরানের বিরুদ্ধে ইসরাইল যদি কোনও মূলক পদক্ষেপ নেয়, তবে ইসরাইলের সমস্ত অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাবে ইরান। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর যুগ্ম প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি এই ঘোষণা দিয়েছেন। ‘যদি [ইসরাইল]… এই ধরনের অপরাধ অব্যাহত রাখে বা আমাদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কিছু করতে চায়, তাহলে আজকের রাতের অভিযান আরও কয়েকগুণ শক্তিশালী হবে এবং তাদের সমস্ত অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে,’ বাঘেরি বলেন। তিনি আরও বলেছেন যে ইরানের বিশেষায়িত সামরিক শাখা রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করার জন্য প্রস্তুত। তবে ইরানের হামলার নিন্দা করে ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, ইসরাইলকে সম্পূর্ণ সমর্থন করা হবে। আমেরিকা সেনা সাহায্য করবে ইসরাইলকে। তবে থেমে নেই ইরানও। নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারির পর বুধবার ইরানি সেনা জবাবে জানিয়েছে, ইসরাইল যদি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নেয়, তবে পাল্টা হামলা চালানো হবে। গাজায় হামলার বর্ষপূর্তির ঠিক আগেই লেবাননে ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’ শুরু করেছে ইসরাইলি সেনা। মঙ্গলবার ইসরাইলি সেনার ট্যাঙ্ক বহর দক্ষিণ লেবাননে অনুপ্রবেশের পর প্রত্যাঘাত শুরু করে ইরান! মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবকে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে ইরান সেনা। এই হামলার ঘটনার পরই দেশের নাগরিককে সতর্ক করেছে ইসরাইল সরকার। গত ৭ অক্টোবর গাজা ভূখণ্ড থেকে স্বাধীনতাপন্থী ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস হামলা চালিয়েছিল গাজায়। তার পর একে একে লেবাননের শিয়া সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লা এবং ইয়েমেনের বিদ্রোহী হুথি গোষ্ঠী তেল আভিবের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। কিন্তু এই প্রথম বার পশ্চিম এশিয়ায় কোনও রাষ্ট্রশক্তি সরাসরি ইসরাইলকে নিশানা করল। এর ফলে ওই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের সূচনা হতে চলেছে বলে সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন।
লেবাননে আরো সৈন্য পাঠাচ্ছে ইসরাইল
লেবাননের দক্ষিণ এলাকায় স্থল অভিযানে আরো সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) বলেছে, সীমিত, স্থানীয় আর হেজবুল্লাহর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে চালানো ওই অভিযানে আরো সৈন্য পাঠানো হচ্ছে। অন্যদিকে লেবানন সীমান্তের ২৫টি গ্রাম থেকে মানুষজনকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে আইডিএফ। এর আগে হেজবুল্লাহ দাবি করেছিল যে, দক্ষিণ লেবানন সীমান্তের একটি গ্রামে ইসরাইলি একটি অভিযান তারা ঠেকিয়ে দিয়েছে। এই দাবির বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি ইসরাইলি সেনাবাহিনী। বৈরুত থেকে বিবিসি সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, ইসরাইলি বিমান হামলার কারণে বৈরুতজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইরান যখন ইসরাইলের ভূখণ্ডে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছিল, তখন ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘সক্রিয়ভাবে’ সহায়তা দিয়ে যাবে ওয়াশিংটন। বাইডেন জানান, হামলার ওই সময় তিনি ‘সিচুয়েশন রুমে’ কাটিয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তাজনিত যেকোনো গুরুতর সংকটময় পরিস্থিতি হোয়াইট হাউসের এ কক্ষ থেকে সামাল দেওয়া হয়।