বাংলাদেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে চালু করা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ২০২০ সালে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ এবং ২০৪১ সালে তাঁদের সংখ্যা হবে ৩ কোটি ১০ লাখ।
এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনতে এবং নিম্ন আয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সমাজের ৮৫ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করতে দেশে প্রথমবারের মতো সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থা (স্কিম) চালু করেছে সরকার।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় কত মানুষ পেনশন সুবিধার আওতায় আসবেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল জানান, পেনশন স্কিমের মাধ্যমে ১৮ বছরের বেশি দেশে-বিদেশে থাকা ১০ কোটি মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার চিন্তা রয়েছে সরকারের। পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। ধীরে ধীরে বাড়ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা এবং তাঁদের নিরাপত্তাহীনতা। আর এ কারণেই চালু করা হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থা। চারটি আলাদা স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা। প্রবাস স্কিমটি শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। প্রগতি স্কিম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য। সুরক্ষা স্কিম রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য। আর সমতা স্কিম নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য।
পেনশন–ব্যবস্থা পরিচালনা ও বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা অর্থ বিভাগের আওতাধীন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট চালু হয়েছে গতকাল বুধবার। ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.upension.gov.bd। এতে বলা হয়েছে, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করে আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’ ওয়েবসাইটের ঠিকানায় পেনশন স্কিমগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য উল্লেখ করা আছে।
পেনশন–ব্যবস্থার আওতায় আসতে গেলে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি যাঁদের এনআইডি নেই, তাঁরা পাসপোর্টের ভিত্তিতে পারবেন। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনআইডি সংগ্রহ করে পেনশন কর্তৃপক্ষের কাছে তা জমা দিতে হবে।
পেনশন–ব্যবস্থা চালুর পটভূমি
২০১৬ সালে ভারত ঘুরে এসে অর্থ বিভাগের একটি দল একটি ধারণাপত্র তৈরি করে। তবে কাজটি অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত শেষ করে যেতে পারেননি। নতুন করে এ আলোচনা গতি পায় ২০২২ সালে এবং এ বছর আরেকটি ধারণাপত্র তৈরি করে অর্থ বিভাগ। এরপর এ বছরের ৩১ জানুয়ারি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন এবং আইনের আওতায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়।
চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় বৃদ্ধকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয়ভাবে একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে সরকার জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র প্রণয়ন করে। এতে দেশে একটি ব্যাপকভিত্তিক সমন্বিত অংশগ্রহণমূলক পেনশন–ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে পেনশন–ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রত্যেক চাঁদাদাতার জন্য একটি আলাদা পেনশন হিসাব থাকবে। চাঁদাদাতা ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তাঁর নমিনি মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ হওয়ার বাকি সময় মাসিক ভিত্তিতে পেনশন পাবেন। ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে কেউ মারা গেলে জমা হওয়া অর্থ মুনাফাসহ ফেরত পাবেন নমিনি। পেনশনের অর্থ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে এবং মাসিক পেনশনের অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।
যেভাবে নিবন্ধিত হওয়া যাবে
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। প্রথমেই একটি পাতা আসবে, যেখানে লেখা থাকবে এ কথাগুলো, ‘প্রত্যয়ন করছি যে আমি সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই। সর্বজনীন পেনশন স্কিমবহির্ভূত কোনো ধরনের সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা গ্রহণ করি না। আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোনো ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না।’
এরপর ‘আমি সম্মত আছি’ অংশে ক্লিক করলে দ্বিতীয় পাতায় গিয়ে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। এখানে আবেদনকারীকে প্রবাস, সমতা, সুরক্ষা বা প্রগতি—এই চার স্কিমের মধ্য থেকে প্রযোজ্য স্কিম বাছাই করতে হবে। একই সঙ্গে ১০, ১৩ বা ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, ই–মেইল আইডি লিখে দিতে হবে। এরপর পাতার নিচের দিকে থাকা ক্যাপচা লিখে পরের পাতায় যেতে হবে।
