চলতি অর্থবছরের বাকি আছে তিন মাস (এপ্রিল, মে এবং জুন)। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) কাঙ্ক্ষিত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হলে এরই মধ্যে করতে হবে বড় অঙ্কের ব্যয়। এ সময়ে ব্যয় করতে হবে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা।
ফলে দৈনিক ১ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা খরচের চ্যালেঞ্জে রয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এদিকে গত নয় মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৯৮ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ। তুলনামূলক বাস্তবায়ন হার বাড়ায় তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থবছরের শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মানসম্মত ব্যয় নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কেননা প্রতিযোগিতামূলকভাবে অর্থব্যয় করতে গিয়ে এডিপির সঠিক বাস্তবায়ন প্রশ্নের মুখে পড়ছে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বকেয়া বিল পরিশোধের একটা বিষয় থাকে। সেটি বাদ দিলে তাড়াহুড়ো করে যে কাজ করা হবে সেগুলোতে অবশ্যই মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কেননা এমন ক্ষেত্রে টাকা খরচের জন্যই খরচ করা হয়, মান নিয়ে ভাবা হয় না। কিন্তু প্রশ্ন হলো বছরের পর বছর একই চিত্র চলে এলেও সেখান থেকে শিক্ষা নেওয়া হচ্ছে না। অর্থবছরের শেষদিকে এসে যে অবস্থা চলছে সেটি তো কেউই গ্রহণযোগ্য মনে করে না। তাহলে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে কেন এই অবস্থা থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। সমস্যা সবই চিহ্নিত। কিন্তু সমাধান করাটা জরুরি।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী মঙ্গলবার বলেন, আইএমইডির প্রতিবেদনের আর্থিক অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। কিন্তু আমাদের বাস্তব অগ্রগতি আরও বেশি আছে। কেননা এডিপিতে প্রকল্পগুলোর মধ্যে নির্মাণধর্মী প্রকল্প বেশি। এগুলোর ক্ষেত্রে কাজ শেষ না হলে সাধারণত বিল পরিশোধ করা হয় না। অর্থবছরের শেষদিকে যখন ঠিকাদাররা ফিনিসিং টাস্ক দেবেন তখন বিল ছাড় করা হবে। এজন্য শেষদিকে অনেক বেশি আর্থিক অগ্রগতি হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইএমইডিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো যদি তদারকি ঠিকমতো করে তাহলে মানহীন প্রকল্প বাস্তবায়নের শঙ্কা থাকে না। তবে গত অর্থবছরের চেয়ে যেহেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের অবস্থা ভালো সেহেতু এটা বলা যায় অগ্রগতি ভালো হবে।
বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের আরএডিপির আকার হচ্ছে ২ লাখ ১৭ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন রয়েছে ৯ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। গত নয় মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ৯৮ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। ফলে আগামী ৩ মাসে খরচ করতে হবে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৭৯ হাজার ৯১৬ কোটি, বৈদেশিক ঋণ থেকে ৩৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার তহবিল থেকে খরচ করতে হবে ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের নয় মাসে আরএডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হচ্ছে-পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এছাড়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন বাস্তবায়ন করেছে ২০ দশমিক ০৯ শতাংশ। আইন ও বিচার বিভাগ ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সুরক্ষা সেবা বিভাগ ২১ দশমিক ০৪ শতাংশ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
তবে আরএডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে রয়েছে বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলো হলো-জাতীয় সংসদ সচিবালয় শতভাগ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ ৯৮ শতাংশ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ৭৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। শিল্প মন্ত্রণালয় ৭৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৬৮ শতাংশ। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ ৬৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৫৯ দশমিক ০৪ শতাংশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৫৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থবিভাগ ৫৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৫৩ দশমিক ০৯ শতাংশ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৪৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। খাদ্য মন্ত্রণালয় ৫৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ৪৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে।





