অ্যানথ্রোপলিজ্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিকতম সমীক্ষা বলছে , ভারতের সমস্ত বিলুন্তপ্রায় জনজাতির মধ্যে শুধুমাত্র জারোয়াদের জনসংখ্যা বেড়েছে৷ সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে , এই সংবেদনশীল আদিম জনজাতির জনসংখ্যা দশ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় এই গবেষণা সংস্থার ভারপ্রান্ত অধিকর্তা এম শশীকুমার বলেন , ‘আমাদের সমীক্ষা বলছে , ভারতের সমস্ত বিলুন্তপ্রায় জনজাতির মধ্যে শুধুমাত্র জারোয়াদের জনসংখ্যা নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে৷ এই মুহূর্তে দ্বীপের প্রশাসন জানাচ্ছে জারোয়াদের জনসংখ্যা ৪২৯ -এ দাঁড়িয়ে৷ ’গত কয়েক দশক দ্রুত পাল্টেছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ৷ পোর্ট ব্লেয়ারকে ঘিরে ওই দ্বীপপুঞ্জ এখন আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র৷ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাপনের ধরনও পাল্টেছে৷
দ্বীপে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে৷ একই সঙ্গে পাল্টেছে ওই দ্বীপপুঞ্জের আদিম বসবাসকারী জারোয়া জনজাতিদের জীবনও৷ আধুনিক জীবনের ছোঁয়া , বহিরাগতদের অগণিত আনাগোনা৷ অজানা রোগভোগ ও জীবাণুর সংক্রমণের আশঙ্কা৷ পর্যটকদের ছুড়ে দেওয়া নানান প্রলোভন৷ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ছিল , আধুনিকতার ছোঁয়া এই বিলুন্তপ্রায় জনজাতির পক্ষে ক্ষতিকারকই হবে৷ দ্রুত নির্মূল হওয়ার মুখে ঠেলে দিতে পারে৷ সম্প্রতি এক জারোয়া সদ্যোজাতের হত্যার খবর জনসমক্ষে আসে৷ জারোয়াদের নেতৃস্থানীরা অভিযোগ করেছিল , ওই শিশু বহিরাগতের জাতের ঔরসে জন্মেছে৷ এরপর বহিরাগতদের ‘কু’-প্রভাবে জনজাতির বিপর্যয়ের আশঙ্কা আরও দৃঢ় হয়েছিল৷ তবে সাম্প্রতিক রিপোর্ট সেই আশঙ্কাকে কমিয়েছে৷
আগামী ৯ আগস্ট, আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে এই সমস্ত তথ্যসম্বলিত একটি বই প্রকাশ করতে চলেছে অ্যানথ্রোপলিজ্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া৷ বইটির নাম ‘পার্টিকুলারলি ভালনারেবল ট্রাইবাল গ্রুপস অফ ইন্ডিয়া ’৷ বইতে জারোয়াদের সম্পর্কে গবেষণাপত্রটি লিখেছেন সংস্থার উপ -অধিকর্তা আনস্টিস জাস্টিন৷ তাঁর মতে , এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ দ্বীপপুঞ্জ প্রশাসনের৷ জারোয়া জনজাতির স্বাস্থ্যের প্রতি নিবিড় নজরদারি৷ অসুস্থদের দ্রুত চিহ্নিত করে পোর্ট ব্লেয়ারে চিকিত্সা করাতে নিয়ে আসা৷ এ ছাড়া স্থানীয় পরিচ্ছন্ন , স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার অভ্যাসও তৈরি করা হয়েছে জনজাতির মধ্যে৷ এক দশকের চেষ্টার সুফল মিলতে শুরু করেছে এখন৷ অ্যানথ্রোপলিজ্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সেই গবেষক জারোয়াদের সংখ্যার জন্য নির্ভর করা হয়েছে আন্দামান আদিম জনজাতি বিকাশ সমিতির তথ্যে৷ বলা হয়েছে , ২০১২ সালের শুরুতে মোট জারোয়াদের সংখ্যা ৪০৭ ছিল৷
কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে একজন মহিলাকে কুমির টেনে নিয়ে যায়৷ মধ্য আন্দামান ও স্পাইক দ্বীপের মাঝামাঝি জায়গায় এটি হয়েছিল৷ পর সংখ্যাটা কমে ৪০৬ হয়৷ এর ঠিক এক বছর আগে জনসংখ্যা ছিল ৩৮০৷ সমীক্ষকদের দাবি , সদ্যোজাত পুত্রসন্তানদের মৃত্যুর হার বেশি৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী কন্যা সন্তানদের বাঁচার হার বেশি৷ দশ বছর বয়সীদের সংখ্যা ১৬৪৷ ৫১ বছরের বেশি বয়সীর সংখ্যা মাত্র ১১৷ এর মধ্যে মাত্র তিন জন মহিলা৷ গবেষকদের দাবি , জনজাতির মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা যথেষ্ট কম৷ এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থার ওই বইতে বিশদে উল্লেখ করা হয়েছে কী ভাবে চোরাশিকারিদের আক্রমণে নিয়মিত বিপদের মুখে পড়তে হয় ওই জনজাতির সদস্যদের৷
এ ছাড়াও বইতে বিশদের উল্লেখ করা আছে , কী ভাবে মধ্য ও দক্ষিণ আন্দামানের ট্রাইবাল রির্জাভ ফরেস্টে জারোয়া জনজাতি বসবাস করে৷ কীভাবে মৃত্যুর আগে ও পরে কী রীতি অনুসরণ করে থাকে৷ যেমন , মৃতদের দেহ পোড়ানো কিংবা কবর দেওয়া হয় না৷ কেউ মৃতপ্রায় বুঝতে পারলেই ওই ব্যক্তিকে বাড়ির বাইরে নিয়ে চলে যাওয়া হয়৷ বসবাস এলাকা থেকে দূরে একটি গাছের তলায় বসিয়ে রাখা হয়৷ মৃত্যুর পর দেহটি সেখানেই পচতে দেওয়া হয়৷ এরপর রয়ে যাওয়া হাড়গোড় নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেগুলো তিরের মুখ তীক্ষ্ণ করতে ব্যবহার করা হয়৷