- মোদি ভারতকে বাংলাদেশ বানাতে চান : কেজরিওয়াল
- দেনায় জর্জরিত বাংলাদেশ, মোদির কাছে হাসিনার যত ঋণ
কলকাতা, ১৯ মে: ভারতে লোকসভা নির্বাচনের সাত দফার মধ্যে চার দফার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী নরেন্দ্র মোদি ফের একবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই নির্বাচনেই টানা তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নেমেছেন নরেন্দ্র মোদি। আর সেই মোদিকেই শুক্রবার এক হাত নিয়েছেন সদ্য কারামুক্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বলেছেন, ভারত একসময় বিশ্বকে গণতন্ত্রের পাঠ দিত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে ভারতের অবস্থা আজ শোচনীয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতের ভোটেও একই কাজ করার চেষ্টা করছেন মোদি। এমনকি পুতিনের রাশিয়ার সঙ্গেও ভারতের তুলনা করেছেন কেজরিওয়াল। নির্বাচনের মধ্যেই মোদির ব্যাপক সমালোচনা করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, ‘রাশিয়ার পুতিন কী করলেন? যতো বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন তাদের সবাইকে গ্রেফতার করে জেলে ঢুকালেন অথবা মেরে ফেললেন। এরপর চুরি করালেন। ৮৭% ভোট পেয়ে গেলেন! যখন বিরোধী কেউ না থাকেন, প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ না থাকবেন, তখন সব ভোটতো আপনিই পাবেন’।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে, সম্প্রতি নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে সব বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং নির্বাচনে শেখ হাসিনা জয়ী হয়েছেন। পাকিস্তানেও তাই হয়েছে। ইমরান খানকে জেলে ঢুকিয়ে দিলো, তার দল কেড়ে নিলো, তার প্রতীক কেড়ে নিলো, জিতে গেলো! মোদিজিও আমাদের দেশ ভারতকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বানাতে চান’।
মুম্বাইয়ের বান্দ্রা কুরলা কমপ্লেক্সে (বিকেসি) বিরোধী ইন্ডিয়া ব্লকের এক সমাবেশে বক্তৃতাকালে কেজরিওয়াল বলেন, ‘বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক। মোদিজি, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে শেখার পরে এখানে, ভারতে একই জিনিস প্রয়োগ করার চেষ্টা করছেন।তারা আমাকে জেলে রেখেছিল, মণীশ সিসোদিয়াকে জেলে রাখা হয়েছিল… কংগ্রেস পার্টির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আটকে দেওয়া হয়েছিল… এভাবেই আপনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং জিতবেন। এটি কাপুরুষতার চিহ্ন।’
সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, ‘আপনাদের আজ সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, দেশকে কোথায় নিতে চান, বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের দিকে? নাকি দুনিয়ার এক নম্বর দেশ বানাতে চান?’
উল্লেখ্য, কথিত মদ নীতি কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত দুর্নীতির অভিযোগে ৫০ দিন করাগারে থাকার পরে গত ১০ মে অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির তিহার জেল থেকে মুক্তি পান। জেল থেকে মুক্তির পরপরই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তা দেন তিনি। এর আগে একইদিন দুপুরে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান কেজরিওয়াল। শীর্ষ আদালতের এই রায়ের ফলে আগামী ১ জুন অর্থাৎ লোকসভা ভোটের শেষ দফা পর্যন্ত জেলের বাইরে থাকবেন তিনি।
দেনায় জর্জরিত বাংলাদেশ, মোদির কাছে হাসিনার যত ঋণ
ঋণের ভারে জর্জরিত বাংলাদেশ। দিনে সেই মাত্রা ছাপিয়ে যাচ্ছে বিপদ সীমা। বছরভর বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে তার অধিকাংশ পরিমাণই এখন চলে যাচ্ছে সুদ দিতে। দিনে দিনে বিদেশী ঋণের হার একপ্রকার বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের মানুষের ওপর। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের অর্থাৎ আইএমএফ-র হিসাব অনুযায়ী ২০২০-২১ পর্যন্ত পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২২৯ কোটি ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশের বিদেশী ঋণ দাতাদের তালিকায় মূলত আইএমএফ, কিংবা বিশ্ব ব্যাংক ছাড়াও রয়েছে আরও অন্যান্য দেশ। যার মধ্যে অন্যতম ভারত। আইএমএফ-র তথ্য বলছে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ঝুঁকি সীমার মধ্যেই রয়েছে। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের জন্য নতুন করে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। হিসাব অনুযায়ী বিশ্ব ব্যাংক এবং আইএমএফ -র মত আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে বর্তমানে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৯০ কোটি ডলার। যা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের জিডিপির ৮ শতাংশের বেশি ছাড়িয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন দেশের থেকে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ২১৬৭কোটি ডলার। যা বাংলাদেশের জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি।
শেখ হাসিনা সরকার সবথেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্কের কাছ থেকে। বর্তমানে এই ঋণের পরিমাণ ১৮১৬ কোটি ডলার। আর তারপরেই এরপরেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-র থেকে ১৩২৮ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে হাসিনা সরকার। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে জাপান, রাশিয়া এবং চিনের মতো প্রভাবশালী দেশগুলিও। জানা যাচ্ছে জাপানের কাছ থেকে ৯২৩ কোটি টাকা আর রাশিয়া এবং চিনের কাছে যথাক্রমে ৫০৯ কোটি ডলার এবং ৪৭৬কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। এছাড়াও আইএমএফের থেকে আরও ৪৭০কোটি ঋণ নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছ। তার আগেও নাকি তাদের কাছে থেকে ৯৮কোটি ডলার নিয়েছিল হাসিনা সরকার।
আইএমএফ-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যাচ্ছে জাপান, রাশিয়াসহ প্যারিস ক্লাবের সদস্যভুক্ত দেশগুলির থেকেও মোট ১৫৫১কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে হাসিনা সরকার। প্যারিস ক্লাবের সদস্য নয়, এমন দেশের থেকেও হাসিনা সরকারের ঋণের পরিমাণ ৬১৬কোটি ডলার। আর এই তালিকাতেই নাম রয়েছে ভারতের। জানা যাচ্ছে মোদির ভারতের কাছে হাসিনার বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ১০২কোটি ডলার। তবে ঋণ শোধ করার বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছমাসে ১০৫কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে হাসিনা সরকারকে মোট ২৭৮কোটি ডলার অর্থ পরিশোধ করতে হবে। যা ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে বেড়ে দাঁড়াবে ৪০২ কোটি ডলারে।