- বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবে : কাদের
- তাহলে কি ব্যাংকে মস্তান-মাফিয়ারা ঢুকবে : রিজভী
- বাংলাদেশ ব্যাংক কি নিষিদ্ধ পল্লী : গয়েশ্বর
ঢাকা, ২০ মে: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে আবারো কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়ে গেছে ভারতীয় হ্যাকাররা। মঙ্গলবার ভারতীয় গণমাধ্যম ‘নর্থইস্ট নিউজ’ এমন একটা চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ করেছে। গণমাধ্যমটি বলছে, কমপক্ষে তিনজন কর্মকর্তা রিজার্ভ চুরির বিষয়টি তাদেরকে নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ভারত ও বাংলাদেশ সরকার রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি জানে। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। আর ঘটনাটি ঘটেছে কিছু দিন আগে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না সেটাও নিউজে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে রিজার্ভ চুরির এই নিউজ প্রকাশের পরই বাংলাদেশে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। দেশের গণমাধ্যমগুলোও এ নিয়ে নিউজ করছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে তুলকালাম চলছে। নেটিজেনরা বলছেন, রিজার্ভ চুরির খবর গোপন রাখতেই সাংবাদিকদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকে দুই মাস ধরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। আর ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী রিজার্ভ চুরির ঘটনাও ঘটেছে দুই মাসের মতো হয়েছে। এটা থেকেও মানুষ ধারণা করছে যে রিজার্ভ চুরির নিউজ সঠিক। সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রাখছে যাতে রিজার্ভ চুরির ঘটনা মানুষ জানতে না পারে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে সাংবাদিক সমাজ ফুঁসে উঠেছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাদেরও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবে : কাদের
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আপনার জানার বিষয় সব ওয়েবসাইটে আছে, আপনি কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকবেন কেন? বিশ্বের কোনো দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকে অবাধে সাংবাদিকরা ঢুকতে পারে?’
১৮ মে শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। দেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে এখন ১৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসায় সরকার উদ্বিগ্ন কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘কে বললো আপনাকে ১৩ বিলিয়ন ডলার?’ বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে- সাংবাদিকের এমন জবাবের পর তিনি বলেন, ‘কোন নিউজে বলছে আপনাকে? আমাদের কাছে হিসাব আছে।’ তখন সাংবাদিকরা মন্ত্রীকে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরই বলেছেন, ব্যবহার করার মতো ১৩ বিলিয়ন ডলার আছে। এর জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তাহলে গভর্নরকেই জিজ্ঞেস করুন যে, কী কারণে এইটা এই পর্যায়ে এলো? আমরা তো এটা জানি না। আমরা জানি, ১৯ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার; এর মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।’
সাংবাদিকদের তো বাংলাদেশ ব্যাংকে ডুকতে দেয় না, তাহলে গভর্নরকে জিজ্ঞাসা করব কিভাবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে সেন্ট্রাল ব্যাংকে কেউ কি অবাধে ঢুকতে পারছে? ভারতের ফেডারেল ব্যাংকে কি অবাধে ঢুকতে পারছে? কেন ঢুকবে? সব ওয়েবসাইটে আছে।’
রিজার্ভ কমে ১৩ বিলিয়নে নেমে আসায় অর্থনীতিবিদরা অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার পর কত বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। ডলার ছিল আমাদের? বিএনপি কয় বিলিয়ন ডলার রেখে গেছে আমাদের? তিন বিলিয়ন প্লাস। তাহলে এখন ১৯-২০ বিলিয়ন ডলার আছে এটা কি কম না কি? এখন আমাদের রফতানি আয় বাড়ছে, রেমিট্যান্সও বাড়ছে। এই মুহূর্তের যে প্রবণতা, এইগুলো বাড়লে রিজার্ভও বাড়বে।’
তাহলে কি ব্যাংকে মস্তান-মাফিয়ারা ঢুকবে: রিজভী
ব্যাংকে সাংবাদিকরা ঢুকবে কেন? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে না, তাহলে কি মাফিয়া, মস্তান, ঋণখেলাপিরা ঢুকবে?
১৯ মে রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সহায়তা প্রদান পূর্বে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, এক মর্মান্তিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশ তার দিন অতিক্রম করছে। অতিক্রম হওয়া দিন কোনোটিই সুখকর নয়। এখানে জীবন ও সম্পদের কোনো নিরাপত্তা নেই। জনগণের মনোভাব ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার একের পর এক পন্থা অবলম্বন করছে। সরকার তার বহুমুখী ব্যর্থতা ঢাকতেই একের পর এগুলো করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা একটা শূন্য গহ্বরের ভেতর যেন বসবাস করছি। আমাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। কিসের উপর দাঁড়িয়ে আছি তার নিজেরাই বলতে পারব না। শুধু ব্যাংক থেকে ১২০০০ কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। এটা আমার নয়, সিডিপির বক্তব্য। আমাদের জিডিপি ১২ শতাংশ নাই হয়ে গেছে। ৯২ হাজার কোটি টাকা শুধু ব্যাংক থেকে লোপাট হয়ে গেছে। লোপাটকারী সবাই ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়-স্বজন ও কাছের লোক।
‘রিজার্ভ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার উধাও করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, এখন তলানিতে রিজার্ভ। সরকার বলছে, ১৩ বিলিয়ন ডলার আছে। অথচ যারা সচেতন মানুষ তারা বলছেন ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার আছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের ঋণ পরিশোধ করতে ৪ বিলিয়ন ডলার যাবে; রিজার্ভ তো তলানিতেই। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, এক ক্ষুধায় জরাজীর্ণ কৃষ্ণ নারীর মুখে লিপিস্টিক দিলে যা হয়, এ সরকারের উন্নয়ন হচ্ছে সেই ধরনের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, ব্যাংকে সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্ট, রেস্ট্রিক্টেড ক্যান্টনমেন্ট? ক্যান্টনমেন্ট তো বৈধ মানুষ যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক তো জনগণের আমানত রক্ষার প্রতিষ্ঠান। এখানে সাংবাদিকরা তো যেতে পারে। সাংবাদিকরা তো দেশের বাইরে কানাডা, মালেয়শিয়া, দুবাইয়ে বাড়ি করেনি। ওবায়দুল সাহেব আপনি এসব কী কথা বলছেন। আপনাদের কাছের লোক যারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে ধনসম্পদের মালিক হয়েছেন, দেশের বাইরে বাড়ি করেছেন তাদের কথা সাংবাদিকরা যেন না জানতে পারেন, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ঘটনা তো নিশ্চয়ই কিছু ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় একটি পত্রিকা লিখলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হ্যাক হয়ে গেছে। ব্যাংক তো একটা স্টেটমেন্ট দিল, কারণ তারা সরকারের চাকরি করেন। সরকার যা বলবে তাদের তাই শুনতে হবে; কিন্তু মূল ঘটনা কি আড়াল করা যাবে সাংবাদিকদের ঢুকতে না দিয়ে? কাদের সাহেব কত দিন আপনি মুখ লুকিয়ে রাখবেন। যে নাশকতার কথা একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, সেটি তো দিনকে দিন ফুটে উঠছে। ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে না, তাহলে কি মাফিয়া, মস্তান, ঋণখেলাপিরা ঢুকবে- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে এমন প্রশ্ন ছুড়েন রিজভী।
বাংলাদেশ ব্যাংক কি নিষিদ্ধ পল্লী : গয়েশ্বর
বাংলাদেশ ব্যাংক কি নিষিদ্ধ পল্লী- এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সেখানে সাংবাদিকদের কেনো প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ১৮ মে শনিবার বিকেলে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জিয়া মঞ্চ’র ঢাকা বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, রাজনীতি মানেই জনসেবা। নিজের জীবনের জন্য নয়। কিন্তু আজকে রাজনীতি হয়ে গেছে ট্রেডিংয়ের মতো। যেমন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উপমহাদেশে করেছিল। আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে কেন? তারা ব্যবসা করছে। লুট করছে। আজকে আমাদের দেশের টাকা হ্যাক হয়ে যায় কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ জানে না। পাশের দেশে খবর প্রকাশের পর জানতে হচ্ছে। তবে টাকা যে হ্যাক হয়েছে সেটা তাদের চেহারা দেখলেই বোঝা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক কি নিষিদ্ধ পল্লী? সেখানে সাংবাদিকদের কেনো প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এজন্য সাংবাদিকদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে আমরাও তাদের জন্য নামবো। কারণ সাংবাদিক কোনো দলের জন্য নয়। আজকে সাগর-রুনির মামলার রায় ১০৯ বার পেছানো হয়েছে। এটা তো আরো পেছাবে, তা প্রক্রিয়াটা দেখলেই বোঝা যায়।