- ‘অ্যালায়েন্স অব এইচআর ডিফেন্ডারস (এএইচআরডি)’ নামে এইচআর ডিফেন্ডারদের জোট গঠন।
- শামসুল আলম লিটন- আহবায়ক, আফজাল জামী- যুগ্ন আহবায়ক, জাকির হোসাইন- সদস্য সচিব।
কমিউনিটি নিউজ ডেস্ক: গত ১৩ নভেম্বর সোমবার বিকাল ৫:৩০ মিনিটে হোয়াইটচ্যাপেল সেন্টারের ‘হরপ্পা’ সেমিনার কক্ষে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মানবাধিকার কর্মীদের এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মানবাধিকার সংগঠন ‘সাপোর্ট লাইফ ইউকে’র উদ্যোগে ‘ভয়েস ফর জাস্টিস অ্যান্ড ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশিস’, ‘সাউথ এশিয়ান পলিসি ইনিশিয়েটিভ’, ‘Global Human Rights & Environmental Defenders Forum (বিশ্ব মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষাকারী ফোরাম)’, ‘বাংলাদেশ ওয়াচ’, ‘Beyond Barriers International’,’নিরাপদ বাংলাদেশ চাই ইউকে’, ‘ইক্যুয়াল রাইটস ইন্টারন্যাশনাল (ইআরআই)’, ‘সলিডারিটি ফর হিউম্যান রাইটস ইউকে’, ‘ইউনিভার্সাল ভয়েস ফর জাস্টিস’, ‘ফাইট ফর রাইটস ইন্টারন্যাশনাল’, ‘হিউম্যানিটি ক্লাব ইউরো বিডি’, ‘জাস্টিস ফর বাংলাদেশ’, ‘অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরাম ইউকে’, ‘রাইটস কনসার্ন’, ‘রাইটস মুভমেন্ট ইউকে’, ‘স্ট্যান্ড ফর বাংলাদেশ’, ‘পিস ফর বাংলাদেশ’, ‘সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি এন্ড গুড গভর্নেন্স’, ‘ভয়েস ফর জাস্টিস এন্ড রাইট’, ‘ভয়েস ফর জাস্টিস অ্যান্ড হোয়াইট পিজিয়ন’ ও ‘ইউনিভার্সাল ভয়েস ফর হিউম্যান রাইট’সহ ২২টি মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করছেন এমন মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে এই গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন ‘সাপ্তাহিক সুরমা’ সম্পাদক ও ‘সাপোর্ট লাইফ ইউকে’র প্রেসিডেন্ট শামসুল আলম লিটন, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ‘ভয়েস ফর জাস্টিস অ্যান্ড ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশিস’ এর সভাপতি ডাঃ হাসানাত হোসেন, এমবিই।
বৈঠকে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের ভোটাধিকারহরণসহ নানান মৌলিক অধিকারহরণের পাশাপাশি নাগরিকদের গুম করে ফেলার এক নিষ্ঠুর সংস্কৃতি চালু হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা পরবর্তীতে যে তথ্য দিয়েছেন, তা বিশ্লেষণ করা জানা গেছে যে সরকারের নির্দেশে এসব বিরোধী মতের লোকদের গুমের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জড়িত পড়েছে। কোনো কোনো গুমের ঘটনায় বাহিনীর নির্ধারিত পোশাক পরে আসলেও, কিছু ঘটনায় সাধারণ পোশাকেই গুম করা হয়েছে। প্রকাশ্যে এসব গুমের জড়িতদের অত্যাধুনিক অস্ত্র ও পরিচয়পত্র বহন করতে দেখা গেছে। গুম থেকে ভাগ্যক্রমে ফেরত আসা ব্যক্তিরাসহ দেশের অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক গুমের সাথে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ জড়িত আছে। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদেস্যের সাথে মিলেমিশে তারা এ কাজ করছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ২০০৭ সাল থেকে ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন। গুম হওয়াদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৭৮ জনের লাশ পাওয়া গেছে। এছাড়া, ৮৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন ফেরত এসেছেন। কিন্তু, বাদবাকিদের সন্ধান আজও মেলেনি। নিখোঁজ এসব ব্যক্তির নাম অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস কমিশনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গুম হওয়া মানুষের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। ২০২১ সালের ১০ই ডিসেম্বরে রেব ও এর শীর্ষ সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুম ও ক্রসফায়ারসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ সরকারের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের মতো ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে তুলে নিয়ে যেসব স্থানে ভুক্তভোগীদের ‘গোপনে আটকে রাখা হয়’, সেগুলোর তালিকা প্রকাশ করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। গুমকে সরকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। একবিংশ শতাব্দীতে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে গুমের ঘটনা চলতে পারে না। বাংলাদেশে যেসব গুমের ঘটনা ঘটেছে তার স্বাধীন এবং সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে।
