পর্ব এক (থাকা-খাওয়া অধ্যায়)
প্রশ্ন: সিলেটে আসার বেষ্ট টাইম কখন?
উত্তর: যেহেতু আবহাওয়া ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছে তাই স্পেশিফিক মাসের নাম না বলাই উত্তম। তবে বেষ্ট টাইম হল বর্ষার সিজন। বর্ষার একদম শুরুর দিকে নয় মাঝামাঝি অথবা বর্ষা শেষে। আমার কাছে বর্ষা শেষের দিকের টাইমটা বেষ্ট মনে হয়। আর শীতের সময় না আসাই উত্তম।
প্রশ্ন: কেন শীতে কি সমস্যা?
উত্তর: শীতে কোথাও পানি থাকেনা। সবুজ প্রকৃতিটা একটু মলিন থাকে। আর সিলেটে খুব শীত থাকে। কি দেখবেন?
প্রশ্ন: সিলেট যেতে চাই, ঢাকা বা বরিশাল থেকে কিভাবে যাব?
উত্তর: আপনার বাসা তথা এলাকা হতে সিলেটে আসার তথ্য আপনারই ভাল জানার কথা। এক্ষেত্রে আমি সিলেট থেকে বলে দিতে পারিনা যে কোন মাধ্যম (বাস/ট্রেন/বিমান) ভাল হবে। এই রকম প্রশ্ন আপনার এরিয়ার বড় ভাই বা ট্র্যাভেলারদের করতে পারেন।
প্রশ্ন: বাস কিংবা ট্রেন কোনটা দিয়ে আসলে ভাল হবে?
উত্তর: বাসে যদি আসেন তবে রিকোমেন্ড করি গ্রিন লাইন দিয়ে আসুন। তাদের সার্ভিস ভাল। এনা চড়তে চাইলে উপরওয়ালার নাম নিযে আসবেন। এসি বাসের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। গ্রিন লাইন ছাড়া অন্যগুলো এসি অফ করে দেয়। এটা নিয়ে মাঝ পথে সমস্যা হয়। আর ট্রেনে আসলে অবশ্যই পারাবত। আপনার টাইমিং এর সাথে মিল না হলেও মিল করে পারাবতে আসুন। আরামে আসবেন। নতুন ট্রেন।
প্রশ্ন:বাসে/ট্রেনে আসলে কোথায় নামতে হবে?
উত্তর:বাসে বা ট্রেনে আসলে আপনাকে কদমতলী নামতে হবে। ট্রেনের স্টেশন মাত্র একটা। সুতরাং আর অপশন নাই। আর বাসের ক্ষেত্রে তাদের কাউন্টার কদমতলীতে যেখানে সেখানেই আপনাকে নামিয়ে দিবে।
প্রশ্ন:বাস/ট্রেন থেকে নামার পর কিভাবে শহরে আসবো?
উত্তর:বাস বা ট্রেন থেকে নামার পর আপনি চাইলে রিক্সা (মানুষ ২ জন হলে) অথবা সি.এন.জি (মানুষ ৫ জন হলে) নিয়ে শহরে আসতে পারেন। যদি ক্লান্ত না হোন আর সাথে মেয়ে মানুষ না থাকে তবে হেটেও আসতে পারেন।
প্রশ্ন: রিক্সা/সি.এন.জি ভাড়া কত নিবে?
উত্তর: এই লেখা প্রকাশের তারিখ পযর্ন্ত রিক্সার ভাড়া ৩০/৪০ টাকা বন্দরবাজার। আর সি.এন.জি হল ৮০/১০০ টাকা বন্দরবাজার। যেহেতু এটা বাংলাদেশে সুতরাং সময়ের সাথে আপডেট হতে পারে।
প্রশ্ন: নতুন ব্রিজ/কিন ব্রিজ(পুরান ব্রিজ)/কাজিরবাজার ব্রিজ কোনটা দিয়ে আসবো?
উ: আপনি কদমতলী নামলে উপরের ৩টা ব্রিজের মধ্যে শুধু নতুন ব্রিজ এবং কাজিরবাজার ব্রিজ দিয়ে আসতে পারবেন সি.এন.জি নিয়ে। বতর্মানে কিন ব্রিজে সি.এন.জি বা বড় গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ। অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় ওই ব্রিজ দিয়ে নিতে পারে। আর রিক্সা দিয়ে আসতে চাইলে সাধারনত কিন ব্রিজ দিয়েই নিয়ে আসবে।
প্রশ্ন: আচ্ছা আমি যদি কম খরচে কদমতলী থেকে বন্দরবাজার যেতে চাই তবে কিভাবে যাব?
