ঢাকা অফিস- ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখে লাখো নেতাকর্মীদের নিয়ে লংমার্চ করেছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। আখাউড়া সীমাšেত সমাবেশ করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। এতে নেতারা ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মধ্য দিয়ে ভারতের আধিপত্যকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।
নেতারা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কোনো দেশের প্রভুত্ব মেনে নেয়নি, ভারতের প্রভুত্বও মেনে নেবে না এবং আগামী দিনেও মেনে নেবে না। দেশ নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করতে চাইলে তা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কর্মীরা প্রতিহত করবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নেতারা।
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই-কমিশনে হামলা, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা, ভারতীয় মিডিয়ায় অপপ্রচার ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বুধবার ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ করেছে তিন সংগঠন। সকাল ৯টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু হয়ে পল্টন-ফকিরাপুল-ইত্তেফাক মোড় হয়ে ফ্লাইওভার হয়ে সাইনবোর্ড-চিটাগং রোড-কাঁচপুর মোড়-তারাবো-বরফা-ভুলতা, গাউছিয়া-চনপাড়া, মাধবদী-পাঁচদোনা- সাহেপ্রতাব, ভেলানগর-ইটখোলা-মারজাল-বারুইচা হয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় ভৈরব পৌঁছায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত পথসভা করে বিকেল সাড়ে ৩টায় আখাউড়া গাড়িবহর পৌঁছায়।
এদিকে লংমার্চের গাড়ি বহর ঢাকা থেকে বের হওয়ার পর সড়কের দু’পাশে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল। তারা হাত নেড়ে, ফুল ছিটিয়ে গাড়ি বহরকে স্বাগত জানান। খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, সিলেট, ভৈরব, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে তিন সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেল বহর নিয়ে লংমার্চে অংশগ্রহণ করেন। তারা জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং ফেস্টুন নিয়ে এই কর্মসূচিতে যোগ দেন। এ সময় ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ ভারতের দালালেরা- হুঁশিয়ার সাবধান’সহ ভারতবিরোধী নানা স্লোগান দেন তারা। লংমার্চে নেতাকর্মীদের হাতে নানা স্লোগান সংবলিত ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উড়াতে দেখা গেছে।
কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল ৭টা থেকে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে সকাল ৯টায় লংমার্চ শুরু হয়। সেখানে উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছি, এই স্বাধীনতা আমরা বিক্রি করে দেব? তিনি বলেন, ‘আজকে দিল্লির যারা সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী তারা মনে রেখো, তোমরা একজন ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসু লেডি ফেরাউনকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমর্থন দিয়েছিলে। আজকে ভারতের শাসকগোষ্ঠী গোটা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে সমালোচিত। অথচ ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। ওরা (ভারত) বাংলাদেশের মানুষের রক্তের যে তেজ, আত্মশক্তি, বিরত্ব এটা দিল্লীর শাসকরা বুঝতে পারেনি।’
পরে লংমার্চ নিয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় ভৈরব মোড়ে পৌঁছায় তিন সংগঠনের নেতারা। পৌনে ১টায় পথসভা শুরু হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এসএম জিলানী বলেন, ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা লংমার্চ করছি। ভারত নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গণআন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা, তার সকল দোসরদের আশ্রয় দিয়েছে। আপনাদের (ভারত) জানিয়ে দিতে চাই, এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ না। এই বাংলাদেশ সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার ও তারেক রহমানের বাংলাদেশের। এদেশের এক ইঞ্চির মাটির দিকে তাকালে সেই চোখ উপরে ফেলা হবে।
ভৈরব থেকে লংমার্চ নিয়ে বিকাল সাড়ে ৩টায় আখাউড়া সীমাšেত পৌঁছান নেতাকর্মীরা। ভারতে বাংলাদেশী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকার অবমাননা ও ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচারের প্রচারের প্রতিবাদে এদিন আগরতলা অভিমুখে ঢাকা-আখাউড়া লংমার্চ করে বিএনপি তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এতে লাখো নেতাকর্মীর ঢল নামে। আখাউড়া স্থলবন্দরের ট্রাক স্ট্যান্ডে সমাবেশ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়ে বিকাল ৫টায় শেষ হয়। আগরতলা সীমাšত থেকে ১০০ মিটার দূরে স্থলবন্দর মাঠে এই সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।