ঢাকা অফিস: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও সাবেক রেব (RAB) ড. ডিজি বেনজির আহমেদের দুর্নীতি ও বিপুল সম্পদ নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বেনজীর আহমেদের নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করেছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’, ‘ মেয়ের বিশ্রামের জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকার ফ্ল্যাট’, ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’, ‘সেন্ট মার্টিন কক্সবাজারেও ভূ-সম্পত্তি’ শিরোনামে প্রকাশ হয় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। যা দেশে-বিদেশে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানান আলোচনা সমালোচনা চলছে।
গত ৩১শে মার্চ দৈনিকে কালের কন্ঠ সর্বপ্রথম ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে তার নানা অর্থ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়। বেনজীরের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র। এছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছের এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি। অথচ গত ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মতো হওয়ার কথা।
অবশেষে এসব বিষয়ে মুখ খুললেন বেনজীর আহমেদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেইজে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বেলা ১১টা ১১ মিনিটে তিনি একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, দু একজন অনেক ক্ষিপ্ত, খুব ই উত্তেজিত হয়ে এক্ষুনি সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রবন্ধ লিখে ফেলছেন। দয়া করে সামান্য ধৈর্য্য ধরুন। ঘোষণাই তো আছে ‘‘কুৎসার কিসসা আভি ভি বাকি হ্যায়।”
এরপর প্রায় তিন সপ্তাহ পর শনিবার (২০ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এসে প্রায় ২৫ মিনিট বক্তব্য দেন তিনি। যা ছিল বেশ গোছানো। ভিডিও’র থাম্বনিল ছিলো ’অপপ্রচারের জবাব’ নামে। আর টাইটেলে লেখা ছিলো, ‘আমার কিছু কথা’। স্ক্রিপ্ট লিখে তা দেখে পয়েন্ট আকারে নিজের যুক্তি তুলে ধরেন পুলিশের সাবেক এ আইজি। ভিডিও বক্তব্যে তিনি নিজের ও পরিবারের বিরুদ্ধে অসত্য, বিকৃত তথ্য প্রকাশ করে সম্মানহানি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
বক্তব্যে নিজের সহায়-সম্পদ এবং প্রতিবেদনে তুলে ধরা অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “সম্প্রতি পত্রিকান্তরে আমার এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু খুবই আপত্তিজনক ও মানহানিকর, বিকৃত এবং অসত্য সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেই সংবাদের সূত্র ধরে অন্যান্য কতিপয় আউট লেট একই ধরণের সংবাদ পুনরাবৃত্তিক্রমে পরিবেশন করেছে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, দেশের মেইনস্ট্রিম, অর্থাৎ মূল ধরার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এই অসত্য এবং মানহানিকর বিকৃত সংবাদ পরিবেশনে তেমন কোন আগ্রহ দেখায়নি। মূল ধারার সেই সব প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বন্ধুগনের প্রতি আমার এবং পরিবারের অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।” বক্তব্যের পরের অংশে তিনি বলেন, “আমার অবসর গ্রহনের প্রায় দু’বছর পরে আকষ্মিকভাবে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে এ ধরণের একটি মানহানিকর, অসম্মানজনক এবং অসত্য সংবাদ কেন পরিবেশিত হলো, সেই আলোচনায় আমি সচেতনভাবে যাবো না। তবে এর কারণ, রাজধানীর সকল সাংবাদিক এবং সচেতন মহলের মুখে মুখে।”
বক্তব্যের শুরুতে নিজের সফলতার কথা তুলে ধরেন বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, “যেহেতু আমি পাবলিক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি, প্রায় ৩৫ বছর রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কর্তব্য পালন করেছি, সেহেতু ব্যাক্তিগত দায়বদ্ধতার অবস্থান থেকে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্য এবং তুলে ধরাকে একটি নৈতিক তাগিদ আমি ভেতর থেকে অনুভব করছি। তাছাড়া এদেশের মানুষ, যারা আমাকে পছন্দ করেন, ভালবাসেন, সমর্থন করেন, তারা সহ আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, নিকট পরিচিতজন, যারা এ ধরণের অসত্য এবং বিকৃত সংবাদের প্রেক্ষিতে ব্যাক্তিগতভাবে আহত হয়েছেন, ব্যাথিত হয়েছেন, হতাশ হয়েছেন, সংক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাদেরকে আশ্বস্ত এবং তাদের বিশ্বাসের জায়গাটি সুদৃঢ় করার জন্য আমরা মনে করি, প্রকৃত সত্য তুলে ধরা খুবই জরুরী।” তিনি বলেন, “আমার এই বক্তব্যের লক্ষ্য কাউকে পাল্টা আক্রমন করা নয়, কোন বিদ্বেষ ছড়ানো নয়, ইংরেজিতে যাকে বলে মাস লিঙ্গিং। সেটাকে আমরা সচেতনভাবে এভয়েড করতে চাই। শুধুমাত্র নৈতিক এবং ব্যাক্তিগত দায়বদ্ধতার প্রেক্ষাপটে আমি আমার কথাগুলো বলবো।”
