- পরিবারের সাথে হাসিখুশি সময় কাটাচ্ছেন খালেদা জিয়া।
- জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করলে আমাদেরও ৫ই আগস্টের পরিণতি হবে: তারেক রহমান।
লণ্ডন, ২৯ জানুয়ারি: আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে ফেব্রুয়ারিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে দুই ধাপে সমাবেশ করার পরিকল্পনা করেছে দলটি। খুব শিগগিরই কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মসূচির দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এছাড়া বৈঠকে ছাত্রদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়ার ওপর পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে বলা হয়, ছাত্ররা বিএনপির কাছে ঘোষণাপত্রের যে খসড়া পাঠিয়েছে, সেটা নিয়ে বিএনপি নেতারা আলোচনা করেছেন। এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন থাকলেও ছাত্রদের এই উদ্যোগকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করতে চায় না দলটি। সে কারণে ছাত্রদের প্রস্তাবিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগকে সম্মান জানিয়ে বাস্তবতার নিরিখে খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পরিবর্তন আনার কাজ শুরু করেছে দলটি।
আরও জানা গেছে, বৈঠকে নেতারা বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই। বিগত দেড় দশকে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে। জনগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তিনটি সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। এখন সংস্কারের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব সরকার ও জনগণকে নির্বাচনমুখি করা। নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপে রাখতে হবে। এছাড়া প্রতিবছর রমজানকে কেন্দ্র করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। এতে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েন। মার্চের শুরুতেই রমজান শুরু, দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে ফেব্রুয়ারিতেই কর্মসূচি পালন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফেরত আনতেই বিএনপি আবার মাঠে নামছে। বিএনপি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে রাজনীতি করে। তাদের ভোটাধিকার আদায়সহ সুষ্ঠু নির্বাচন ও রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিএনপি কর্মসূচি পালন করবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতারা। মূলত রমজান শুরুর আগেই এই কর্মসূচি পালিত হবে। রমজান শেষ হলে পরিস্থিতির আলোকে তখন নতুন কর্মসূচিও আসতে পারে।
গত কয়েক মাস ধরে নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। এমনকি চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব বলেও মনে করছেন দলটির শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে যে কোনো সময় নির্বাচন হতে পারে। এক্ষেত্রে দলটির মত- আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য ‘খুবই অতিরিক্ত সময়’। ন্যূনতম সংস্কার করে জুলাই-আগস্টেই একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। যদি সেটি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করা যেতে পারে। জানা গেছে, ছাত্রদের প্রস্তাবিত খসড়া ঘোষণাপত্রকে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় মডিফাই (সংশোধন) করেছে বিএনপি। জরুরিভিত্তিতে আবারও স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে এগুলো চূড়ান্ত হবে। এরপর সংশোধনকৃত খসড়া নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া শরিকদেরও মতামত নেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়ন নিয়ে সরকার আলোচনায় ডাকলে শরিকদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরিকৃত খসড়া দেবে বিএনপি।
এদিকে চিকিৎসা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অচিরেই দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তার উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক। স্থানীয় সময় সোমবার এশার নামাজের পর বাংলাদেশি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেন মসজিদে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক দোয়া মহফিল শেষে তিনি এ তথ্য জানান। লন্ডনে খালেদা জিয়ার সময় কীভাবে কাটছে সে বিষয়েও জানিয়েছেন তিনি। এম এ মালেক বলেন, খালেদা জিয়া অনেক ভালো আছেন। তিনি বাসায় ফিরে খুব হাসিখুশি আছেন। রোববার নেত্রীর সঙ্গে আমাদের নেতা তারেক রহমানসহ একসঙ্গে ডিনার করেছি। আমার মনে হয় তিনি ৬০ পার্সেন্ট সুস্থ হয়ে গেছেন। খালেদা জিয়ার এই উপদেষ্টা বলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশি দুটি টিম মিলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিচ্ছেন। হাসপাতালের চেয়ে বাসায় বেটার ট্রিটমেন্ট হচ্ছে। রোববারও দেখলাম ডা. জোবাইদা রহমান বসে খাওয়াচ্ছেন। পাশে তারেক রহমান বসা। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তার পুত্রবধূদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। বাসায় যাওয়ার মানে হচ্ছে, তিনি আগের চেয়ে ভালো আছেন। উনি অচিরেই দেশে যাবেন। দেশের জনগণ উনাকে দেখতে চায়।
জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করলে আমাদের ৫ই আগস্টের মতোই পরিণতি হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার খুলনায় রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা শীর্ষক কর্মশালায় দলটির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এ কথা বলেন তিনি। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ভার্চুয়ালি কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে চাইছে। এই আস্থা যেসব নেতাকর্মী নষ্ট করতে চাইবে তাকে দলের পক্ষ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এবং এখানে আমাদের স্বার্থপর হতে হবে। অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। তিনি বলেন, এখন আপনি কোথাও গেলে জনগণ সালাম দেয় কিন্তু আপনি যদি এমন কোন কাজ করেন সে যদি আপনার কাছ থেকে সরে যায় তাহলে আপনি কিসের নেতা। মানুষ কিন্তু এখন অনেক সচেতন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি সরকারে ক্ষমতায় গেলে যেসব নেতাকর্মী দলের ভাবমূর্তি, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত তাদের বহিষ্কারের পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যায়ের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেয়া হবে না। এখন যেহেতু বিএনপি ক্ষমতায় নাই তাই আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছি না। আমরা তার সাথে সকল সম্পর্ক নষ্ট করব।
জনগণের কাছে ৩১ দফা তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আপনার কাজ চালিয়ে যান। জনগণই হচ্ছে আমাদের শক্তি। জনগণের বিপক্ষে কাজ করলে কি হয় ৫ই আগস্ট তার প্রমাণ।