আগরতলা: করোনা-য় আক্রান্ত হয়ে বাবা ও মা উভয়ের মৃত্যুতে তাঁদের অনাথ সন্তানদের ১৮ বছর পর্যন্ত সহায়তার জন্য নতুন প্রকল্প এনেছে ত্রিপুরা সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বাল্য সেবা প্রকল্পের অধীনে ওই সব ছেলে-মেয়েদের মাসিক সাড়ে তিন হাজার টাকা এবং পড়াশুনার সমস্ত দায়িত্ব নেবে সরকার। শুধু তা-ই নয়, মেয়েদের ক্ষেত্রে বিবাহের সময় এককালীন ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করা হবে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ওই প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তাঁর কথায়, করোনা-র প্রকোপে অপূরণীয় ক্ষতিপূরণ করা হয়ত সম্ভব নয়। কিন্তু করোনা-য় বাবা ও মা-কে হারিয়ে অনাথ সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চিন্তায় ত্রিপুরা সরকার এই প্রকল্প এনেছে।
এদিন তিনি বলেন, ত্রিপুরায় এখনও করোনা-য় বাবা ও মা উভয়ের মৃত্যুর ঘটনা সরকারি রেকর্ডে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এ ধরনর দুর্ঘটনার শিকার হলে অনাথ শিশুদের ভরণ-পোষণ নেওয়ার ভাবনায় মুখ্যমন্ত্রী বাল্য সেবা প্রকল্পের সূচনা করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, করোনা-য় অনাথ শিশুরা হোমে কিংবা পরিবারের অন্য অভিভাবকের সাথে থাকতে চাইবে। হোমে যারা থাকবে তাদের সমস্ত খরচ সরকারই বহন করবে। এখন দাদু-দিদা কিংবা পরিবারের অন্য কারোর সাথে থাকলে চাইলে ওই সব অনাথ শিশুদের জন্য সরকার ১৮ বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবে। পাশাপাশি, পড়াশুনার সমস্ত খরচ ত্রিপুরা সরকার বহন করবে। শুধু তা-ই নয়, মেয়েদের ক্ষেত্রে বিবাহের সময় এককালীন ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হবে।
সাথে তিনি যোগ করেন, ওই অনাথ শিশুরা দশম উত্তীর্ণ হওয়ার পর ল্যাপটপ কিংবা ট্যাবলেট দিয়ে সহায়তা করবে ত্রিপুরা সরকার। তাতে তারা ইন্টারনেটের সহায়তায় আরও বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা অতিমারিতে অনেকেই আপনজনদের হারিয়েছেন। মা-বাবাকে হারিয়েছে এমন ছেলেমেয়েদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব নেবে সরকার। কোভিড অতিমারি মোকাবিলায় রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার মিলে কাজ করছে। কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ৫৭৯ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। গরীব জনগণের কথা চিন্তা করে এই প্যাকেজের মাধ্যমে রেগায় ৩৩২ কোটি টাকা এবং টুয়েপে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। সামাজিক ভাতা প্রাপকদের দুই মাসের ভাতা একসঙ্গে সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে প্রদান করা হবে। তাতে ব্যয় হবে ৭২ কোটি টাকা। ৭ লক্ষ গরীব এবং প্রয়োজন রয়েছে এমন পরিবারকে এক হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়াও এই ৭ লক্ষ গরীব এবং প্রয়োজন রয়েছে এমন পরিবারে ফুড প্যাকেট প্রদান করা হবে। তাতে ব্যয় হবে ৮০ কোটি টাকা।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কোভিড মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করছে। করোনা পরিস্থিতিতেও কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী আবাসন যোজনায় রাজ্যের জন্য একসঙ্গে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ঘরের বরাদ্দ করেছে।তাতে ২,৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এরজন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরকে রাজ্যবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে টিকাকরণের হার দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশী। রাজ্যে কোভিড মোকাবিলায় অি’জেন যুক্ত শয্যা, অক্সিমিটার, কোভিড কেয়ার সেন্টার, কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি ব্যবস্থাগুলি রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই করেছে। এছাড়াও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় অক্সিজেন প্ল্যান্ট আই জি এম হাসপাতালে স্থাপন করার প্রক্রিয়া চলছে। এই অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে প্রতি মনিটে ১০৫০ লিটার অক্সিজেন তৈরী হবে। জিবি হাসপাতালেও অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। সেখানে প্রতি মিনিটে ৯০০ লিটার অক্সিজেন প্রস্তুত হবে। এছাড়াও রাজ্যের ৮টি জেলায় এবং খুমুলুঙ অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে আরও ১৮টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরী করার প্রক্রিয়া চলছে বলে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা উপস্থিত ছিলেন।