লন্ডন, ১০ জুলাই- যুক্তরাজ্যে মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার এগারো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা দিয়েছে মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন (এমসিএ)। যুক্তরাজ্যেঅবস্থানরত মুসলিম সম্প্রদায়ের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা এবং সমাজের বৃহত্তর কমিউনিটির মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের কাজ করে যাওয়ার মাধ্যমেমানবিক অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদেরকে এই বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়েছে। ব্রিটেনের মুসলমান কমিউনিটি থেকে অমুসলিমদের প্রশংসাসূচক এ ধরনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দানের উদ্যোগ খুবই বিরল।
গত ৯ জুলাই বুধবার পূর্ব লন্ডনের রয়্যাল রিজেন্সি হলে অনুষ্ঠিত ২য় মুসলিম কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ অনুস্টিত হয়। এমসিএ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানকে ব্রিটেনে ধর্মীয় সম্প্রীতির উন্নয়ন ও সংরক্ষণ এবং কমিউনিটির বন্ধনকে সুদৃঢ়করণে একটি মাইলফলক উদ্যোগ হিশেবে দেখা হচ্ছে। ব্রিটেনের বৃহৎ মুসলিম কমিউনিটি সংগঠনএমসিএ’র দ্বিতীয় এই উদ্যোগে এমন সব ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানানো হয়েছে যারামুসলিম না হয়েও মুসলমানসহ সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছিলেন সোচ্চার, যারা মানুষের মানবিক অধিকার রক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় অধিকারকে উচ্চাসনে রেখে একে-অন্যের প্রতি সহমর্মী হয়ে একটি সম্প্রীতিপূর্ণ ওগতিশীল সমাজ গঠনের জন্য এক অনুসরণীয় অবদান রেখেছেন।
জাঁকজমকপূর্ণ এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য, মেয়র, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, কাউন্সিলার, সাংবাদিকসহ কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা উপস্থিতছিলেন।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই এমসিএ এর সেন্ট্রাল প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ মেহমানদেরকে এমন উদ্যোগে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানকে সাফল্যমন্ডিত করতে এগিয়ে আসায় সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই উদ্যোগ প্রেরণা পেয়েছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ঐতিহ্য থেকে, যিনি বলেছিলেন, যে মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানায়না, সে আল্লাহকেও কৃতজ্ঞতা জানায় না। তিনি আরো বলেন, আমরা চাই সমাজে যে যেখানে আছেন, তারা যেন বুঝেন, সম্প্রীতির জন্য কাজ করলে আমরা তাদের পাশেথাকি।
বিভিন্ন কমিউনিটি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় এক হাজার অতিথি অনুষ্ঠানেঅংশগ্রহন করেন। এবছর কমিউনিটি কোহেশন, এনগেজমেন্ট, শিক্ষা, সমাজকল্যাণ, ন্যায়বিচার এবং আজীবন সম্মাননা এমন ৬টি বিভাগ থেকে মোট ১১ জনকে সম্মাননাদেয়া হয়।
শিক্ষা ও উন্নয়নে বিজয়ী হয়েছেন অধ্যাপক ফ্রান্সিস থমাস ডেভিস, বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিজিটিং ফেলো। দ্বিতীয় স্থান অধিকারী অধ্যাপক পল রেনল্ডস, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।
কমিউনিটি কোহেসন এ বিজয়ী হয়েছেন ডঃ ক্রিস অ্যালেন, শিক্ষাবিদ এবং নীতিবিশেষজ্ঞ। দ্বিতীয় স্থান অধিকারী অলিভার ম্যাকটার্নান, মধ্যস্থতাকারী এবং ফরোয়ার্ড থিঙ্কিংয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
কমিউনিটি এনগেজমেন্ট এ বিজয়ী হয়েছেন মার্ক এরিরা-গায়ার, স্বেচ্ছাসেবী, ধর্মীয় এবং সম্প্রদায়িক নেতা এবং প্রাক্তন কাউন্টি কাউন্সিলর। দ্বিতীয় স্থান অধিকারী কার্ল অ্যারিন্ডেল, মিডিয়া কর্মী ও ইসলাম চ্যানেলের আন্তর্জাতিক এবং কৌশলগত পরিচালক।
কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার এ বিজয়ী হয়েছেন অধ্যাপক ক্যাথি ম্যাসন, লেস্টারের মহামান্য করোনার। দ্বিতীয় স্থান অধিকারী ক্যাথলিন জ্যাকসন, লাফবারার কমিউনিটির স্থম্ভ।
ন্যায়বিচার এবং সমতা এ বিজয়ী হয়েছেন, ক্রিস নিনহাম, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রচারক এবং স্টপ দ্য ওয়ার কোয়ালিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। দ্বিতীয় স্থান অধিকারী ক্রিস ডয়েল, আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (CAABU) কাউন্সিলের পরিচালক। প্রতিটি ক্যাটাগরিতে বিজয়ীরা পেয়েছেন £২০০০ পাউন্ডের চেক ও ট্রফি, আর দ্বিতীয় স্থান অধিকারীরাও পেয়েছেন ১০০০ পাউন্ডের চেক। এ অর্থ তারা তাদের পছন্দের চ্যারিটিকে দান করতে পারবেন।
পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বলেন, এই পুরষ্কার আমাদের এবং আমরা যে কমিউনিটিতে বাস করি তাদের জন্য অনেক কিছু। সম্প্রীতি আর সহমর্মিতার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হয়তো সমাজকে এগিয়ে নিতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে সকলেই মনে করেন।
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য রাখেন এমসিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল মতিন চৌধুরী এবং অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর দেলওয়ার হোসাইন খান। প্রেস বিজ্ঞপ্তি