উত্তর: এক্ষেত্রে আপনার কাছে দু’টা অপশন আছে। এক- হয় একটু হেটে সুরমা নদীটা নৌকায় পার হওয়া। খরচ মাত্র ২ টাকা জনপ্রতি। দুই- কদমতলীতে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে লোকাল সি.এন.জির জন্য অপেক্ষা করা। ভাড়া মাত্র ১০ টাকা জনপ্রতি।
প্রশ্ন: আর যদি কদমতলী থেকে হেটে বন্দরবাজার আসতে চাই তাহলে কত সময় লাগতে পারে?
উত্তর: সবোর্চ্চ ১৫ মিনিট।
প্রশ্ন:যদি বিমানে আসি তবে?
উত্তর: বিমানে আসলে আপনাকে নামতে হবে বড়শালে। এটি সিলেট হতে প্রায় ৮ কি:মি দূরে অবস্থিত। ওখান থেকে সি.এন.জি নিয়ে আসতে হবে। যেহেতু বিমানে আসছেন সুতরাং ভাড়ার কথা জানতে চেয়ে লজ্জা দিবেননা প্লিজ 🙂
প্রশ্ন: ওকে আমি বন্দরবাজার আসলাম এবার থাকবো কোথায়?
উত্তর: সিলেটের বেশিরভাগ হোটেল হলে দরগার আশেপাশে দরগা হতে আম্বরখানা, তালতলা, কদমতলী। হোটেল চয়েজ করাটা নির্ভর করছে বেশ কিছু বিষয়ের উপর। এই যেমন আপনার সাথে পরিবার থাকলে এক অপশন। শুধু ব্যাচেলর হলে আরেক অপশন। টাকা খরচ করতে চাইলে এক অপশন। টাকা কম খরচ করতে চাইলে আরেক অপশন। তবে আমি কখনো কাউকে কদমতলীর হোটেলগুলিতে থাকার পরামর্শ দেইনা। ওইগুলো জবাই করে।
প্রশ্ন: যদি সবাই ছেলে হই আর কম খরচে থাকতে চাই?
উত্তর: যদি সবাই চির কুমার সংঘের মেম্বার হোন আর কম খরচে থাকতে চান তবে তালতলায় থাকতে পারেন। ওখানে ইষ্ট এন্ড নামের একটা হোটেল আছে। কম খরচে (জনপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০টাকা) থাকা যায়। আরো আছে হোটেল গুলশান, হোটেল বিলাশ। আশে পাশে আরো হোটেল আছে। একটু যাচাই করে নিবেন প্লিজ। তবে হোটেল সুফিয়া থেকে দূরে থাকবেন। ওটা একদম নিন্মমানের।
প্রশ্ন: কদমতলী থেকে কি তালতলায় সি.এন.জি বা রিক্সা নিয়ে আসা যায়না?
উত্তর: বন্দরবাজার আর তালতলা পায়ে হেটে মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্ব। আপনি কদমতলী থেকে বন্দরবাজার যে ভাড়ায় আসবেন ঠিক একই ভাড়ায় তালতলায়ও যেতে পারবেন। শুধু ড্রাইভারকে প্রথমে বন্দরবাজার না বলে তালতলা বলতে হবে এটাই।
প্রশ্ন: এই সব হোটেলে সেফটি কি রকম?
উত্তর: একটা কথা বলি ভাই। আপনি ভাল তো জগৎ ভাল। আপনি খারাপ হলে সব কিছু খারাপ। বেড়াতে এসে আকাম-কুকাম না করলে কোন সমস্যা নাই। তবে সতর্কতার জন্য দামী জিনিসগুলো সব সময় সাথে রাখবেন। সিলেটে ছিনতাই এর ভয় নাই বললে চলে।
প্রশ্ন: তালতলায় তো অনেক সিনেমা হল ! কোন সমস্যা??
উত্তর: সিনেমা হলগুলো রিক্সা ড্রাইভাইদের সম্পত্তি। ওরা মাঝেমাঝে মনের মাঝে তুমি, বনের মাঝে তুমি এই জাতীয় একটু ফিলিম দেখে। কোন সমস্যা নাই।
প্রশ্ন: আর যদি পরিবার নিয়ে আসি (সাথে মেয়ে মানুষ থাকে) অথবা একটু দামী হোটেলে থাকতে?
