খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) হল প্রভোস্টের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন দুই শিক্ষক। ইতিমধ্যে উপাচার্যের কাছে তারা তাদের পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন।
পদত্যাগ করা প্রভোস্টরা হলেন- কুয়েট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর কল্যাণ কুমার হালদার ও ফজলুল হক হলের প্রভোস্ট প্রফেসর মো. হাবিবুর রহমান।
এদিকে কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষকেরা আতঙ্কে রয়েছেন। কেউ হল প্রভোস্টের দায়িত্ব নিতে চাইছেন না।
পদত্যাগ করা প্রভোস্টরা জানান, ড. সেলিমের মৃত্যুর পর থেকে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্তের পাশাপাশি জীবন নিয়েও শঙ্কা করছেন। হলের পরিবেশও সুষ্ঠু নয়। তা ছাড়া পরিবারের সদস্যরাও ঘটনার পর থেকে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। অপর চার হলের প্রভোস্ট ও সাত হলের সহকারী প্রভোস্টরা ৫ দফা দাবি পূরণ না হলে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছে।
গত ১ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন ড. কল্যাণ কুমার হালদার। তার পদত্যাগপত্র এখনো গ্রহণ করা হয়নি। তিনি বলেন, সবাই নিজের অনুসারীদের কমিটি বা ডাইনিং ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিতে চেষ্টা করে। আমার ওপরও চাপ ছিল। এ জন্য আমি দুটো ডাইনিং দুই পক্ষের দুজনকে দিয়ে (ম্যানেজার) পরিচালনা করেছি। আর চাপ নিতে পারছি না। তাই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, কুয়েটের সাতটি হল পরিচালনা নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। হলের ডাইনিং ম্যানেজার নিয়োগ, খেলাধুলা, ফ্লোর মনিটরিং ও ইন্টারনেটসহ আরও কিছু বিষয় থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি হলের সিট বরাদ্দ নিয়ে সংগঠনটির মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। এ নিয়ে প্রভোস্টদের মানসিক চাপে রাখা হয়, যার শিকার সেলিম হোসেন।
প্রভোস্টরা জানান, তাদের পদত্যাগ সহকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর-ই প্রতিবাদ। তারা শিক্ষক সমিতির দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ৫ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নে সাত দিনের আল্টিমেটাম দেন। কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ, প্রভোস্টদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগসহ বিভিন্ন দাবি তোলেন তারা।
কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালক অধ্যাপক ইসমাঈল সাইফুল্যাহ বলেন, ১ ডিসেম্বর প্রভোস্টদের বিষয়ে সভা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। যা রেজুলেশন আকারে তৈরির প্রস্তুতি চলছে। সভায় দু-একজন প্রভোস্ট পদত্যাগের বিষয় তুললে তাদের জানানো হয়- ‘কেউ পদত্যাগ করতে চাইলে ব্যক্তিগতভাবে জমা দিতে পারেন’। শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চলছে।
উল্লেখ্য, সাধারণ সম্পাদক সেজানসহ উপস্থিত লোকজন তাদের মনোনীত প্রার্থীকে ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচন করার জন্য হল প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করেন। ওই দিন আনুমানিক আধ ঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে ড. সেলিম দুপুরে খাবার খেতে ক্যাম্পাস সংলগ্ন বাসায় যান। বেলা ২টার দিকে তিনি বাথরুমে মেজর অ্যাটাক করেন। দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সেলিমকে মৃত ঘোষণা করেন।