আসাম নিউজ ডেস্ক: প্রথমে আলফার পক্ষ থেকে আসামের বাঙালিদের হুমকি এরপর ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার পুজো প্যান্ডেলে ভাষা সন্ত্রাসীদের হামলা রাজ্যের বাঙালিদের মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি করলেও এখনো এসব নিয়ে নীরব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা সরকার।
এনিয়ে এবার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
এদিন বিডিএফ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের বাঙালিদের বিরুদ্ধে যেভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটছে তা রহস্যজনক এবং মনে হচ্ছে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এসব ঘটানো হচ্ছে।
তিনি বলেন যে প্রথমে ডিলিমিটেশন করে বাঙালিদের রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করা হল। এরপর ব্রহ্মপুত্র উপত্যাকায় খাস জমিতে বসবাসকারী হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে বাঙালিদের ভূমির অধিকার বসুন্ধরা এ্যপের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হল।
এরপর সারা রাজ্যের বাঙালিদের হুমকি দিল সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আলফা স্বাধীন,যদিও বরাক পৃথকীকরণের দাবির সাথে সারা রাজ্যের বাঙালির কোন সম্পর্ক নেই।
এরপর এবার পুজোয় বাংলা ভাষার ব্যানার ছিড়ল,প্যান্ডেলসজ্জাকে ভাংচুর করল ভাষা সন্ত্রাসীরা। অথচ এসব নিয়ে এখনো নীরব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা সরকার। তিনি বলেন তাহলে কি ধরে নিতে হবে যে সরকারের প্রচ্ছন্ন মদত ও অঙ্গুলিহেলনে এসব কর্মকাণ্ড চলছে ?
জয়দীপ বলেন যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কি তবে শুধু তথাকথিত ভূমিপুত্রদের প্রতিনিধি ? যে বাঙালি হিন্দুরা একচেটিয়া ভোট দিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতায় আনল, তাঁদের প্রতি কি তাঁর কোন দায়িত্ব নেই?
জয়দীপ এদিন আরো বলেন যে বাংলাদেশে এবার ৩২০০০ পুজো হয়েছে,যেখানে পশ্চিমবঙ্গে পুজোর সংখ্যা ছিল ৩৪০০০। প্রতিটি পুজোয় নিরাপত্তা দিতে পুলিশ,প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি নিজ দলের কর্মীদের পুজো পাহারা দেবার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।একটি ইসলামিক রাস্ট্রের বাসিন্দা হয়েও আনন্দে উদ্যমে পুজো কাটিয়েছেন বাংলাদেশের হিন্দুরা। কিন্তু একমাত্র আসামের ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে বাধ্য হল এই রাজ্যের সরকার,যে সরকার সনাতনী হিন্দুদের রক্ষক বলে নিজেদের জাহির করে। তাই হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রবাদের আড়ালে জাতিয়তাবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন যে এই সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য তা পরিষ্কার, এবং সেইজন্যই রাজ্যের বাঙালি হিন্দুদের নির্বিঘ্নে ধর্মাচরণের অধিকারও এই রাজ্যে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
জয়দীপ বলেন এভাবে হুমকি ও ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে আগামী নির্বাচনে বাঙালিদের শাসকদলকে ভোট দিতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যেই এভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন,যাতে বঞ্চনার বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভের প্রভাব ব্যালট বাক্সে না পড়ে তাই পরিকল্পিতভাবে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন রাজ্যের বাঙালিদের হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের দিকে প্রত্যাহ্বান ছুড়ে দিতে হবে,অন্যথা আগামীতে আমাদের অস্তিত্ব সংকট তৈরি হবে। তিনি বলেন যেসব বাঙালি অবস্থা গতিকে অসমিয়া নিজ মাতৃভাষা লিখিয়েছিলেন তাঁরা আবার বাংলায় ফিরে আসুন,কারণ তাঁতে আখেরে কিছুই লাভ হয়নি, বঞ্চনার ইতিহাস তাই প্রমাণ করেছে।
বিডিএফ আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে এদিন বলেন যে শিলচরে ভাষা আইন লঙ্ঘণের সরকারি পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানানোর জন্য চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে চূড়ান্ত পুলিশি তৎপরতা শুরু হল, এমনকি তাঁদের মূখ্য আহ্বায়ককে গ্রেফতার করে ১৮ দিন জেলবন্দী করে রাখা হল।
তাঁদের সদস্যদের বিরুদ্ধে এফ আই আর করা হল। অথচ যেখানে পুজো প্যান্ডেলে বাংলা ব্যানার লাগানো সংবিধান সম্মত অধিকারের মধ্যে পড়ে,সেখানে কিছু উগ্রজাতিয়তাবাদীরা তান্ডব চালাল,ত্রাসের সৃষ্টি করল, অথচ পুলিশ,প্রশাসন তথা সরকার নীরব দর্শক হয়ে প্রকারান্তরে এইসব গুন্ডারাজকে উৎসাহিত করলেন, এমন পক্ষপাত শুধু এরাজ্যেই সম্ভব।
তিনি বলেন দু’মাস আগে যখন বোড়োল্যান্ডে প্রকাশ্যে অসমিয়া সাইনবোর্ড কালো কালি দিয়ে মুছে দিয়ে স্থানীয়রা সেই ভিডিও প্রচার করল তখন এসব ভাষা সন্ত্রাসীরা কোথায় ছিলেন ? একটি প্রতিবাদের আওয়াজ তোলারও তো সাহস হয়নি। বাঙালিরা দুর্বল বলেই কি তাঁদের বিরুদ্ধে চড়াও হয়ে এই বীরত্ব প্রদর্শন ? তিনি বলেন যে গতকাল আমরা দেখলাম রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী রনজিত দাস বরাকে দাঁড়িয়ে এইসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে সমর্থন করে গেলেন।
বাঙালির বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক কর্মকান্ডকে যদি বিজেপির মন্ত্রী মান্যতা দেন তবে এই রাজ্যের বাঙালিদের প্রতি শাসকদলের কি মনোভাব তা জলের মতো পরিস্কার। তিনি বলেন এই ব্যাপারে বরাক বিজেপির বক্তব্য কি তা তাঁরা অবিলম্বে প্রকাশ করুন।
হৃষীকেশ এদিন বলেন যে বিজেপি শাসনে এই রাজ্যের বাঙালিদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি শোচনীয় হয়েছে। তিনি বলেন ব্যালট বাক্সে এর যোগ্য জবাব পেতেই হবে শাসক দলকে,এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
বিডিএফ এর পক্ষ থেকে দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।