উত্তর: আমার পরামর্শ থাকে একটু ঘাটাঘাটি করে আসুন। আমি লোকাল মানুষ হোটেলে থাকার প্রয়োজন পড়েনা। সুতরাং আমার চেয়ে আপনার বন্ধুরাই (যারা সিলেট বেড়িয়ে গেছে) তারা ভাল বলতে পারবে। তারপরও যদি দু’একটার নাম জানতে চান তবে বলি মিরাবাজারের হোটেল সুপ্রিমের কথা কিংবা আম্বরখানার বিট্রানিয়া হোটেলের কথা। কিন্তু পারসোনালী আমি হোটেল সুপ্রিমের পক্ষে নই। কারন ওখানে আশেপাশে খাবার-দাবারের হোটেল নাই এবং তাদের হোটেলে খাবারের দাম আকাশছোয়া। বেষ্ট হয় জিন্দাবাজারের আশেপাশে কোথাও থাকতে পারলে। কেন জিন্দাবাজার? কারন কম দামে ভাল খাবারের হোটেলগুলো সবই জিন্দাবাজারে।
প্রশ্ন: স্বল্প খরচে এসি রুম নিতে চাইলে কোন হোটেলটি বেষ্ট হবে?
উত্তর: এক্ষেত্রে আমার সাজেশন হচ্ছে স্বল্প খরচের এসিওয়ালা হোটেলগুলোতে না থাকা। যদি রাতে কোনক্রমে বিদ্যুৎ চলে যায় তবে আপনার এসি অফ। এসি না চালিয়েও আপনাকে এসির চার্জ দিতে হবে। তাই ভাল মানের জেনারেটরওয়ালা (এসি ব্যকআপ দিতে পারে) এমন হোটেলে একটু দাম দিয়ে হলেও উঠবেন। অথবা বাহিরে বৃষ্টি হলে এমনিতেই রুম এসির মত হয়ে যাবে। তখন আপনি বাধ্য হবেন এসি বন্ধ করতে। সিলেটে কিন্তু রাতে বৃষ্টি বেশি হয়।
প্রশ্ন: থাকার জন্য বিভিন্ন রিসোর্টের নাম শুনা যায় ওইগুলি কিরকম?
উত্তর: পকেটে পয়সা থাকলে অবশ্যই ভাল। কম থাকলে শুনা কথায় কান দিবেননা। আপনার গ্রামের বাড়ি আর রিসোর্ট বাস্তব এবং কল্পনায় একই।
প্রশ্ন: যারা তালতলায় থাকবে তারা কোথায় খাবে?
উত্তর:তালতলা থেকে জিন্দাবাজার হেটে গেলে মাত্র ৫ মিনিট। যেহেতু আপনারা কুমার ভাই সুতরাং হেটে হেটে যান। রিক্সায় গেলে দু’জন ১০টাকা ভাড়া। আর কিছু কিন্তু পাবেননা।
প্রশ্ন: জিন্দাবাজারে কোথায় খাব?
উত্তর: আমি পারসোনালী হোটেল পানসীতে খাই। পাচ ভাই হোটেলটাও ভাল তবে পরিবেশটা তেমন ভাল নয়। সব ক্লাসের মানুষ ওখানে যায়। একটু খুলামেলা এবং পরিবার নিয়ে খেতে চাইলে পানসীতে খান।
প্রশ্ন: খাবার কি সব সময় পাওয়া যাবে?
উত্তর: ভোর থেখে রাত ১ টা পযর্ন্ত পাবেন। তবে রাত বেশি হলে খাবারের আইটেম কম হবে।
প্রশ্ন: খাবারের ক্ষেত্রে কি দিযে খেতে পারি?
উত্তর: এটা যদিও বাজেট নির্ভর ব্যাপার। তারপরও বলা যায় আপনার সকালটা শুরু হতে পারে পানসীর আখনী দিয়ে। দুপুরে সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস আর সাথে ভর্তা আইটেম। রাতে সহজপাচ্য কোন কিছু। সারাদিন যেহেতু মাংসই খেলেন সুতরাং মাছ ট্রাই করুন। 🙂 যদি হিন্দু হোন তবে ওসমানী মেডিকেলের ওখানে চলে যান। ইসকনের একটা রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে। খাবারের মান অসম্বভ ভাল। ওসমানী মেডিকেলের ডাক্তারটা সেখানে খায়। সুতরাং নো কমেন্ট।
পর্ব দুই (ব্যাকপ্যাকের ভিতর)
প্রশ্ন: সিলেটে মোবাইল অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্ক কি রকম? কোন সীম সাথে রাখবো?