এরপর প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেন পুলিশের সাবেক আইজি। তিনি বলেন, “আমরা প্রকাশিত দুই কিস্তি সংবাদের পুংখানুপুংখ পর্যালোচনা করেছি। এতে মোটামুটি সব মিলিয়ে ৪৫টি তথ্য, অভিযোগ এবং অপমানজনক বক্তব্য সন্নিবেশিত আছে। তার মধ্যে ২৪টি তথ্য বা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কল্পনা প্রসূত। দুইটি বিষয়কে সাতবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। দুইটি বিষয়ের তথ্যকে ভুল এবং বিকৃতভাবে পরিবেশন করা হয়েছে। বাকী ১০টি অভিযোগ বা তথ্যকে ফুলে ফাঁপিয়ে, শুধু তিলকে তাল নয়, তাল গাছের ঝাড় সমেত বানিয়ে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।”
‘কৃষিক্ষেত্রে ব্যবসার জন্য শতকোটি টাকার বিনিয়োগ’ অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, “আমার জন্ম শহর গোপালগঞ্জে, ২০১৪ সাল থেকে আমাদের পারিবারিক কৃষি খামার ও কৃষিতে বিনিয়োগ আছে। সে সময় থেকে ১০ বছর ব্যাপি ধীরে ধীরে কৃষি ক্ষেত্রে আমাদের পারিবারিক বিনিয়োগ এবং ব্যবসা চলে আসছে। প্রথমে সেখানে আমাদের পরিবারের সদস্যগন একটি ছোট মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা করে। সেই খামারের আয় থেকে আস্তে আস্তে ব্যবসা বৃদ্ধি হয়। পরবর্তীকালে মৎস্য খামারের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন বনজ, ফল, ওষধি এবং মসলা জাতীয় বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে ব্যাপক বনায়ন করা হয়।”
কৃষিতে কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বেনজীর আহমেদ বলেন, “কৃষিক্ষেত্রে ব্যবসার জন্য শত শত কোটি টাকার প্রয়োজন হয়না। প্রকল্প যেখানে রয়েছে, সেখানে যে পরিমান ভূমি উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি কোন ক্রমে সঠিক নয়। সত্য এই যে, সেখানে যে পরিমান টাকার জমি কেনা হয়েছে, তার থেকে বেশি আমার পরিবারের ব্যাংক এবং অন্যান্য সূত্র থেকে ঋণ, লোন বা দেনা রয়েছে। এটি মূলত তাদের ব্যবসায়িক আয় এবং অন্যান্য সূত্র থেকে সংগৃহীত লোনের মাধ্যমে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তাছাড়া এই জমির পরিমান এবং টাকার উৎস সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স ফাইলে সন্নিবেশিত আছে।”
‘শতকোটি টাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক স্ত্রী’-এমন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি সরকারী চাকরিজীবি হলেও আমার স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। আমার সরকারী চাকরি কোন মতেই এদেশে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করা বা সম্পত্তি অর্জনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে না। এদেশের সংবিধানে তাদের যে সুযোগ রয়েছে, এটা তাদের জন্য কখনও বাধা হয়ে দাড়াতে পারে না। আমার স্ত্রী ও পরিবার সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিজনক মন্তব্য করা হয়েছে। তার পিতা বাংলাদেশের একজন পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। আমার স্ত্রী বিগত ২৪ বছর ধরে ব্যাক্তিগত এবং ব্যবসায়িক আয়ের বিপরীতে সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করে আসছে।”
নিজ পরিবারে গোপনীয়তা ভঙ্গের বিষয়ে পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর বলেন, “আরও দুঃখের বিষয়, ক্ষোভের বিষয় এই যে, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ি প্রত্যেক মানুষের ব্যাক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার রয়েছে। কিন্তু এই সংবাদ সমূহে আমার পরিবার সদস্যদের পাসপোর্ট, এনআইডি, তাদের টেলিফোন, ই-মেইল নাম্বার, এক্সপোজ করে দেয়া হয়েছে। এতে তাদের ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা মারাত্মকভাবে লংঘিত হয়েছে।”
‘পূর্বাচলে ৪০ কাঠা জমির উপর ডুপ্লেক্স বাড়ীর অভিযোগ’ সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রতিবেদন দুটিতে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে আমার এবং পরিবারের যে সম্পত্তি উল্লেখ আছে, সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রতিবেদন মোতাবেক ঢাকার কাছে বিঘার পর বিঘা আমার, আমাদের বা আমার পরিবারের কোন জমিজমা নেই। পূর্বাচলে ৪০ কাঠা জমির উপর ডুপ্লেক্স বাড়ী নেই, পূর্বাচলে কথিত বাড়ীর পাশে একই জায়গায় ১০ বিঘা জমি নাই।”