বৈঠকে বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ডিজিএফআই-এর গোপন কারাগার ‘আয়নাঘর’ সম্পর্কে জাতিসঙ্ঘের অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে একসাথে কাজ করার সুবিধার্থে সমন্বিত প্রচেষ্টায় একটি জোট গঠনের প্রস্তাব করেন। মানবাধিকার কর্মীদের ঐক্য এখন সময়ের দাবি বলেও তারা মত প্রকাশ করেন।
বৈঠকে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, ‘বাংলাদেশ ওয়াচ’ এর চেয়ার মেজর (অব:) আবু বক্কর সিদ্দিক ও ‘Beyond Barriers International’প্রেসিডেন্ট মেজর (অব:) জাকির হোসাইন বাংলাদেশে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গুমের শিকার হয়ে তাদের ভয়াবহ, নৃশংস ও মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। মেজর (অব:) জাকির হোসাইনের আড়াই বছর ও সাংবাদিক কাজলের প্রায় ৩শ’ দিনে “আয়নাঘরে” নির্যাতনের করুন কাহিনী শোনে সভায় উপস্থিত মানবাধিকার কর্মীগণ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।
এতে আরও বক্তব্য ও বিভিন্ন প্রস্তাব রাখেন ‘সাউথ এশিয়ান পলিসি ইনিশিয়েটিভ’ এর ডিরেক্টর ব্যারিস্টার আফজাল জামী, ‘Global Human Rights & Environmental Defenders Forum (বিশ্ব মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষাকারী ফোরাম)’ এর চেয়ারপার্সন ও ‘The United Bengal Movement’ (অবিভক্ত বাংলা আন্দোলন/অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন) এর আহবায়ক হাসনাত আরিয়ান খান, সাবেক কাউন্সিলর আয়েশা চৌধুরী, ‘নিরাপদ বাংলাদেশ চাই’ এর সভাপতি মুসলিম খান, ‘ইক্যুয়েল রাইটস ইন্টারন্যাশনাল’ এর সেক্রেটারি জেনারেল নওসিন মিয়া মোস্তারি সাহেব, ক্যাপ্টেন (অব:) তৌফিক, সাংবাদিক এনাম চৌধুরী, সাংবাদিক মিনহাজুল আলম মামুন, সাংবাদিক আহসানুল আম্বিয়া শোভন, সাংবাদিক খালেদ মাসুদ রনি, মাহমুদ হক ও রোকসানা হক তারিন প্রমুখ।
বৈঠক শেষে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ড. হাসনাত হোসেইন এমবিইকে পেট্রন, ‘সাপোর্ট লাইফ ইউকে’র প্রেসিডেন্ট শামসুল আলম লিটনকে আহবায়ক, ‘সাউথ এশিয়ান পলিসি ইনিশিয়েটিভ’ এর ডিরেক্টর ব্যারিস্টার আফজাল জামীকে যুগ্ন আহবায়ক ও ‘Beyond Barriers International’ প্রেসিডেন্ট মেজর (অব:) জাকির হোসাইনকে সদস্য সচিব করে ‘অ্যালায়েন্স অব এইচআর ডিফেন্ডারস (এএইচআরডি)’ নামে যুক্তরাজ্যে এইচআর ডিফেন্ডারদের একটি জোট গঠন করা হয়।
এখন থেকে দেশে আইনের শাসন ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য দায়ী অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিজস্ব প্রোগ্রামের পাশাপাশি সন্মিলিতভাবে এই জোটের ব্যানারে কাজ করবেন। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রদর্শনী, সেমিনার এবং সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করবেন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলিকে এর সাথে যুক্ত করবেন। এছাড়া মানি লন্ডারিং বন্ধেও তারা বিশ্ব সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করবেন।
‘অ্যালায়েন্স অব এইচআর ডিফেন্ডারস (এএইচআরডি)’ এর অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা হলেন- স্ট্রাটেজিক ও প্লানিং সেক্রেটারি মাহমুদ হক, মিডিয়া ও আইটি সেক্রেটারি রোকসানা হক তারিন, পাবলিক রিলেশন অ্যাফয়ার্স সেক্রেটারি নওসিন মোস্তারি ও প্রোগ্রাম সেক্রেটারি ক্যাপ্টেন (অব) তৌফিক প্রমুখ।