উত্তর: সেই রকম। মাঝেমাঝে ইন্ডিয়ার নেটওয়ার্কও পাওয়া যায়। তবে টেলিটকে একটু সাবধান। বুঝেন তো সরকারী মাল। আর ইন্টারনেটের জন্য গ্রামীনফোন বেষ্ট এখানে।
প্রশ্ন: পাওয়ার ব্যাংক কি সাথে আনতে হবে?
উত্তর: সব জায়গায় বিদ্যুৎ বাবুর আনাগোনা আছে। সুতরাং পাওয়ার ব্যাংক না আনলেই চলে।
প্রশ্ন: কাপড়ের ক্ষেত্রে কোনটা ভাল হয়?
উত্তর: শীতের দিনে আসলে অবশ্যই গরম কাপড় নিয়ে আসবেন। আর বর্ষায় সহজে শুকায় এমন কাপড়। টি-শার্ট, মোবাইল প্যান্ট বেষ্ট চয়েস। ছেলে মানুষ তো তাই মহিলাদের ব্যাপারে নো কমেন্ট। 🙂
প্রশ্ন: জুতা কোনটি ভাল হবে?
উত্তর: রাবারের তৈরী জুতা হলে ভাল হয়। যেহেত বেশির ভাগ পযর্টনস্পটে পানি সুতরাং কেডস না নেওয়াই উত্তম।
প্রশ্ন:বর্ষায় ছাতা/রেইনকোর্ট কি সাথে রাখতে হবে?
উত্তর: অবশ্যই। ব্যাকপ্যাকটাও ওয়াটারপ্রুফ হলে আরো ভাল হয়।
প্রশ্ন: পাহাড়ি এরিয়া মশা কি রকম? ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গু?? ওডোমসের দরকার পড়ে কি?
উত্তর: সিলেটের মশারা একটু ভাল। শুধু রক্ত খায়। 😉 ওইসবের তেমন একটা চিন্তা নাই।
পর্ব তিন (ঘুরাঘুরি-শহরের ভিতর)
প্রশ্ন: শহরের ভিতর কোথায় বেড়ানো যায়?
উত্তর:১. সেলফী ব্রিজ (কাজির বাজার সেতু)
অবস্থান:শেখঘাট জিতু মিয়ার পয়েন্ট
কমেন্ট:দিনে এবং রাতে নিরাপদ
শহর থেকে যাতায়ত: রিক্সা
আরো দেখবেন: জিতু মিয়ার বাড়িএবং আমার বাসাও দেখতে পারবেন 🙂 যদিও সেটা ভাড়া করা। 🙁
২. কীন বিজ্র (পুরান পুল)
অবস্থান:বন্দরবাজার
কমেন্ট:নিরাপদ তবে রাতে না যাওয়া ভাল
শহর থেকে যাতায়ত: রিক্সা
আরো দেখবেন: সার্কিট হাউজ, আলি আমজাদের ঘড়ি।
৩. হাসন রাজা মিউজিয়াম
অবস্থান:জিন্দাবাজার
কমেন্ট: সকাল ৯ টা থেকে ৫ পযর্ন্ত খুলা থাকে। রবিবার বন্ধ।
শহর থেকে যাতায়ত: রিক্সা
৪. ওসমানী যাদুঘর
অবস্থান: ধোপাদিঘীরপার
কমেন্ট:
শহর থেকে যাতায়ত: রিক্সা
৫. মালনী ছড়া এবং লাক্কাতুরা চা বাগান
অবস্থান:
কমেন্ট:দিনে যাওয়া ভাল
শহর থেকে যাতায়ত: সি.এন.জি
৬. শাহজালালের মাজার
অবস্থান:দরগা গেইন
কমেন্ট:ফকির এবং পকেটমার হতে সাবধান
শহর থেকে যাতায়ত: রিক্সা
৭. শাহপরানের মাজার
অবস্থান:শাহপরান
কমেন্ট:ফকির এবং পকেটমার হতে সাবধান
শহর থেকে যাতায়ত: সি.এন.জি/বাস/লেগুনা
৮. টিলাগড় ইকো পার্ক
অবস্থান: আলুরতল
কমেন্ট:নিরাপদ তবে বনের ভিতর না যাওয়া উত্তম। রাতে যাবেননা।
যাওয়ার পথে পড়বে: সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।
শহর থেকে যাতায়ত: রিক্সা /সি.এন.জি
9. শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়
অবস্থান:আখালিয়া
কমেন্ট:
শহর থেকে যাতায়ত: সি.এন.জি
প্রশ্ন: আচ্ছা এই জায়গায় যেতে কত সময় লাগবে?
