গুয়াহাটি, ১৮ জুলাই : বাঙালি দরদ এখন রাজনীতির অন্যতম হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। কারণ, বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্তার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃষ্টি ভিজে রাস্তায় পা মেলাতেই এবার আসরে নেমেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। মমতার উদ্দেশ্যে হিমন্তের কটাক্ষ, তিনি শুধু মুসলিম বাঙালিদের জন্যই রাজনীতি করছেন, গোটা বাঙালি সম্প্রদায়ের পক্ষে নন। স্বাভাবিকভাবেই এই মন্তব্য ঘিরে অসম-সহ পূর্বোত্তরের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
গুয়াহাটিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি বাঙালিদের ভালবাসেন, না কি শুধুই মুসলিম বাঙালিদের, এটা আমার প্রশ্ন? সাথে সাথেই তিনি বলেন, আমার উত্তর হল, শুধুই মুসলিম বাঙালিদের। পাশাপাশি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন(সিএএ) নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার প্রসঙ্গ টেনে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, তিনি যদি বাঙালিদের জন্য এত চিন্তিত হন, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে সিএএ কেন বাস্তবায়িত করছেন না? কারণ তিনি শুধুমাত্র মুসলিম বাঙালিদের নিয়েই ভাবেন, গোটা বাঙালি সমাজের জন্য নয়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, মমতা বিজেপির বিরুদ্ধে অসম ও আশপাশের রাজ্যগুলিতে ভাষা ও পরিচয়কে ব্যবহার করে ভোটারদের মেরুকরণের অভিযোগ তুলেছিলেন। এই মন্তব্যের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক অভিযোগের জবাব দিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কড়া সতর্কবার্তাও দেন। তিনি বলেন, তিনি যদি অসমে শুধুই মুসলিম বাঙালিদের স্বার্থে আসেন, তবে অসমিয়া এবং হিন্দু বাঙালি জনগণ তাঁকে ছেড়ে কথা বলবে না। যদিও মুখ্যমন্ত্রী শর্মা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি, তবে তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, অনুপ্রবেশ, জনগোষ্ঠীগত পরিচয় ও রাজনৈতিক সমীকরণ ঘিরে রাজ্যে উত্তেজনা ক্রমবর্ধমান।
অসম বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ও অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা জমি দখলের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। রাজ্যের দীর্ঘকালীন “অভ্যন্তরীণ বনাম বহিরাগত” বিতর্ক এবং ভূমিপুত্রদের অধিকার নিয়ে সংঘাতের ইতিহাস ফের তীব্র হয়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা ইঙ্গিত দেন, এই সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের কারণে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্য ও জাতীয় স্তরে অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের বিরোধিতা করে বারবার দাবি করেছে যে এটি “বাঙালি বিরোধী পদক্ষেপ”। এ প্রসঙ্গে হিমন্ত শর্মা বলেন, বাংলা ভাষার আড়ালে মমতা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করছেন।
অসমে ১৯৮০ সাল থেকে শুরু হওয়া অনুপ্রবেশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি আজও জীবন্ত। এই প্রসঙ্গে হিমন্ত শর্মার মন্তব্য ফের এই বিতর্ককে উসকে দিল। রাজ্যে বসবাসকারী হিন্দু বাঙালি ও ভূমিপুত্র অসমিয়া জনজাতিদের মধ্যে রাজনৈতিক সমীকরণ ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।