ত্রিপুরা নিউজ ডেস্ক: নিজেদের কর্তব্যে গাফিলতি আড়াল করতে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তমূলক মামলা করেছে বিএসএফ বলে অভিযোগ ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলার একাংশ সাংবাদিক। বিএসএফ’র এই কাজের নিন্দা জানিয়েছে ঊনকোটি জেলার কৈলাসহর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
এই বিবৃতিতে কৈলাসহর প্রেসক্লাবের সম্পাদক চারুকৃষ্ণ কর উল্লেখ করেছেন – গত ২ জানুয়ারি রবিবার, ঐদিন দুপুর আনুমানিক বারোটা নাগাদ কৈলাসহর পুরো পরিষদের এক নং ওয়ার্ডের শীল পাড়া এলাকায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে, এই খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহ করার লক্ষ্যে সাংবাদিক দেবাশিস দত্ত, সাংবাদিক জামাল উদ্দিন, আব্দুল মুনিম সহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যান।
সাংবাদিক দেবাশীষ দত্ত যথারীতি তল্লাশি অভিযানের ছবি তুলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে কি হয়েছে এবং তাদের বক্তব্য যথারীতি ভিডিও রেকর্ড করেন। এলাকাবাসী সাক্ষাৎকারে জানান ১ জানুয়ারি শনিবার গভীর রাতে এই এলাকার দুটি জায়গায় কে বা কারা ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া কেটে দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন ২ জানুয়ারি সকাল এগারোটা থেকে বি.এস.এফ বাড়ি বাড়ি তল্লাশির নামে বাড়ি ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। এছাড়াও এলাকাবাসী জানান, বি.এস.এফ তল্লাশি করার আগে বলেছিল যেহেতু করোনা বিধি চলছে তাই একজন ঘরে ঢুকে তল্লাশি করবে পাশাপাশি তাদের অভিযোগ বি.এস.এফ তাদের কোন সার্চ ওয়ারেন্ট দেখায়নি উল্টো বাড়ির মালিকের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়েছে বলে এলাকাবাসীরা সাংবাদিকদের জানান।
এলাকাবাসীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় বি.এস.এফের আধিকারিক সত্যনারায়ন দেবাশিষ দত্তের কাছে জানতে চান তার নাম ঠিকানা। দেবাশীষ দত্ত তাঁর নিজের পরিচয় সহ নাম-ঠিকানা বি.এস.এফকে জানায় বি.এস.এফ আধিকারিক বিষয়টি নোট করে নেন এখানেই বিষয়টি শেষ হয়ে যায়। এরপর যে যার জায়গায় ফিরে যান কিন্তু দোসরা জানুয়ারি সন্ধ্যায় জানা যায় বি.এস.এফের আধিকারিক পাঁচ গ্রামবাসীর সঙ্গে সাংবাদিকদের নাম জড়িয়ে কৈলাসহর থানায় সরকারি কাজে বাধা, সম্পত্তি নষ্ট ইত্যাদি অভিযোগ এনে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে।
শহরের প্রাণকেন্দ্র এভাবে কাঁটাতারের বেড়া দুষ্কৃতিকারীরা রাতের আধারে কেটে ফেলায় স্থানীয় বাসিন্দারা যখন আতঙ্কিত তখন সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের অভিযোগ উড়িয়ে দিতে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত মূলকভাবে এই অভিযোগ দায়ের করেছে বলে অভিমত এলাকাবাসীসহ শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিকের। যখন এই সীমান্ত বেড়া কাটা অবাধ বাণিজ্যসহ বিএসএফের কর্তব্যে গাফিলতির সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তখনই সাংবাদিকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও মিথ্যা মামলা করে ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিতে তৎপর বি.এস.এফ। পূর্বেও এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
কৈলাসহর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে সেদিনও ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বি.এস.এফ এর আই.জি-এর কাছে লিখিত ভাবে বিস্তারিত জানানো হয়েছিল। কোন দিন কোন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে সংশ্লিষ্ট থানা গুলোর মামলা নম্বর উল্লেখ করে কৈলাসহর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছিল। কোন প্রশ্ন করা যদি সরকারি কাজে বাধা হয় তাহলে তখন ঐ তো সাংবাদিক দেবাশীষ দত্ত কে বি.এস.এফ আধিকারিক বলে দিতে পারতেন কোন প্রশ্ন করা বা জানতে চাওয়া সরকারি কাজে বাধা দেয়ার শামিল এবং তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারতেন কিংবা গ্রেফতার করতে পারতেন কিন্তু তা না করে পরবর্তী সময়ে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করে কার্যত সাংবাদিকদের চাপে ফেলতে মামলার কৌশল বলে মনে করে।
কাঁটাতারের বেড়া কাটাসহ সীমান্ত পাচার বাণিজ্য সীমান্ত অপরাধ এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্তব্যে গাফিলতির ইত্যাদি নিয়ে যাতে কোনো সাংবাদিক আগামী দিনে সংবাদ করার সাহস না পায় সেই জন্যই ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই মামলা হয়েছে বলে কৈলাসহর প্রেসক্লাব মনে করেছে। ২১ জানুয়ারী শুক্রবার কৈলাশহর প্রেসক্লাবের সম্পাদক চারুকৃষ্ণ কর এই বিবৃতি প্রকাশ করেছেন।এই ঘটনার ব্যাপারে বিএসএফ’র ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ার্সের তরফে এখন কোন বিবৃতি জারি করা হয়নি। তবে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যের অন্যান্য জায়গাতেও কর্মরত একাংশ সাংবাদিক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।