আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান বলেছেন, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে কি না, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্তে আইসিসি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করছে। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের সহযোগিতায় সন্তুষ্ট নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসি।
গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে করিম খান এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ রোম সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে আইসিসির পক্ষে। ফলে রোহিঙ্গা বিতাড়নের তদন্তে আইসিসিকে সহায়তা করছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহে বাংলাদেশের কতটা সহযোগিতা আইসিসি পাচ্ছে জানতে চাইলে করিম খান বলেন, ‘বাংলাদেশে আমি পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছি। এই সফরে প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে আলোচনার পরে ফলাফল পাওয়া। আমি আমার কাজ করছি। আশা করছি, অন্যরাও তাঁদের কাজগুলো করবেন, যাতে বিচার পাওয়া সম্ভব হয়।’
মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধে সবার একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি বলেন, ‘আমরা কেউই দর্শক হয়ে বসে থাকতে পারি না। এই অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের উচ্চকণ্ঠ হতে হবে। মানবতা রক্ষার স্বার্থে আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।’
রোহিঙ্গা বিতাড়নে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে কত সময় লাগতে পারে এমন এক প্রশ্নের উত্তরে করিম খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সরকারের কর্মকর্তা, রোহিঙ্গা এবং আরও অনেকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিচারের প্রক্রিয়া আগামীকালই শেষ হয়ে যাবে না। ন্যায়বিচার সহজে পাওয়া যায় না। কষ্ট করে এটি অর্জন করতে হয়।
করিম খান তাঁর প্রথম বাংলাদেশ সফরের ওপর সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে এটি প্রথম সফর। এ বছর আবার বাংলাদেশে আসব। আমার প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কয়েক দফায় এখানে আসবেন।’
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জানে এবং তারা এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন জানিয়ে করিম খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ দরকার আমার। কারণ, আমাকে মামলা করতে হবে। কোর্টরুমে আমাদের নিশ্ছিদ্র প্রমাণ দিতে হবে। এ জন্য আমাদের দৃঢ়ভাবে প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। কারণ, আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও ওই প্রমাণগুলোকে চ্যালেঞ্জ করবেন।’
রোহিঙ্গা বিতাড়নের মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে কি না তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য আইসিসির প্রধান কৌঁসুলিকে আদালতের বিচারকেরা চূড়ান্ত অনুমতি দেন। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কয়েক যুগের নৃশংসতার ন্যায়বিচার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায় তাঁদের আদিনিবাসে চরম নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।