শনিবার সকালে ঢাকার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হয়েছেন কামাল লোহানী। ’৫২-র ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ— সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার— প্রতিটি আন্দোলনের প্রথম সারির এই যোদ্ধার মৃত্যুতে বাংলাদেশে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ৮৭ বছর বয়সি কামাল লোহানী বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় কামাল লোহানী স্বাধীন বাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে ধারাবিবরণী দিয়েছিলেন কামাল লোহানী। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর কলকাতা সফর উপলক্ষে দমদম বিমানবন্দরেও ধারাবিবরণীও তিনি দিয়েছিলেন।
১৯৫৩ সালে পাবনা শহরের সেই সময়ের জিন্নাহ্ পার্কে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় তিনি প্রথম গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে কাজ করায় সময়েও গ্রেফতার হন তিনি। ১৯৫৫ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে ঢাকা চলে আসেন কামাল লোহানী। সেই বছরই দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় সাংবাদিকতার জীবন শুরু হয়। একই বছর তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-তে যোগ দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারির পরে শুরু হয় আত্মগোপনের জীবন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তাঁর ছিল যোদ্ধার অবস্থান।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ছিলেন তিনি৷ সেই সঙ্গে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন৷ রাজনৈতিক জীবনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন আমৃত্যু।
কামাল লোহানী সাংবাদিকতায় একুশে পদক ছাড়াও কলকাতা পুরসভার দ্বিশতবর্ষ সম্মাননা, প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক সম্মাননা, জাহানারা ইমাম পদকসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় সম্মানিত হয়েছেন।
‘আমরা হারবো না’, ‘মুক্তিসংগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতার’, ‘রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীন বাংলা বেতার’, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার’ প্রভৃতি গ্রন্থ তিনি রচনা করেন। কামাল লোহানীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা একজন প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার অসাধারণ যোদ্ধাকে হারালাম।’