আসামের শিলচর রেলস্টেশনে সম্প্রতি অসমীয়া ভাষায় লিখিত একটি সরকারি প্রকল্পের পোস্টার লাগানো নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হল বরাক ডেমোক্রেটিক যুব ফ্রন্ট এবং সারা বাঙালি ছাত্র যুব সংস্থার সদস্যরা। এদিন রেলস্টেশন চত্বরে জমায়েত হয়ে উভয় সংগঠনের সদস্যরা প্রথমে অসমিয়া ভাষায় লিখিত সরকারি পোস্টারটি কালো কালি দিয়ে মুছে দেন। এরপর তাদের প্রতিবাদী স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে স্টেশন চত্বর।
পরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যুবফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত বলেন যে একাদশ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৬১ যে ত্রিভাষা সূত্র সরকারি ভাবে গৃহীত হয় যে তাতে স্পষ্টতই সরকারি কাজকর্মে ও প্রচার ইত্যদিতে আসামের বরাকে বাংলা ভাষা ব্যাবহৃত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এবং এই ব্যাপারটি বর্তমান সরকারের অজানা থাকার মোটেই কথা নয়। কিন্তু তারপরও সরকারি তরফে বারবার এখানে অসমিয়া ভাষায় পোস্টার ইত্যাদি লাগানো মোটেই ভুলবশতঃ নয় এর পেছনে কুউদ্দেশ্য রয়েছে।
কল্পার্নব বলেন যে দিশপুরের কর্তাব্যক্তিরা এইভাবে পেছন দিক দিয়ে আসামের বরাককে গোয়ালপাড়া বানাতে চাইছেন। কিছুদিন আগে বিজেপি বিধায়ক পরমানন্দ রাজবংশী আসামের বরাকে এসে প্রাথমিক স্তরে যে অসমিয়া বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছেন সেসবও একই পরিকল্পনার অঙ্গ।
কল্পার্ণব বলেন যে সরকার নির্বিশেষে দিশপুরের কর্তাদের তরফে এইভাবে জোর করে অসমিয়াকরণের চেষ্টা চলছেই। তিনি বলেন অসমের বরাকের জনগণ তাই বাধ্য হয়ে ভাষার প্রশ্নে স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছেন। তিনি আরো বলেন যে ভেতরে ভেতরে এইসব অপচেষ্টা আর প্রকাশ্যে দুর্গাপূজায় এসে প্যান্ডেলে সফর করলে কখনই অসমের বরাকের বাঙালিদের হৃদয় জয় করা যাবেনা।
কল্পার্ণব বলেন যে এই উপত্যকায় অসংখ্য সমস্যা রয়েছে। স্থাপিত হবার প্রায় পঞ্চাশ বছর পরও শিলচর মেডিক্যাল কলেজে আজ অবধি স্নায়ুরোগ বা হৃদরোগের কোন চিকিত্সা ব্যবস্থা নেই। কত লোককে এজন্য বিনা চিকিত্সায় প্রাণ দিতে হয়েছে ,কত রোগী শিলং বা গৌহাটিতে চিকিত্সার জন্য যেতে গিয়ে রাস্তায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। মহাসড়কের কাজ ঝুলে আছে। মাল্টিমডেল লজিস্টিক পার্কের জন্য জমির বন্দোবস্ত হয়নি আজ অব্দি।
আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ইদানীং কালে নতুন অনেক গুলো মেডিক্যাল কলেজের কাজ শুরু হয়ে গেছে অথচ করিমগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের কাজের কোন অগ্রগতি নেই। ২০২১ এ দাঁড়িয়ে এইসব জাতিবিদ্বেষের মতো সংকীর্ণ চিন্তা বাদ দিয়ে সরকারকে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তাতে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থোদ্ধারও হবে।
কিন্তু এর পরিবর্তে আসামের বরাকে এইভাবে পেছন থেকে অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দিতে গেলে তার ফল মোটেই ভালো হবেনা। এইসব কিছুতেই মানা হবেনা এবং এসবের প্রতিরোধে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামবে বিডিএফ যুবফ্রন্ট। এবসো কাছাড় জেলা কমিটির সভাপতি রাজু দেব বলেন,যে রেলস্টেশন চত্তর একাদশ শহিদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল সেখানে ভাষা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এইসব অবিবেচক কাজ ধিক্কারযোগ্য। তিনি বলেন এইসব অবিলম্বে বন্ধ না হলে আবার ৬১ এর আন্দোলনের পুনরাবৃত্তি হবে। উভয় সংগঠনের সদস্যরা এদিন বরাকের জনসাধারণের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন যে যেখানেই এরকম অসমিয়া ভাষায় পোস্টার দেখবেন তারা যাতে একইভাবে নিজের উদ্যোগে তা নষ্ট করেন বা ছিড়ে ফেলেন।
এদিনের সমাবেশে বিডিএফ যুবফ্রন্টের পক্ষ থেকে দেবায়ন দেব, দেবরাজ দাসগুপ্ত,হৃষীকেশ দে, জয়দীপ ভট্টাচার্য ও এবসোর পক্ষ থেকে এবসো আসাম রাজ্য কমিটির সভাপতি অজিত দাস সহ রাজু দেব রাজীব দাস মিঠু দাস সমর দাস টিপুল দাস হারাধন দত্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিডিএফ মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে ও জয়দীপ ভট্টাচার্য।