নিবন্ধনপ্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপে আসবে ব্যক্তিগত তথ্যের পাতা। এ পাতায় এলে ব্যক্তির এনআইডি অনুযায়ী এনআইডি নম্বর, ছবি, আবেদনকারীর বাংলা ও ইংরেজি নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে (যেহেতু আগের পাতায় এ তথ্যগুলো দেওয়া আছে)।
তবে এখানে আবেদনকারীর বার্ষিক আয় লিখতে হবে এবং পেশা, নিজ বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নাম নির্বাচন করতে হবে। পেশা বাছাইয়ের ঘরে শিক্ষক, বেসরকারি চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ী, ব্যবসা, দিনমজুর, আইনজীবী, সাংবাদিক ইত্যাদি পেশার উল্লেখ আছে। সেখান থেকে নিজের পেশা নির্বাচন করতে হবে। সব লেখা সম্পন্ন হলে পরের ‘স্কিম তথ্য’–এর পাতায় যেতে হবে।
স্কিম তথ্যের পাতায় এলে সেখান থেকে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ও চাঁদা পরিশোধের ধরন বাছাই করতে হবে। চাঁদা পরিশোধের ধরনের মধ্যে মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক—এ তিন অপশন রয়েছে। এরপর ব্যাংক তথ্যের ধাপে যেতে হবে।
ব্যাংক তথ্যের পাতায় আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবের নাম ও নম্বর, হিসাবের ধরন (সঞ্চয়ী অথবা চলতি), রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম ও ব্যাংকের শাখার নাম লিখতে হবে। এরপর পরবর্তী নমিনি তথ্যের পাতায় যেতে হবে।
এরপর ‘আমি সম্মত আছি’ অংশে ক্লিক করলে দ্বিতীয় পাতায় গিয়ে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। এখানে আবেদনকারীকে প্রবাস, সমতা, সুরক্ষা বা প্রগতি—এই চার স্কিমের মধ্য থেকে প্রযোজ্য স্কিম বাছাই করতে হবে।
নমিনি তথ্যের পাতায় গিয়ে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নমিনিকে যুক্ত করতে হবে। এ সময় নমিনির মোবাইল নম্বর, নমিনির সঙ্গে সম্পর্ক, নমিনির প্রাপ্যতার হারের (একাধিক নমিনি হলে) তথ্য দিয়ে সর্বশেষ ‘সম্পূর্ণ ফরম’ ধাপে যেতে হবে।
এটিই নিবন্ধনের শেষ ধাপ। এ ধাপে আগে পূরণ করা ব্যক্তিগত তথ্য, স্কিম তথ্য, ব্যাংক তথ্য ও নমিনি তথ্য দেখানো হবে। সেখানে কোনো ভুল থাকলে আবার শুরু থেকে গিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে। আর সব তথ্য ঠিক থাকলে তাতে সম্মতি দিয়ে আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ সময় চাইলে সম্পূর্ণ আবেদনটি ডাউনলোডও করতে পারবেন আবেদনকারী।
নিবন্ধনপ্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপে আসবে ব্যক্তিগত তথ্যের পাতা। এ পাতায় এলে ব্যক্তির এনআইডি অনুযায়ী এনআইডি নম্বর, ছবি, আবেদনকারীর বাংলা ও ইংরেজি নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে (যেহেতু আগের পাতায় এ তথ্যগুলো দেওয়া আছে)।
আপাতত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে নিবন্ধন
আজ বৃহস্পতিবার থেকে অনলাইন ফরম পূরণ অথবা সরাসরি সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে নিবন্ধন করা যাবে এবং চাঁদা দেওয়া যাবে। মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও চাঁদা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
পেনশন কর্তৃপক্ষের সূত্রগুলো জানায়, চারটি স্কিমের জন্য আলাদা চারটি হিসাব খোলা হয়েছে সোনালী ব্যাংকে। এ হিসাবগুলোতে চাঁদা জমা হবে। সোনালী ব্যাংক দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও পরে অন্য ব্যাংকও যুক্ত হবে।
প্রবাস স্কিমে ৭, সাড়ে ৭ ও ১০ হাজার টাকা; প্রগতি স্কিমে ২, ৩ ও ৫ হাজার টাকা এবং সুরক্ষা স্কিমে ১, ২, ৩ ও ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। শুধু সমতা স্কিমে চাঁদার হার একটি, আর তা হচ্ছে এক হাজার টাকা। এর মধ্যে চাঁদাদাতা ৫০০ ও সরকার ৫০০ টাকা করে দেবে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের ভেতরে আমাদের ব্যাংকের ১ হাজার ২২৯টি শাখাই সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থার সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। পেনশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমাদের চুক্তি হয়েছে।’
সোনালী ব্যাংকে কারও হিসাব থাকুক বা না থাকুক, নির্ধারিত ফরম পূরণ করে এ ব্যাংকের মাধ্যমে ১৮ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ পেনশন স্কিমের চাঁদা দিতে পারবেন বলে জানান আফজাল করিম।
যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে সর্বজনীন পেনশনে
দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা বিবেচনা করে আজ থেকে চালু হয়েছে বহুল আলোচিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। ১৮ বছর থেকে ৫০ বছরের বেশি বয়সী সকল বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে এ পেনশন পদ্ধতি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে গতকাল বুধবার পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট চালু হয়েছে। ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.upension.gov.bd। এতে বলা হয়েছে, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করে আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ’ ওয়েবসাইটের ঠিকানায় পেনশন স্কিমগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য উল্লেখ করা আছে।
জানা গেছে, শুরুতে চার শ্রেণির ব্যক্তি পেনশন কর্মসূচির আওতায় আসছেন। তারা হচ্ছেন-প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি চাকরিজীবী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী এবং অসচ্ছল ব্যক্তি। এছাড়া এই সর্বজনীন পেনশনের আওতায় চারটি স্কিম রয়েছে। চার স্কিমের মধ্যে রয়েছে-প্রবাস স্কিম (প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য), প্রগতি স্কিম (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য), সুরক্ষা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য) এবং সমতা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য)। এসব স্কিমে চাঁদার হার কত হবে তাও নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রবাস স্কিম
বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক তফসিলে বর্ণিত চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদান করে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারবেন এবং তিনি দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোষ করতে পারবেন। প্রয়োজনে, স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে পেনশন স্কিনের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন পাবেন।
প্রগতি স্কিম
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা প্রদান করে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর্মচারীদের জন্য এই স্কিমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মচারী এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দেবে। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই স্কিমে অংশগ্রহণ না করলে, ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সুরক্ষা স্কিম
অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন-কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, ইত্যাদি তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সমতা স্কিম
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক, সময় সময়, প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী আয়ের ব্যক্তিরা (যার বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা) তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
পেনশন সুবিধায় যা আছে
**১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল কর্মক্ষম নাগরিক এই পেনশন সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবেন। প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিরাও এতে অংশ নিতে পারবেন। তবে সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিষয়ে পরে বিবেচনা করা হবে, কারণ এখন তারা সরকারিভাবেই একটি পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আছেন।
**জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এটা হবে ঐচ্ছিক। পরে তা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা আছে সরকারের।
** ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা জমা দিলে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন একজন। প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। ফলে চাকরি বা পেশা পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে। মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
**সুবিধাভোগীর বছরে ন্যূনতম বার্ষিক জমা নিশ্চিত করবেন। তা না হলে তাদের হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। পরে বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা পরিশোধের মাধ্যমে হিসাব সচল হবে।
**পেনশনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা (৬০ বছর) পূর্ণ হলে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত লভ্যাংশসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিত হারে পেনশন দেওয়া হবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতি মাসে এই পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।
**নির্ধারিত চাঁদা জমাকারী পেনশনে থাকাকালে ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি সেই মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। মূল জমাকারীর বয়স যে বছর ৭৫ বছর পূর্ণ হত, ওই বছর পর্যন্ত নমিনিকে এই পেনশন দেওয়া হবে।
