তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের শিশুসহ ভার্চ্যুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগ থেকে ৪৮৯ শিশু জামিন পেয়েছে। ভার্চ্যুয়াল কোর্টের ২০ কার্যদিবসে জামিনপ্রাপ্ত এই শিশুদের মধ্যে ৪৬০ শিশুকে ইতিমধ্যে তাদের অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
আজ শনিবার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘১১ জুন পর্যন্ত ২০ কার্যদিবসে শিশু আদালত থেকে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে ৪৮৯ শিশু জামিন পেয়েছে। এর মধ্যে তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা শিশুসহ কেন্দ্রের বাইরের শিশুও আছে। ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে জামিনপ্রাপ্ত তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের শিশুসহ ৪৬০ শিশুকে ইতিমধ্যে তাদের অভিভাবককের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২৯ শিশুকে অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বে গঠিত শিশু অধিকারসংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কমিটি (স্পেশাল কমিটি অব চাইল্ড রাইটস) শিশুদের বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে শিশুদের বিষয়ে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে এবং তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। শিশুদের জামিন–পরবর্তী সুরক্ষার দিকগুলো ইউনিসেফ দেখছে। সংস্থাটি ওই কমিটির কাছে নিয়মিত প্রতিবেদনও দিচ্ছে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি চলাকালে ৯ মে আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারসংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। ফলে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয়। এর ধারাবাহিকতায় ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে শিশুদের জামিন বিষয়ে গত ১২ মে থেকে কার্যক্রম শুরু হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তর তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র পরিচালনা করে আসছে। তিনটি কেন্দ্র হচ্ছে, গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক), গাজীপুরের কোনাবাড়ী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (বালিকা) এবং যশোরের পুলেরহাটের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক)।
শিশুদের বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রতিষ্ঠান-২) এম এম মাহমুদুল্লাহ আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিশুদের সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনায় সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি অব চাইল্ড রাইটসের মৌখিক নির্দেশনা অনুসারে অধিদপ্তর প্রথমে আইনের সংঘাতে জড়িত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থাকা শিশুদের আদালতভিত্তিক তালিকা তৈরি করে। ভার্চ্যুয়াল কোর্টের কার্যক্রম শুরু হলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্রিয়া অনুসারে আইনের সংঘাতে জড়িত শিশুদের তালিকা সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতে পাঠানো হয়। গত ১২ মে থেকে শিশুদের জামিন শুনানি শুরু হয়। ১১ জুন পর্যন্ত কেন্দ্রে থাকা ৪৪২ শিশু জামিন পেয়েছে। এর মধ্যে ৪১২ শিশুকে অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউনিসেফ এ বিষয়ে সক্রিয় সহায়তা দিচ্ছে। জামিনপ্রাপ্ত অপর ২৫ শিশুকে অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া ও ৫ শিশুকে বরিশালে অবস্থিত শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর কার্যক্রম চলমান। কেননা, পাঁচ শিশুর ঠিকানা অজ্ঞাত ও বরিশালের আদালত থেকে তারা জামিন পেয়েছিল।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ভার্চ্যুয়াল কোর্টের (শিশু আদালত) মাধ্যমে গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) থাকা ২৪১ শিশু, গাজীপুরের কোনাবাড়ী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (বালিকা) থেকে ৩৬ শিশু এবং যশোরের পুলেরহাটের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) থাকা ১৬৫ শিশু জামিন পেয়েছে। টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে জামিনপ্রাপ্ত ২২৬ শিশুকে তাদের অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই কেন্দ্রে থাকা জামিনপ্রাপ্ত অপর আট শিশুকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ও অপর সাত শিশুকে তাদের অভিভাবক এসে নিয়ে যাবেন।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, কোনাবাড়ী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (বালিকা) থেকে জামিনপ্রাপ্ত ৩৬ শিশুর মধ্যে ৩১ শিশুকে ইতিমধ্যে তাদের অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপর পাঁচ শিশুর মধ্যে জামিনপ্রাপ্ত দুই শিশুকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ও অপর তিন শিশুকে তাদের অভিভাবক এসে নিয়ে যাবেন। আর যশোরের পুলেরহাটের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) জামিনপ্রাপ্ত ১৬৫ শিশুর মধ্যে ১৫৫ শিশুকে ইতিমধ্যে তাদের অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ১০ শিশুর মধ্যে ৫ জনের অভিভাবক এসে তাদের নিয়ে যাবেন। অপর পাঁচজনের ঠিকানা অজ্ঞাত হওয়ায় তাদের শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। জামিনপ্রাপ্ত শিশু বাদ দিয়ে বর্তমানে কেন্দ্র ৩টিতে ৮৮২ শিশু অবস্থান করছে, যার মধ্যে টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৫৫১ শিশু, গাজীপুরের কোনাবাড়ী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৯৩ এবং যশোরের পুলেরহাটের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) ২৩৮ শিশু রয়েছে।