দ্বৈত নাগরিক ও দ্বৈত পাসপোর্টধারীদের তালিকা চেয়েছে আওয়ামী হাইকোর্ট। গত ২১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের আওয়ামী বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দ্বৈত নাগরিক ও দ্বৈত পাসপোর্টধারীদের তালিকা চেয়ে আদেশ দিয়েছেন। আগামী ২৮ ফ্রেব্রুয়ারীর মধ্যে তালিকা দিতে বলা হয়েছে। এরপরই প্রশ্ন উঠেছে এই তালিকায় দ্বৈত নাগরিক ও দ্বৈত পাসপোর্টধারী শাসক পরিবারের সদস্যদের নাম থাকবে কি না। শাসক পরিবারের দ্বৈত নাগরিক এবং দ্বৈত পাসপোর্টধারী অনেকেই রয়েছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা ও তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গ, প্রধানমন্ত্রী ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরপরই রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের জন্য নিরাপত্তা আইন তৈরি করেন। এই আইনের আওতায় যাবতীয় সুযোগ সুবিধাও নিচ্ছেন তারা। দেশে ফিরলে এসএসএফ-এর নিরাপত্তা বেষ্টনি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় খরচে তাদের সব সুবিধা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরপরই প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। সেই সুবাদে তখন থেকেই তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। তাঁর সন্তানেরাও এখানে জন্মসূত্রে নাগরিক। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী যুক্তরাজ্যে রাজনীতির সাথেও সংশ্লিষ্ট এবং বৃটেনের পার্লামেন্টে নির্বাচিত সদস্য। শেখ রেহানার ছেলে ববি বর্তমানে বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন। বিশেষ সুবিধার আওতায় গুলশানে শেখ রেহানার নামে বাড়িও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কথিত বাঙ্গালী সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ঠিকাদার হিসাবে নিজেদের ফলাও করে প্রচারণা চালানো এই শাসক পরিবারের প্রধান শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী বিয়েও করেছেন বিদেশী নাগরিকদের।
এদিকে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ইমান আলী এবং শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকসহ অনেক আওয়ামী বিচারকেরও বৃটেনসহ বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট রয়েছে। তাদের সন্তানরাও সেইসব দেশেই অবস্থান করছেন। এনিয়ে ২০১০ সালে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশ করেছিল। ২১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া নির্দেশনায় অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকদের তালিকায় শেখ পরিবার ও সুপ্রিমকোর্টের দ্বৈত নাগরিক বিচারকদের নাম থাকবে কিনা এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতোমধ্যেই। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে এই তালিকা দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে হাইকোর্ট। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চকে (ইমিগ্রেশন) এ তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২২ নভেম্বর বাংলাদশ থেকে বিদেশে টাকা পাচারকারীদের তালিকা চেয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগের একই বেঞ্চ থেকে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা পাচারকারীদের তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছিল। পরবর্তী শুনানীর তারিখও ধার্য্য করা হয়েছিল ২১ ডিসেম্বর। এই শুনানীর দিনেই দ্বৈত নাগরিকদেরও তালিকা দেখার জন্য আবেদন জানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম। তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতেই সেদিন দ্বৈত নাগরিকদের তালিকা তৈরি করে ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে জমা দিতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চকে (ইমিগ্রেশন) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এখানে আরো উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়টি ওপেনে সিক্রেট। দেশের টাকা পাচার করে কানাডায় বেগম পাড়া গড়ে তোলার বিষয়টি এখন মুখে মুখে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আওয়ামী ব্যবসায়ীদের নাম উঠে আসে। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ২ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা মো: হানিফের কানাডায় বিনিয়োগের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছিল। তাঁর স্ত্রী, সন্তানরা সেখানেই অবস্থান করেন বলে জানা গেছে।
শাসক শেখ পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাদেরই সেকেন্ড হোম হচ্ছে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, বৃটেন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ দুনিযার বিভিন্ন উন্নত দেশে। উৎসঃ আমার দেশ