বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: বিস্ফোরক দ্রব্য ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের একমাত্র পাথরখনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড। শনিবার থেকে খনিতে পাথর উত্তোলন সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি দ্যা গ্রেইট বেঙ্গল টুডে‘কে নিশ্চিত করেছেন খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইনিং) আবু তালহা ফারাজি। তিনি বলেন, বিস্ফোরক দ্রব্য ফুরিয়ে যাওয়ায় খনিতে পাথর উত্তোলন সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ জন্য খনির ৭০০ শ্রমিককে সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হযেছে। বিস্ফোরক দ্রব্য সরবরাহের পর আবারো পাথর উত্তোলন শুরু হবে।
পাথর উৎপাদন ও উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত বিস্ফোরক (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) সংকটে পড়ে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি হতে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়েছে। এতে প্রতিদিন সরকারের লোকসান হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা। আজ শনিবার সকাল থেকে খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়। তবে খনি কর্তৃপক্ষ (এমজিএমসিএল) বলছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পরিবহন সংকট সৃষ্টি হওয়ায় বিস্ফোরক আমদানিতে বিলম্ব হচ্ছে।
চুক্তি অনুযায়ী খনির উন্নয়ন, উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চাহিদামতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও বিস্ফোরক সরবরাহ করার কথা গ্রানাইট মাইনিং কম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষের। কিন্তু খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (জিটিসি) কে চুক্তির আওতায় নির্দিষ্ট সময়ে প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক সরবরাহ করতে না পারায় খনির উন্নয়ন ও পাথর উৎপাদন কাজে বতর্মান সংকট দেখা দিয়েছে।
খনিসংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানায়, পাথর উত্তোলন কাজের জন্য অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। চুক্তি অনুযায়ী খনি কর্তৃপক্ষ সময়মতো জিটিসিকে চাহিদামাফিক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরবরাহ করবে। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে খনি কর্তৃপক্ষ (এমজিএমসিএল) জিটিসিকে চুক্তিমোতাবেক সময়মতো অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরবরাহ করতে পারেনি। খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তাগাদা সত্ত্বেও গত ২১ অক্টোবর থেকে যথাযত সহযোগিতার অভাবে বর্তমান এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়- খনি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও কর্মদক্ষতার অভাবে সময়মতো বিস্ফোরক সরবরাহ না করায় দৈনিক গড়ে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রতিদিন সরকারের লোকসান হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা। এ ছাড়াও সরকারি উন্নয়নকাজে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ পাথর সংকটে পড়ে চলমান নির্মাণ কাজ ব্যাহত হবে বলে শংকা সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
অন্যদিকে, পাথর আমদানি করে সংকট মোকাবেলা করতে গেলেও সরকারের বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হবে। কবে নাগাদ আমাদানিকৃত এই বিস্ফোরক দেশে এসে পৌঁছাবে এর সঠিক কোনো দিনক্ষণও বলতে পারছে না খনি কর্তৃপক্ষ।
খনি উন্নয়ন এবং উৎপাদন কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে উৎপাদন কাজে মেশিনারিজ এবং যন্ত্রাংশ অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন খনি বিশেষজ্ঞরা।
এর আগে খনির বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি মধ্যপাড়া পাথর খনির দায়িত্বভার গ্রহণের প্রথম মেয়াদে খনি উন্নয়ন এবং পাথর উত্তোলন কাজের জন্য চাহিদামাফিক প্রয়োজনীয় বিদেশি মেশিনারিজ এবং যন্ত্রাংশ খনি কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে আমদানি করে তাদের সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় চুক্তির ৬ বছর মেয়াদকালে খনির উৎপাদন ও উন্নয়ন কাজ প্রায় ৩ বছর বন্ধ থাকে। ফলে, পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হয়। খনির রক্ষণাবেক্ষণ সচল রাখতে জিটিসিকেও কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। চুক্তি অনুযায়ী এই সকল বিদেশি মেশিনারিজ এবং যন্ত্রাংশ খনি কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করার কথা।
মধ্যপাড়া পাথর খনির মহাব্যবস্থাপক (ইউজিওঅ্যান্ডএম) মো. আবু তালেব ফরাজী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে এসব বিস্ফোরক আমদানি করা হয়। তবে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পরিবহন সংকট সৃষ্টি হওয়ায় বিস্ফোরক আমদানিতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে, এ মাসের শেষ সপ্তাহ নাগাদ থাইল্যান্ড থেকে বিস্ফোরকের একটি চালান বাংলাদেশে পৌঁছাবে বলে আশা করা যায়।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে মধ্যপাড়া পাথর খনিতে পাথর উত্তোলন শুরু হয়। বিস্ফোরকের অভাবে প্রথম ২০১৪ সালে ২২ দিন, ২০১৫ সালে দুই মাস, ২০১৮ সালের জুন মাসে ৭ দিন উৎপাদন বন্ধ ছিল।