উত্তর: এটা নির্ভর করছে আপনি শহরে কোথায় থাকবেন বা আছেন সেটার উপর। দয়া করে হোটেলের ম্যানেজারকে এই প্রশ্নটা করুন।
প্রশ্ন: একদিনে কি ওইসব জায়গায় বেড়ানো সম্ভব?
উত্তর: হ্যাঁ সম্ভব।
পর্ব চার (কেনাকাটা-শহরের ভিতর )
প্রশ্ন: সিলেট শুনলাম মনিপুরিরা থাকে। আচ্ছা তাদের তৈরী কাপড় কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর: লামাবাজার পয়েন্টেই অনেক মনিপুরি মার্কেট আছে। সেখানে দেখতে পারেন। একটু দামাদামি করে নিবেন।
প্রশ্ন: বন্দরবাজার থেকে কেমন করে যেতে হয় সেখানে?
উত্তর: সিলেট শহরটা খুব ছোট। চাইলে বন্দরবাজার/তালতলা থেকে হেটে যেতে পারবেন। সময় লাগবে ১৫ মিনিট। আর রিক্সায় যেতে চাইলে ১০ মিনিট। ভাড়া পড়বে ১৫ টাকা। সি. এন.জিতে ৫ থেকে ৭ মিনিট ভাড়া ১০ টাকা।
প্রশ্ন: যদি এমনি কাপড় কিনতে চাই তবে কোথা থেকে কিনবো?
উত্তর: জিন্দাবাজার বা নয়া সড়ক চলে যেতে পারেন। ওই দুটো জায়গাই কাপড় কেনার জন্য বেষ্ট প্লেস। আডং হচ্ছে নয়াসড়ক।
প্রশ্ন: জিন্দাবাজার বা নয়াসড়ক যেতে কত সময় আর কত টাকা লাগবে?
উত্তর: বন্দরবাজার থেকে জিন্দাবাজার হেটে হেটে যাবেন। ৪/৫ মিনিট লাগবে। আর নয়াসড়ক যেতে চাইলে রিক্সা নিয়ে যেতে হবে। ভাড়া পড়বে ২০ টাকা।
প্রশ্ন: মোবাইল এক্সেসরিজ কিনবো কোথা থেকে?
উত্তর: বন্দরবাজার করিম উল্লাহ মার্কেট থেকে।
প্রশ্ন:কম্পিউটার এক্সেসরিজ কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর: জিন্দাবাজার প্ল্যানেট আরাফ মার্কেট।
প্রশ্ন: সিলেটি সাতকরা/কমলা/আনারস/লেবু কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর: বন্দরবাজার পাবেন সব।
প্রশ্ন: সিলেটি চা-পাতা কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর: যদি কোন বাগানে ম্যানেজার বা কর্মচারীআপনার পরিচিত হয় তবে ভাল চা-পাতা তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। লোকাল মার্কেটে নিন্মমানের চা-পাতা পাওয়া যায়। ওইগুলো আমরা কিনিনা।
প্রশ্ন: সিলেটে ভাল রেইনকোর্ট বা ছাতা কোথায় কিনতে পাওয়া যায়?
উত্তর: মহাজনপট্টিতে পাবেন। বন্দরবাজার গিয়ে মহাজনপট্টি কোথায় তা যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে দিবে।
পর্ব পাঁচ (ঘুরাঘুরি – শহরের বাহিরে)
সিলেটের শহরের বাহিরে বের হবার আগে আমরা জেনে নেই সিলেট বিভাগটা মাত্র চারটা জেলা নিয়ে গঠিত। সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার। না আমরা এখনো সিলেটে বাহিরে কোথাও যাচ্ছিনা প্রথমে সিলেট জেলার ভিতরই থাকবো কিন্তু শহরের বাহিরের যাচ্ছি। তো ভয়ে কিছু নাই। প্রথমে সিলেট জেলাটা ঘুরে নেই তারপর অন্য জেলার পালা।:)
প্রশ্ন: সিলেট শহরের বাহিরে সিলেট জেলায় আর কি কি আছে দেখার মত?
