- দুর্নীতির তথ্য প্রকাশে সহায়তাকারীদের যুক্তরাষ্ট্রের সাধুবাদ
- আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে দূতাবাসকে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
ঢাকা, ২২ মে: সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্যাপক দুর্নীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া খর্বে তাঁর সম্পৃক্ততায় এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ২১ মে মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ফরেন অপারেশনস এবং রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারায় এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তাঁর বিভিন্ন কর্মকান্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন আজিজ আহমেদ। একই সঙ্গে কোনো ধরনের জবাবদিহি ছাড়াই নিজের ভাইকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি নিজের স্বার্থে সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন। এ নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ম্যাথিউ মিলারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো। সরকারি সেবা আরও স্বচ্ছ ও নাগরিকদের সেবালাভের সুযোগ তৈরি, ব্যবসা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং অর্থ পাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, এই ব্যবস্থা গ্রহণ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং আইনের শাসনকে শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিকে পুনর্ব্যক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারি পরিষেবাগুলোকে আরো স্বচ্ছ এবং সাশ্রয়ী, ব্যাবসায়িক ও নিয়ন্ত্রক পরিবেশ উন্নতকরণ এবং অর্থপাচার, অন্যান্য আর্থিক অপরাধের তদন্ত ও বিচারে সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।
আজিজ আহমেদ অবসরে যাওয়ার প্রায় দুই বছর পর যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তিনি উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁর কর্মকাণ্ড সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করেছে। তাঁর কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হেয় করতেও ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, আজিজ আহমেদ তাঁর ভাইয়ের ফৌজদারি অপরাধের জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সরকারি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তিনি উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভিসানীতি ঘোষণার পর এ প্রথম বাংলাদেশের সাবেক কোনো শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিল যুক্তরাষ্ট্র। আজিজ আহমেদের নিষেধাজ্ঞা দুর্নীতি ও সুশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে আজিজ আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
বাংলাদেশে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশে সহায়তাকারীদের যুক্তরাষ্ট্রের সাধুবাদ
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে শেয়ার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি আজরা জেয়া। ওই বার্তার সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশিদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং স্বচ্ছ সরকারি প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানাই। যাঁরা সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রকাশে সহায়তা করেন, আমরা তাঁদের সাধুবাদ জানাই।’
আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে দূতাবাসকে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
রেব এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার আগে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবার সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানিয়েছে।
জেনারেল আজিজ আহমেদ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর বাংলাদেশের চিফ অব আর্মি স্টাফ ছিলেন। তাঁর আগে ২০১২ সাল থেকে চার বছর তিনি সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবির মহাপরিচালক ছিলেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’-এর অভিযোগে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স রেব এবং এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। সে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ছিলেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও ছয় সেনা কর্মকর্তা।
সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে ঘোষিত ভিসানীতির আওতায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে কিছু বাংলাদেশির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কতজন বা কাদের ওপর এ ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে ঘোষণা করা না হলেও সে সময় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে গুন্জন ছড়িয়েছিলো। সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকাতে স্যাংকশন দেওয়া হয়েছে, তিনি আমেরিকাতে ঢুকতে পারছেন না, সোশ্যাল মিডিয়ায় এরকম খবর ছড়িয়েছিলো। “এবার নিষেধাজ্ঞা দিল সজিব ওয়াজেদ জয় কে যুক্তরাষ্ট্র” ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিলো। উক্ত ভিডিওটিতে অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ড. রেজা কিবরিয়াকে আলোচনা করতে দেখা গিয়েছিলো।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুসারে যাকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় তার স্ত্রী, সন্তান ও পিতা-মাতাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় চলে আসেন।