**পেনশন স্কিমে জমা করা অর্থ কোনোভাবেই কোনো পর্যায়ে এককালীন উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের প্রেক্ষিতে জমা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তোলা যাবে, যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।
**কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই নিবন্ধিত চাঁদা প্রদানকারী মারা গেলে জমা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
** পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে। পেনশন বাবদ মাসিক যে অর্থ পাওয়া যাবে তা পুরোপুরি আয়কর মুক্ত থাকবে।
**পেনশন কর্তৃপক্ষের খরচসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয় সরকার বহন করবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিলে জমা অর্থ নির্ধারিত গাইডলাইন অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে এবং সর্বোচ্চ লাভের ব্যবস্থা করবে।
কত জমায় সর্বোচ্চ কত টাকা পাওয়া যাবে
পেনশন তহবিলে জমা দেওয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদা দাতা আবেদন করলে জমা দেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন, যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে এবং পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিলে।
স্কিমে অংশগ্রহণের যোগ্যতা ও নিবন্ধন
১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সকল বাংলাদেশি নাগরিক তাদের জন্য প্রযোজ্য কোনো স্কিমে অংশগ্রহণকারীদের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সের নাগরিকরাও স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং সেই ক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা দেওয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন সেই বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারাও তাহাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করে তার অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে।
এছাড়া নিয়মিতভাবে পাসপোর্ট নবায়ন বা নবায়ন করা পাসপোর্টের অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরা তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে স্কিমে অংশগ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করতে হবে। কোনো স্কিমে নিবন্ধনের জন্য দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিককে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে আবেদন করতে হবে। যার বিপরীতে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হবে। আবেদনে উল্লিখিত আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা দেওয়ার তারিখ অবহিত করা হবে।
মাসিক চাঁদা
মাসিক চাঁদা ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা আর সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কর্মসূচি পরিবর্তন এবং চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ থাকছে।
যে কোনো স্কিমে নিবন্ধিত হলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ওই স্কিমের জন্য ধার্য করা হারে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করতে হবে। নিবন্ধনের পর আবেদনকারী মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বা ব্যাংকের কোনো শাখায় ওটিসি পদ্ধতিতে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা করবেন। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদার টাকা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা করবেন। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা দেওয়া যাবে। এক মাস অতিবাহিত হলে পরবর্তী প্রতি দিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা দিয়ে হিসাবটি সচল রাখা যাবে।
এছাড়া কোনো চাঁদা দাতা ধারাবাহিকভাবে ৩ কিস্তি চাঁদা জমাদানে ব্যর্থ হলে তাহার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে এবং প্রতিদিনের জন্য উপবিধি অনুযায়ী সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না। চাঁদা দাতা মাসের নাম উল্লেখ করে যে কোনো পরিমাণ চাঁদার টাকা অগ্রিম হিসাবে জমা দিতে পারবেন। কোনো প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংশগ্রহণ করলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্য করা মাসিক চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একত্রে তহবিলে জমা করতে হবে। সকল স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদা দাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ থাকবে। চাঁদার টাকা জমা হলে চাঁদা দাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে অবহিত করা হবে এবং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা প্রদান করা না হলে বিলম্ব ফিসহ চাঁদা জমাদানের জন্য চাঁদা দাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে মেসেজ দেওয়া হবে।