উত্তর: ১. লালাখাল২. জাফলং৩. রাতারগুল৪. বিছনাকান্দি৫. লোভাছড়া৬. পাংথুমাই
লালাখাল
প্রশ্ন: লালাখাল যাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
উত্তর: শীতের সময় হচ্ছে লালাখাল যাওয়ার উপযুক্ত সময়। পানির কালার কম্বিনেশনটা তখন ভাল দেখা যায়। চাইলে অন্য সময়ও যেতে পারেন।
প্রশ্ন: সিলেট শহর থেকে লালাখাল যেতে কত সময় লাগতে পারে?
উত্তর: এটা নির্ভর করবে আপনার গাড়ির উপর। সাধারনত ১ ঘন্টা।
প্রশ্ন: সিলেট শহর থেকে কিভাবে লালাখাল বেড়াতে যাব?
উত্তর: সাধারন সি.এন.জি/লেগুনা/বাসে/প্রাইভেট গাড়িতে করে যেতে পারেন। তবে আমি বাসে যাওয়াটাকে বেষ্ট মনে করি যদি আপনার সাথে পরিবার না থাকে।
প্রশ্ন: লালাখাল যাবার সি.এন.জি/লেগুনা/বাস কোথায় পাব?
উত্তর: বন্দরবাজার শিশুপার্কের সামনে থেকে সি.এন.জি আর লেগুনা পাবেন। সি.এন.জি নিলে রিজার্ভ করে নিতে হবে। লেগুনায় জনপ্রতি যেতে পারবেন। আর বাস ছাড়ে কদমতলী থেকে। আপনি চাইলে সোবহানীগাট থেকে বাসে উঠতে পারবেন।
প্রশ্ন: সোবহানীগাট জায়গাটা কোথায়?
উত্তর: বন্দরবাজার থেকে রিক্সা ভাড়া ১০ টাকা। আর সি.এন.জি তে করে আসলে মাত্র ৫/১০ টাকা জনপ্রতি। সোবহানীগাট জায়গা বন্দরবাজার শিশুপার্কে একটু সামনে। আপনি চাইলে বন্দরবাজার থেকে হেটে হেটেও যেতে পারেন। হেটে গেলে সময় লাগবে ৫ মিনিট।
প্রশ্ন: লালাখাল গিয়ে নৌকা কোথায় পাব?
উত্তর: গাড়ি যেখানে নামিয়ে দিবে সেখানেই নৌকা পাবেন। জায়গাটাকে সারিগাট বলে।
প্রশ্ন: কত সময়ের জন্য নৌকা ভাড়া করবো?
উত্তর: সারাদিন যদি সেখানে কাটাতে চান তবে সারাদিনের জন্য। আর যদি পাশাপাশি জাফলং দেখতে চান তবে ৩/৪ ঘন্টার জন্য।
প্রশ্ন: আচ্ছা নৌকা ভাড়া কত হতে পারে?
উত্তর: এটা নির্ভর করছে সময়ের উপর।অর্থাৎ কত সময় আপনি সেখানে থাকবেন। যেকোন সময় তাদের ভাড়া চেঞ্জ হয় তাই আশে পাশের মানুষের সাথে একটু কথা বলে কনফার্ম হয়ে নিবেন। যেদিন বেশি পযর্টক থাকে সেদিন বেশি ভাড়া দাবী করে।
প্রশ্ন: যদি একা যাই তবে নৌকা রিজার্ভ না করে কি যাওয়ার কোন ব্যবস্থা আছে?
উত্তর: না, নাই। তবে ভাগ্য ভাল হলে অন্যগ্রুপের সাথে জয়েন করে যেতে পারেন।
প্রশ্ন: যদি বাসে করে লালাখাল যাই তবে আসার সময় কি গাড়ি পাবো?
উত্তর: অবশ্যই পাবেন।
প্রশ্ন: লালাখাল খেকে জাফলং যেতে কত সময় লাগবে?
উত্তর: এক ঘন্টা।
প্রশ্ন: লালাখালে কি খাওয়ার কোন ব্যবস্থা আছে?
উত্তর: না নাই। তবে যাওয়ার পথে একটা রিসোর্ট পড়ে ওখানে খাওয়া যেতে পারে। ওটা অবশ্য বড়লোকদের সম্পত্তি। এক কাপ চায়ের দামই ৫০ টাকার বেশি।
প্রশ্ন: লালাখালে গিয়ে কি চা-বাগান দেখা যায়?
উত্তর: হ্যাঁ দেখা যায়। নৌকার মাঝিকে বললে দেখিয়ে নিয়ে আসবে।
প্রশ্ন: জায়গটা কি সেইফ?
উত্তর: সেইফ।
প্রশ্ন: লালাখাল থেকে কেনার মত কিছু আছে নাকি?
উত্তর: না ওখানে কিছু পাবেননা।
প্রশ্ন: লালাখালে কোন বিষয় থেকে সাবধান থাকতে হবে?
উত্তর: চোরাবালী আর নৌকার মাঝি। নৌকার মাঝির সাথে ভাল করে কথা বলে নিয়ে যাবেন। যেহেতু আপনার রাস্তা সম্পর্কে আইডিয়া নাই সেহেতু অর্ধেক রাস্তায় নিয়ে বলতে পারে এটাই লালাখাল নেমে পড়ুুন। আর যাওয়ার সময় খাবার পানি নিয়ে যাবেন।
জাফলং
প্রশ্ন: জাফলং কখন গেলে ভাল হয়?
উত্তর: বর্ষার মাঝামাঝি অথবা বর্ষার পরে যেতে পারেন। তবে শীতের শেষে পানি একদম থাকেনা বললে চলে। তাই শীতের শেষে যাবেননা।
প্রশ্ন: সিলেট শহর থেকে জাফলং যেতে কত সময় লাগতে পারে?
উত্তর: মাত্র ২ ঘন্টা।
প্রশ্ন: সিলেট শহর থেকে কিভাবে জাফলং বেড়াতে যাব?
উত্তর: সাধারন সি.এন.জি/লেগুনা/বাসে/প্রাইভেট গাড়িতে করে যেতে পারেন। তবে আমি বাসে যাওয়াটাকে বেষ্ট মনে করি যদি আপনার সাথে পরিবার না থাকে। বিরতীহীন বাস পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: জাফলং যাবার সি.এন.জি/লেগুনা/বাস কোথায় পাব?
উত্তর: বন্দরবাজার শিশুপার্কের সামনে থেকে সি.এন.জি আর লেগুনা পাবেন। সি.এন.জি নিলে রিজার্ভ করে নিতে হবে। লেগুনায় জনপ্রতি যেতে পারবেন। আর বাস ছাড়ে কদমতলী থেকে। আপনি চাইলে সোবহানীগাট থেকে বাসে উঠতে পারবেন।
প্রশ্ন: সোবহানীগাট জায়গাটা কোথায়?
উত্তর: বন্দরবাজার থেকে রিক্সা ভাড়া ১০ টাকা। আর সি.এন.জি তে করে আসলে মাত্র ৫/১০ টাকা জনপ্রতি। সোবহানীগাট জায়গা বন্দরবাজার শিশুপার্কে একটু সামনে। আপনি চাইলে বন্দরবাজার থেকে হেটে হেটেও যেতে পারেন। হেটে গেলে সময় লাগবে ৫ মিনিট।
প্রশ্ন: বাসের ভাড়া কত টাকা জনপ্রতি?
উত্তর: যেহেতু এটা সময়ের সাথে আপডেট হয় তাই আজকের ভাড়া হয়তো আগামীকাল নাও থাকতে পারে এটা মাথায় রাখতে হবে। তবে বর্তমানে ১০০ টাকার ভিতরে আছে।
প্রশ্ন: জাফলং এ কি থাকার ব্যবস্থা আছে?
উত্তর: আছে। অনেক হোটেল পাবেন সেখানে। তবে শহরের তুলনায় ওই হোটেলগুলো দাম বেশি হবে এবং মান কম হবে। খরচ কমাতে চাইলে শহরে ব্যাক করে থাকাটাই বেষ্ট। আর থাকতে চাইলে মামার দোকানের ওখানে কোন হোটেলে থাকবেন। একদম পযর্টন স্পটের কাছাকাছি হোটেলগুলো গলাকাটা দাম রাখে। তবে অবশ্যই যাচাই করবেন।
প্রশ্ন: জাফলং এ খাবার ব্যবস্থা কেমন?
উত্তর: তেমন একটা ভাল নয়। বিশেষ করে মামার দোকানের আশেপাশে তেমন একটা ভাল রেস্টুরেন্ট পাবেননা।
প্রশ্ন: জাফলং গিয়ে নৌকা কোথায় পাব?
উত্তর: মেইনস্পটে নৌকা পাবেন।
প্রশ্ন: কত সময়ের জন্য নৌকা ভাড়া করবো?
উত্তর: সারাদিন যদি সেখানে কাটাতে চান তবে সারাদিনের জন্য। এটা আপনার উপর নির্ভর করছে। তবে আমি ২ ঘন্টার বেশি সেখানে থাকতে চাইবোনা।
প্রশ্ন: আচ্ছা নৌকা ভাড়া কত হতে পারে?
উত্তর: এটা নির্ভর করছে সময়ের উপর।অর্থাৎ কত সময় আপনি সেখানে থাকবেন। যেকোন সময় তাদের ভাড়া চেঞ্জ হয় তাই আশে পাশের মানুষের সাথে একটু কথা বলে কনফার্ম হয়ে নিবেন। যেদিন বেশি পযর্টক থাকে সেদিন বেশি ভাড়া দাবী করে।
প্রশ্ন: আমি যদি নৌকা রিজার্ভ না করে যেতে চাই তবে কি যেতে পারবো?
উত্তর: হ্যাঁ পারবেন। তবে একটু সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে। অথবা অন্য গ্রুপের সাথেও যেতে পারবেন।
প্রশ্ন: চাইলে কি আমি রাতে জাফলং থেকে ব্যাক করতে পারবো?
উত্তর: হ্যাঁ পারবেন। গাড়ি পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: জাফলং যাবার পথে আমি আর কি কি দেখতে পাবো?
উত্তর: শাহ পরানের মাজার, লালাখাল, তামাবিল অত:পর জাফলং। তবে একসাথে একদিনে সবকিছু দেখতে চাইলে আপনাকে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে যেতে হবে। বাস থেকে তো আর বলবেনা ভাই তামাবিল এসে পড়ছি নেমে বেড়িয়ে আসুন জাষ্ট যাওয়ার পথে পড়বে আরকি।
প্রশ্ন: শুনেছি জাফলং এ নাকি ইন্ডিয়ার জিনিসপত্র পাওয়া যায় সত্য নাকি?
উত্তর: হ্যাঁ ইন্ডিয়ান পন্য পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: জাফলং এ কোন বিষয় থেকে সাবধান থাকতে হবে?
উত্তর: এক- বিশেষ করে মামার দোকান থেকে মেইনস্পটে যেতে আপনাকে গাড়ি অফার করবে। যেহেতু আপনি প্রথমবার যাচ্ছেন তাই দূরত্ব জানা নাই। ওরা ২০০/৩০০ টাকা দাবী করতে পারে। ভুলেও গাড়ি নেওয়ার দরকার নাই। হেটে যাবেন। রাস্তা মাত্র কয়েক মিনিটের।
দু্ই- সন্ধার সময় স্পটে অনেকে ইন্ডিয়ান মদ কেনার জন্য বলতে পারে। ভুলেও তাদের সাথে কথা বলতে যাবেননা। এইসব মদ খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার রেকর্ড আছে। জাফলং এসে আত্মহত্যা করতে যাবেননা।
তিন- চোরাবালী হতে সাবধান। বালি দেখে সেখানে গিয়ে লাফালাফি করবেননা। কোথায় চোরাবালী আছে কেউ কিন্তু সেটা জানেনা।
চার- সাতার না জানলে পানিতে নামবেননা। উপর থেকে পানিকে ভদ্র এবং নিরীহ মনে হলেও নিচে পানির অনেক স্রোত। পাথরগুলো পিচ্ছিল হওয়ায় সেখানে দাড়ানো মুশকিল। সুতরাং সাবধান।
পাঁচ- পযর্টন স্পটের হোটেলে খাবার আগে দাম যাচাই করে নিবেন। ওরা অনেক খাবারকে লোকাল বলতে পারে। বাস্তবে সেখানে লোকাল তেমন কিছু পাওয়া যায়না। মাছ,মাংস সবকিছু সিলেট থেকে কেনা। বেষ্ট হয় মামার দোকানের আশেপাশের হোটেলে খাওয়া।