করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে লণ্ডভণ্ড ভারতে একের পর এক করুণ ছবি উঠে আসছে। তবে সোমবার সকাল থেকে বিহারের গঙ্গা নদীতে ভাসতে থাকা শতাধিক লাশের ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। সেখানে ৪০টি লাশ শনাক্ত হওয়ার পর প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই আতঙ্কের মাঝেই লাশের সংখ্যা বেড়ে হয় ৭১। তবে স্থানীয়দের অনুমান, লাশের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাবে।
সোমবার বিহারের বক্সার জেলার চাউসা গ্রামে লাশগুলো ভেসে থাকতে দেখা যায়। আজ মঙ্গলবার ওই স্থান থেকে ৫৫ কিলোমিটার উজানে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের গাজিপুরে ভেসে এসেছে আরও কিছু লাশ।
এমন ঘটনায় গত দুই দিন ধরে করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বিহারে। পাশাপাশি জনমনে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
নদীপাড়ের বাসিন্দারা মনে করছেন, করোনায় মৃতদের না পুড়িয়ে নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানি থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেকে নদীর পানি ব্যবহারে ভয় পাচ্ছেন।
কোথা থেকে মানুষের এতো এতো মরদেহ ভেসে আসছে, কী তাদের পরিচয় তা নিয়ে জনমনে চলছে নানা প্রশ্ন।
এরই মধ্যে ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বিহার-উত্তর প্রদেশ সীমান্তের এক সেতুর ওপর থেকে নদীতে লাশ ফেলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর, উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বালিয়া সীমান্তের কাছে বিহারের শরন এলাকায় জয়প্রভা সেতুতে অ্যাম্বুলেন্স থেকে লাশগুলো নদীতে ফেলা হচ্ছে। এরা সবই করোনায় মারা গেছেন।
অরবিন্দ সিং নামের এক ব্যক্তি গণমাধ্যমকে বলেন, বিহার ও উত্তর প্রদেশ দুই জায়গা থেকেই অ্যাম্বুলেন্সের চালকেরা নদীতে লাশ ফেলছেন।
এ বিষয়ে ভারতের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, প্রত্যন্ত এলাকায় করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের কীভাবে সৎকার করতে হয়, তা তাদের জানা নেই। তাই মরদেহ থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় মরদেহগুলো নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন তারা।
এমন খবরে স্থানীয় প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন বাসিন্দারা। এনে আখন্দ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। এভাবে নদীতে লাশ ভেসে আসতে থাকায় আমরা করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে ভীত।’
তবে সংবাদমাধ্যম এএনআইকে গাজিপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এমপি সিং জানিয়েছেন, ‘ঘটনাস্থলে কর্মকর্তারা গেছেন ইতোমধ্যে। এ নিয়ে একটি তদন্ত চলছে।’
এদিকে লাশ ভেসে আসার ঘটনাকে অপ্রত্যাশিত জানিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পানিসম্পদ ও স্যানিটেশনবিষয়ক মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বলেছেন, ‘বক্সারে গঙ্গা নদীতে লাশ ভেসে আসার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। মা গঙ্গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা মোদি সরকারের অঙ্গীকার। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর উচিত অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’