আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের বেশ কিছু ধারা বাতিল ও সংশোধন চেয়েছে।
সংস্থাটি বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশে লেখা একটি খোলা চিঠিতে সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে তুলনায় দেখা যাচ্ছে, এই অনুচ্ছেদে একটি ছাড়া সব অপরাধের বিষয় একই আছে। শুধু একটি পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা শুধু শাস্তির ক্ষেত্রে, অপরাধের ধরনে নয়।
সাইবার নিরাপত্তা আইনে আটটি অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি কমানো হয়েছে উল্লেখৈ করে সংস্থাটি বলেছে, দুটি অপরাধের ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের শাস্তি বাদ দেওয়া হয়েছে, তিনটি অপরাধের সর্বোচ্চ অর্থদণ্ড বাড়ানো হয়েছে এবং একই অপরাধ পরেও করলে বাড়তি সাজা বাতিল করা হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২৫ (মিথ্যা বা আপত্তিকর তথ্য প্রকাশ), ধারা ২৯ (মানহানিকর তথ্য প্রকাশ) এবং ধারা ৩১ (আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর শাস্তি) সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় অবিকৃত রয়েছে বলে পর্যালোচনায় উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি।
সংস্থাটি ২৫ ধারায় ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ণ’ করার মতো বিষয়ের কোনো ব্যাখ্যা না থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেছে। ২৯ ধারা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের বদলে শুধু জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
চিঠিতে অ্যামনেস্টি বলেছে, সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটার উপক্রম হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির অনধিক সাত বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা না থাকায় এই ধারার অপপ্রয়োগের ঝুঁকি থাকছে বলে মনে করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২১ (মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে প্রচারণা) এবং ধারা ২৮ (ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত) রয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারা সাইবার নিরাপত্তায় ৪২ ধারা হিসেবে অবিকৃত থাকার কথা উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, এ ধারায় কোনো অফিসে তল্লাশি, কম্পিউটার বা এ–জাতীয় যেকোনো যন্ত্র জব্দ, কোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি; এমনকি পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার করতে পারবে পুলিশ কর্মকর্তা।
নতুন সাইবার আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মতোই সাংবাদিকদের ভয় দেখানো, হয়রানি, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও ভিন্নমত দমনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতে পারে বলে মনে করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
চিঠিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সব মামলা ও বন্দিদের অনতিবিলম্বে বিনাশর্তে মুক্তি চেয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ সরকার সুপারিশগুলো আমলে নেবে আশা করছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনাল।