বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: নেত্রকোনার হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরীতে এক সময় প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত দেশীয় মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। বিষ প্রয়োগে মাছ ধরা, জলাশয় শুকানো, নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার ও প্রজনন মৌসুমে নির্বিচারে শিকার—এসব কারণে হাওরের মৎস্যসম্পদ ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে।
খালিয়াজুরী উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখানে উৎপাদিত মাছ ও শুটকির পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন, যা পরের বছর নেমে আসে ১৯ হাজার ৭৪৯.৯৩ মেট্রিক টনে। ফলে উৎপাদন কমেছে প্রায় ৭৩ মেট্রিক টন এবং ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মাছের।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, মাছের প্রজনন ক্ষেত্র রক্ষায় উপজেলার পাঁচটি জলাশয়কে অভয়াশ্রম ঘোষণার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অভয়াশ্রম অনুমোদন হলে সেখানে মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা হবে।
স্থানীয় জেলেরা বলছেন, হাওরের মাছের পরিমাণ দ্রুত কমছে। খালিয়াজুরী সদরের জেলে পতাকী বর্মন বলেন, “আগে দিনে ২০-৩০ কেজি মাছ ধরতাম, এখন পাই ৫-৭ কেজির বেশি না। অনেকে বিষ ছিটিয়ে মাছ ধরে—এতে মাছও মরছে, হাওরের প্রাণও শেষ হয়ে যাচ্ছে।”
জেলেদের পাশাপাশি আড়ৎদাররাও ক্ষতির মুখে। খালিয়াজুরী বাজারের আড়ৎদার আক্তার হোসেন তালুকদার বলেন, “আগে প্রতিদিন মণের পর মণ মাছ বিক্রি হতো, এখন এক মণও আসে না। বিষ দিয়ে ধরা মাছ বিক্রি বন্ধ না হলে এই ধ্বংস ঠেকানো যাবে না।”
স্থানীয় সাংবাদিক হাবিবুল্লাহ জানান, নিষিদ্ধ উপায়ে মাছ ধরলেও কার্যকর আইনি ব্যবস্থা হয় না এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতেও উদ্যোগ নেই।
খালিয়াজুরীর জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে প্রজনন ক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান কেষ্টু। তিনি বলেন, “জলমহাল ইজারা দিয়ে সরকার কোটি টাকা রাজস্ব নেয়, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয় না।”
উপজেলা ভূমি অফিস জানায়, খালিয়াজুরীতে ৭১টি সরকারি জলমহালের মধ্যে ৪৭টি ইজারা দিয়ে গত অর্থবছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাদির হোসেন শামীম বলেন, “মাছ ধরায় আইন ভঙ্গের খবর পেলেই প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। জলাভূমি খননের বিষয়টি নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বিবেচনার দাবি রাখে।”
বর্তমানে খালিয়াজুরীর মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হয়। কিন্তু উৎপাদন কমতে থাকলে প্রভাব পড়বে বাজার ও জেলেদের জীবিকায়। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যেতে পারে হাওরের দেশীয় মাছের ঐশ্বর্য।