শারীরিক ও মানসিকভাবে অসমর্থ চাঁদা দাতার ক্ষেত্রে বিধান
কোনো চাঁদা দাতা চাঁদা প্রদানকালে শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যের কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মহীন ও উপার্জনে অসমর্থ হলে তাকে অসচ্ছল চাঁদা দাতা হিসাবে ঘোষণার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে আবেদন করতে পারবেন। কোনো চাঁদা দাতার অসচ্ছলতা নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপন দ্বারা, কেন্দ্রীয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক পৃথক মেডিকেল বোর্ড গঠন করবে। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ ব্যতীত কোনো চাঁদা দাতাকে অসচ্ছল চাঁদা দাতা হিসাবে ঘোষণা করা যাবে না। চাঁদা দাতার মানসিক বা শারীরিক অসামর্থ্যের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সচিব, অর্থ বিভাগ বরাবর আপিল দায়ের করতে পারবেন। আপিল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। অসচ্ছল চাঁদা দাতা হিসাবে ঘোষিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা পরিশোধ না করলেও চাঁদা দাতার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে না।
মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি চাঁদা দাতা হলে চাঁদা দেওয়ার বিধান
কোনো চাঁদা দাতা চাঁদা প্রদানকালে মানসিক অসামর্থ্যের কারণে অসচ্ছল হিসাবে ঘোষিত হলে কর্তৃপক্ষ উক্ত স্কিমের স্বত্ব উক্ত মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির নমিনি অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীর ওপর ন্যস্ত করতে পারবেন। কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন চাঁদা দাতার নমিনি বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী তাহার পেনশন হিসাব বা কর্পাস হিসাবে চাঁদার কিস্তি নিয়মিত জমা করে স্কিম চালু রাখতে পারবেন। স্কিমের মেয়াদ শেষে ওই স্কিমের বিপরীতে পেনশনের অর্থ নমিনি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা উত্তোলন করতে পারবেন।
চাঁদা দাতা বা পেনশনার নিখোঁজ হলে চাঁদা প্রদানের বিধান
চাঁদা দাতা নিখোঁজ হলে নিখোঁজ ব্যক্তির নমিনি বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়রি করে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পেনশনের সম্মুখ অফিসে বা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে চাঁদা দাতার পেনশন হিসাব বা কর্পাস হিসাবে নির্দিষ্ট চাঁদার অর্থ জমা করতে পারবেন। চাঁদা দাতা নিখোঁজ হইবার ৭ বছর অতিক্রান্ত হলে এবং নিখোঁজ ব্যক্তি ফিরে না আসলে, ওই চাঁদা দাতার স্কিম স্থগিত রাখতে হবে এবং পেনশনের প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়া সাপেক্ষে তাকে নিখোঁজ পেনশনার গণ্য করে উপবিধি (৩) এর বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পেনশনার তার বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে নিখোঁজ হলে, তার নিখোঁজ হওয়ার ৭ বছর পর পেনশনারের মাসিক পেনশন বাবদ পাওনা তার নমিনি অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীদেরকে প্রদান করা যাবে। তবে নিখোঁজ পেনশনারের নমিনি বা নমিনিরা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হতে যতদিন লাগে ততদিন পর্যন্ত মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন।
চাঁদা দাতা কর্তৃক নমিনি মনোনয়ন
স্কিমের চাঁদা দাতা, স্কিমে জমা করা অর্থ বা জমার বিপরীতে প্রাপ্য পেনশন বাবদ অর্থ তার মৃত্যুর পর গ্রহণ বা উত্তোলনের জন্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে এক বা একাধিক নমিনি মনোনয়ন করতে পারবেন। যে কোনো সময় নমিনি বাতিল করে এক বা একাধিক নতুন নমিনি নির্বাচন করা যাবে। চাঁদা দাতা কর্তৃক প্রদত্ত একক নমিনি বা একাধিক নমিনির ক্ষেত্রে সকল নমিনি মৃত্যুবরণ করলে চাঁদা দাতাকে পুনরায় নমিনি মনোনয়ন করতে হবে।
নমিনি নাবালক হলে চাঁদা দাতার মৃত্যুর পর নমিনি সাবালক না হওয়া পর্যন্ত নমিনির পক্ষে স্কিমের প্রাপ্য অর্থ গ্রহণ বা উত্তোলনের জন্য চাঁদা দাতা নমিনি প্রদানকালে যে কোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারবেন। এ ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে চাঁদা দাতার মৃত্যুর পর নমিনি সাবালক না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি নাবালকের প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য হবে।
চাঁদা দাতার পেনশন হিসাব বা কর্পাস হিসাব
স্কিমের আওতাভুক্ত প্রত্যেক চাঁদা দাতার নামে একটি পৃথক পেনশন হিসাব থাকবে। যা তার কর্পাস হিসাব হবে এবং উক্ত কর্পাস হিসাবে চাঁদা দাতা কর্তৃক জমা করা চাঁদার অঙ্ক হিসাবায়ন করা হবে। কর্তৃপক্ষ প্রতি অর্থবছর শেষে সর্বজনীন পেনশন তহবিলের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী অনুযায়ী কর্পাস হিসাবের স্থিতির ওপর লভ্যাংশ ঘোষণা করবে। চাঁদা দাতার জমা করা চাঁদার ওপর ঘোষিত নির্ধারিত হারে লভ্যাংশ আকলন দেখিয়ে কর্পাস হিসাবের পুঞ্জীভূত জমার পরিমাণ নির্ধারিত হবে। চাঁদা দাতার কর্পাস হিসাবে পুঞ্জীভূত জমার ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মাসিক পেনশন (অ্যানুইটি)-এর পরিমাণ নিরূপণ করা হবে।
