- প্রতিদিন হতাহত ৪০০ শিশু
- একদিনেই ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত
- জাতিসংঘকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে: ইসরায়েল
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচারে ইসরায়েলের অনবরত হামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৬০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক অ্যাডেল খোদর বলেন, গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
গত ৭ অক্টোবর শনিবার ইসরায়েল ভূখণ্ডে হামলা চালায় মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামাসের হামলার জবাবে পাল্টা রকেট ও বোমা হামলা করে ইসরায়েলের বাহিনী। গাজা উপত্যকার নাগরিকরা আতঙ্কে ঘর ছাড়তে শুরু করেন। এরই মধ্যে গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎসহ খাদ্য, পানি ও জ্বালানি সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।
অ্যাদেল বলেন, ‘গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি আমাদের বিবেকের ওপর বড় আঘাত। সেখানে শিশুদের মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা বিস্ময়কর।’ তিনি বলেন, গাজায় যতক্ষণ না উত্তেজনা কমবে, ত্রাণ যতক্ষণ না নিয়মিত হচ্ছে, এই মৃত্যু হার বেড়েই চলবে। অবিলম্বে এই যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।
প্রতিদিন হতাহত ৪০০ শিশু
নির্বিচারে বোমা হামলায় প্রতিদিন হতাহত হচ্ছে প্রায় ৪০০ ফিলিস্তিনি শিশু। জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে। তারা জানিয়েছে, প্রতিদিনই প্রায় ৪০০ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে এই উপত্যকায়। এখন পর্যন্ত আহত শিশুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ হাজার।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে গত ১৮ দিন ধরে চলমান লড়াইয়ে ২ হাজার ৩৬০ শিশু নিহত হয়েছে বলে ইউনিসেফ জানিয়েছে। এছাড়া সংঘাতে আহত হয়েছে আরা ৫ হাজার ৩৬৪ শিশু। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক এই সংস্থার মধ্যপ্রাচ্যের পরিচালক অ্যাডেল খোদর বলেছেন, “গাজায় প্রতিদিন প্রায় ৪০০ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে। গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি আমাদের বিবেকের ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে দাগ কাটছে। হামলায় শিশুদের মৃত্যুর এবং আহত হওয়ার হার কেবলই বিস্ময়কর। শিশুদের হত্যা ও পঙ্গু করা, শিশুদের অপহরণ, হাসপাতাল ও স্কুলে হামলা এবং মানবিক সহায়তার প্রবেশে বাধা দেওয়া শিশুদের অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।”
হামলায় একদিনেই ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইসরাইলি বাহিনী বোমাবর্ষণ করছে। গাজা উপত্যকায় রাতভর ইসরাইলের বিমান হামলায় ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার সংঘটিত হতাহতের ঘটনা একদিনের হিসাবে সর্বোচ্চ। ইসরাইলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গতকাল ৪০০টিরও বেশি হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া তারা হুশিয়ারি দিয়ে আরও জানায়, ফিলিস্তিনি সংগঠনটিকে নির্মূল করতে তাদের লক্ষ্য অর্জনে আরও সময় লাগবে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের পালটা হামলায় দুই হাজার ৩৬০ জন শিশুসহ কমপক্ষে পাঁচ হাজার ৮০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টার হামলাতেই ৭০৪ জন লোক নিহত হয়েছে বলে জানায় মন্ত্রণালয়টি।
গাজায় অবস্থানরত গণমাধ্যমকর্মীরা জানিয়েছেন, ‘হাজার হাজার পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে, চারদিকে কেবল ধ্বংস আর ধ্বংসের চিহ্ন। আকাশে শোনা যাচ্ছে, ইসরাইলের ড্রোন আর যুদ্ধবিমানের শব্দ। সবাই বলছে, সবাই অনুভব করছে, উপত্যকার কোনো অংশই এখন আর নিরাপদ নয়।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বাস্থ্য কর্মীরা জানিয়েছেন, বিমান হামলা চালানো হয়েছে বেশ কিছু আবাসিক ভবনে। এসব ভবনের বেশ কিছু রয়েছে গাজার দক্ষিণ অংশে, যেখানে ইসরাইলি বাহিনী গাজার সাধারণ মানুষকে আশ্রয় নিতে বলেছে।
জাতিসংঘকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে: ইসরায়েল
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের গত ৭ অক্টোবরের অভিযানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ইসরায়েলে হামাসের হামলা বিনা কারণে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে গাজাবাসীকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার কারণেই হামাস এ হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি স্বীকার করে নিতে হবে ইসরায়েলে হামাসের হামলা এমনিতেই হয়নি। ফিলিস্তিনের মানুষ ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর দখলদারিত্বের শিকার হয়েছে। তারা তাদের ভূখণ্ড [ইহুদি] বসতিতে পরিণত হতে এবং সহিংসতায় জর্জরিত হতে দেখেছে। তাদের অর্থনীতির গলা টিপে রাখা হয়েছে। এই মানুষগুলো বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের দুর্দশার রাজনৈতিক সমাধানের আশা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।’
গুতেরেসের এই বক্তব্যের পর তাতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছে তেল আবিব। জাতিসংঘের মহাসচিব পদ থেকে তাকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তেল আবিব। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেছেন, জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের আর কখনও ইসরাইলের ভিসা দেওয়া হবে না।
গিলাদ এরদান আর্মি রেডিওকে বলেছেন, ‘গুতেরেসের বক্তব্যের কারণে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদেরকে আমরা ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানাব। আমরা এরইমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবের মানবিক ত্রাণ বিষয়ক জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মার্টিন গ্রিফিতসকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি।’
ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত অত্যন্ত ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার সময় এসে গেছে।’