রংপুর নগরীতে নর্দার্ন মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতারণার প্রতিবাদে ও মাইগ্রেশনের দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত রংপুর-বুড়িরহাট-গঙ্গাচড়া সড়কের নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
এ সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষ।
এদিকে এই পরিস্থিতিতে নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ডা. খলিলুর রহমান ও নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারমান ড. তাসকিনুর রহমান শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান। পরে সোমবার বিকাল ৩টায় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে এসোড ট্রেনিং সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন।
খবর পেয়ে সেখানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসে তাদের অবরুদ্ধ করে অফিসের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে শ্লোগান দিতে থাকে। অবস্থা উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তারা সাংবাদিক সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করে লিখিত বক্তব্যের কপি সাংবাদিকদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজনকারীরা পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান।
অবশ্য পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তারা দুজনই অস্বীকার করে বলেন, প্রকৃত পক্ষে সাংবাদিকদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরার পর তারা নিরাপত্তার জন্য শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থিত না হয়ে সেখান থেকে বিকল্প পথে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, টানা ২৩ দিন ধরে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, রাজধানীতে গিয়ে মানববন্ধন ও রংপুরে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ, মানববন্ধন করে তাদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত পরিস্থিতির অবসানের জন্য নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। অনুমোদন না থাকার বিষয়টি গোপন রেখে নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলেজে তাদের বেআইনিভাবে ভর্তি করিয়ে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের শিক্ষা জীবন ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার করে জানান, রংপুর নগরীর বুড়িরহাট রোডের মেডিকেল পূর্বগেট এলাকায় অবস্থিত নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে শিক্ষক ও হাসপাতাল নেই। বাংলাদেশ মেডিকেল ডেন্টাল কাউন্সিল ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও ৩ শতাধিক দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে কলেজ চালালেও এখন পর্যন্ত অনুমোদন আনতে পারেনি।
ধার করা রোগী ও শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তাদের শিক্ষা জীবন ধ্বংস করছে কর্তৃপক্ষ, হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এ সমস্যা নিরসনে অন্য মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাইমিন আহমেদ ইমন বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।
তৃতীয় বর্ষের শাকিলা সৌরভ রিতু বলেন, টানা ২৩ দিন ধরে আন্দোলন ও দাবির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। আমাদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দাবি আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এদিকে দুপুর একটায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে সড়ক ছেড়ে দিতে আহ্বান জানালেও শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থানে অনড় থাকেন। একপর্যায়ে বেলা দেড়টার দিকে তারা সড়ক ছেড়ে পাশে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করেন।
আরপিএমপির সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) আলতাফ হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোনো ‘রেসপন্স’ করেননি। আপাতত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন। যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।