স্কিমের রূপান্তর
চাঁদা দাতা যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে তার অনুকূলে চালু করা স্কিমের পরিবর্তে অন্য স্কিম বা স্কিমের চাঁদা প্রদানের হার পরিবর্তন করতে পারবেন। স্কিম রূপান্তরের ক্ষেত্রে রূপান্তরিত স্কিমে নতুন চাঁদার হিসাব পৃথক রেখে লভ্যাংশ ও পুঞ্জীভূত জমার অর্থের হিসাব করতে হবে, যা পূর্বতন স্কিমের পুঞ্জীভূত জমার সঙ্গে যুক্ত হবে। স্কিম রূপান্তরের কারণে মেয়াদ পূর্তিতে মাসিক পেনশনের পরিমাণ পুনঃনির্ধারিত হবে।
স্কিমের স্বত্ব
এই বিধিমালার অধীন কোনো চাঁদা দাতার অনুকূলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যু করা কোনো স্কিমের সম্পূর্ণ স্বত্ব উক্ত স্কিমের চাঁদা দাতার থাকবে। পেনশন স্কিমে চাঁদা দাতা ওই স্কিমের স্বত্ব জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সত্তার নিকট হস্তান্তর করতে পারবেন না। তবে স্কিম বা পেনশন চলাকালে যে কোনো সময়ে চাঁদা দাতার মৃত্যু হলে ওই স্কিমের অর্থ চাঁদা দাতা কর্তৃক মনোনীত নমিনি বা নমিনির অবর্তমানে চাঁদা দাতার উপযুক্ত উত্তরাধিকারী বরাবর হস্তান্তরে কোনো বাধা থাকবে না।
প্রদত্ত চাঁদা থেকে ঋণ গ্রহণ
চাঁদা দাতা নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, গৃহ নির্মাণ, গৃহ মেরামত এবং সন্তানের বিবাহের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনে তহবিলে কেবল তার জমা করা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করতে পারবেন। যা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ধার্য করা ফিসহ সর্বোচ্চ ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে এবং সমুদয় অর্থ চাঁদা দাতার হিসাবে জমা হবে। গৃহীত ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত নতুনভাবে কোনো ঋণ গ্রহণ করা যাবে না।
চাঁদা দাতা বা পেনশনারের মৃত্যুর পর স্কিমের বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ প্রদান
চাঁদা দাতা নমিনি প্রদানপূর্বক মৃত্যুবরণ করলে এবং তাহার মৃত্যুর পর নমিনি মনোনয়ন কার্যকর থাকলে উক্ত স্কিমের অর্থ নমিনি প্রাপ্য হবেন। নমিনি নাবালক হলে চাঁদা দাতা বা পেনশনারের মৃত্যুর পর বিধি ১০ এর উপবিধি (৩) এর বিধান অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্কিমের বিপরীতে জমা করা অর্থ বা পেনশনের অর্থ প্রাপ্য হবেন এবং উক্তরূপ কোনো ব্যক্তি নিয়োগপ্রাপ্ত না হলে নাবালকের আইনসম্মত অভিভাবক উল্লিখিত স্কিমের আওতায় পাওনা অর্থ প্রাপ্য হবেন।
কোনো স্কিমের বিপরীতে একাধিক নমিনি থাকলে এবং যে কোনো একজন নমিনি মৃত্যুবরণ করলে এবং মৃত নমিনির বিপরীতে নতুন কোনো নমিনি মনোনয়ন না করা হইলে, জীবিত নমিনি বা নমিনিরা উল্লিখিত স্কিনে উত্তরাধিকারী হিসাবে গণ্য হবেন এবং উক্ত স্কিনের অর্থ প্রাপ্য হবেন। কোনো স্কিমের চাঁদা দাতা মাসিক পেনশন প্রাপ্যতা অর্জিত হইবার পর মৃত্যুবরণ করলে উক্ত স্কিনে জমা করা পুঞ্জীভূত অর্থের ভিত্তিতে পেনশন নির্ধারণপূর্বক তার নমিনি বা নমিনিরা অথবা নমিনি না থাকলে তার উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীদেরকে পেনশন প্রদান করা যাবে এবং এই ক্ষেত্রে উপবিধি (৫) এর বিধান প্রযোজ্য হবে।
এই বিধির আওতায় কোনো স্কিমের চাঁদা দাতা পেনশনে থাকাকালীন তার বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি বা নমিনিরা অথবা নমিনি না থাকলে তার উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা অবশিষ্ট সময়ের জন্য অর্থাৎ মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হতে যতদিন অবশিষ্ট থাকবে ততদিন পর্যন্ত মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। কোনো স্কিমের চাঁদা দাতা মাসিক পেনশন প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে তার নমিনি বা নমিনিরা অথবা নমিনির অবর্তমানে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা মুনাফাসহ জমা করা অর্থ ফেরত পাবেন।
চাঁদা দাতা বা পেনশনার মৃত্যুবরণ করলে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধান
নমিনির অবর্তমানে উত্তরাধিকারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার কর্তৃক ইস্যু করা উত্তরাধিকার সনদের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ উত্তরাধিকার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি সচিব, অর্থ বিভাগ বরাবর আপিল করতে পারবেন। আপিল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
রেকর্ড সংরক্ষণ
কর্তৃপক্ষ স্কিমের হিসাব, পেনশন হিসাব, কর্পাস হিসাব, চাঁদা দাতা ও নমিনির জীবন বৃত্তান্তসহ যাবতীয় তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ ও নিয়মিত হালনাগাদ করার পাশাপাশি ব্যাকাপ রাখবে।