‘বেনজীরের আয় এবং পারিবারিক ব্যবসার বিনিয়োগ আকাশচুম্বী’র অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমার ৩৫ বছরের চাকরি জীবনে বেতন-ভাতার যে কাল্পনিক হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে, সেটিও ভুল এবং খুবই অপমানজনক। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, আমার অবসরের পর থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে ! এ ধরণের শব্দ প্রয়োগও খুবই আপত্তিকর। আমাদের পারিবারিক ব্যবসা ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বিগত ১০ বছর ধরে আমাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রকাশ্যে এবং জনসম্মুখে পরিচালিত হয়ে আসছে। আমাদের পারিবারিক মৎস্য প্রজেক্ট, জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত হয়েছে। এছাড়া একাধিক পুরস্কার প্রাপ্ত হয়ে স্বীকৃতি লাভ করেছে আমাদের মৎস্য চাষের প্রজেক্ট। এটি বছরের পর বছর ধরে তাদের শ্রম ও ঘামের দ্বারা অর্জিত হয়েছে। তাদের এমন চেষ্টাকে এ ধরণের সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে অপমান করা হয়েছে বলে মনে করি।”
‘গোপালগঞ্জ সাভানা এগ্রো প্রজেক্টে ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ’ অভিযোগের জবাবে বেনজীর আহমেদ বলেন, “গোপালগঞ্জে দু’টি কোম্পানীর প্রজেক্টে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে ৫ কোটি টাকা এবং ২০ কোটি টাকা এমনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেন সাধারণ পাঠক মনে করেন, এ দুই কোম্পানীতে আমাদের পরিবার ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আসলে অনুমোদিত মূলধন এবং পরিশোধিত মূলধন এক নয়।” তিনি বলেন, “যে কোম্পানীর কথা বলা হয়েছে, সেটি ব্যবসাতেই আসেনি। মূলত ফান্ডিং বা ফাইনান্সের অভাবে এ কোম্পানী ব্যবসা করছেনা।”
‘প্রকল্প এলাকার নাম বেনজীরের চক’ অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রকল্প এলাকার নাম বেনজীরের চক, এটি প্রতিবেদকের আবিষ্কার। এ নামে কোন জায়গা প্রকল্প এলাকায় নাই। বৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া হয়েছে। চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি কেনার অভিযোগ করা হলেও, এখানে সে সুযোগ নেই। কারণ এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলা এবং প্রকল্পটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংসদীয় আসনের কাছে। ফলে এমন জায়গায় গায়ের জোরে, শক্তি বা ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি কেনার চিন্তা অসম্ভব কল্পনা।”
‘মগবাজার ও আনন্দ হাউজিং-এ ফ্লাট-বাড়ি’ অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, “শুধু মগবাজার নয়, রমনা, সিদ্দেশ্বরী, আশেপাশে কোথাও কোন ফ্লাট-বাড়ি নাই।” ‘আনন্দ হাউজিং-এ ৪৫ কোটি টাকা বাড়ীর’ অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “টিনের ছাউনি দেয়া বাড়ীর দাম ৪৫ কোটি টাকা খুবই হাস্যকর।”
বক্তব্যের শেষ দিকে বেনজির আহমেদ অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, “আমার ও পরিবারের সহায়-সম্পত্তির যে মিথ্যা বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তার কোন কিছুই আমাদের নাই। যদি কেউ তা প্রমান করতে পারেন, তবে তাকে সেই সহায়-সম্পদ বিনা পয়সায় লিখে দিব।”
বেনজিরের ভিডিও বক্তব্যে শুনে নেটিজেনরা তাঁর ফেসবুক ভিডিও কমেন্ট বক্স এ নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, এতদিন পর কেনো মুখ খুললেন? গোপনে সমঝোতা হয়ে গেছে বলে মুখ খুলেছেন? কাকে দিয়ে এই বক্তব্য আপনি লিখিয়েছেন? পত্রিকায় জবাব না পাঠিয়ে বা মামলা না করে ফেসবুক কেনো বেছে নিলেন? নেটিজেনরা বেনজির আহমেদকে এমন নানান প্রশ্নবানে জর্জরিত করেছেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তর দেননি।
এদিকে বেনজীর আহমেদের সম্পদের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদক এতদিন নীরব থাকলেও সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দিন রিগ্যান অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করলে রিটের শুনানির সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে বলেন, ‘কমিশন বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে এবং তদন্তের শর্তাবলী নির্ধারণ করেছে।’ তিনি রিট আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, এ বিষয়ে দুদকের কোনো নিষ্ক্রিয়তা বা ব্যর্থতা নেই, কারণ তারা ইতোমধ্যে অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করেছে। তারা রিট আবেদন খারিজের জন্য হাইকোর্ট বেঞ্চের কাছে প্রার্থনা করেন।
রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আগামী দুই মাসের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দেন।