নিজস্ব প্রতিবেদক: এনসিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নুরুন নেওয়াজের ঋণ জালিয়াতি আর ভাইস চেয়ারম্যান মইনউদ্দিন মোনেম চিহ্নিত ঋণ খেলাপী হবার পরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তারা। তাদের কুকীর্তির সমস্ত ঘটনা প্রকাশিত হবার পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ব্যাংকিং সেক্টরে কানাঘুষা শুরু হয়েছে যে তাহলে কি আওয়ামী লীগের প্রেতাত্বা এখনো সক্রিয় রয়েছে।
সংশ্লিস্ট সূত্রে প্রকাশ, বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুন নেওয়াজ,তার ছেলে পরিচালক সাজ্জাদ উন নেওয়াজদের কোম্পানী অর্কিড এলপিজির ঋন অধিগ্রহনের বিষয়টি তাদের পরিচয় গোপন করে ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে পাশের চেস্টা করেন তারা। ব্যাংকের বৈদেশিক শাখার নতুন গ্রাহক রাজ্জাক এন্টারপ্রাইজের নামে অধিগ্রহনের পুরো বিষয়টি তারা জালিয়াতির মাধ্যমে করার চেস্টা করেন। নিজ ব্যাংক হতে নিজেরাই ঋন গ্রহনের জালিয়াতি সংক্রান্ত সমস্ত কাগজ-পত্র ও পুরো বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকে জানলেও এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি। বরং উল্টো নুরুন নেওয়াজ পরবর্তীতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। যেখানে জালিয়াতির কারনে তার পরিচালক পদই থাকে না সেখানে কি করে চেয়ারম্যান হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পায় তা নিয়ে প্রশ্নের সৃস্টি হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকের সমস্ত কেনা-কাটা-নিয়োগেও নেওয়াজ সিন্ডিকেট অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ আত্বসাতের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান নুরুন নেওয়াজ গং সিন্ডিকেডের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, এনসিসি ব্যাংকের সবগুলো ভবন এবং শাখায় নুরুন নেওয়াজের নিজের এসি কোম্পানীর এসি বিনাটেন্ডারে একচেটিয়াভাবে বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশী দামে বিক্রি করা হয়। যা ব্যাংক কোম্পানী আইনের সম্পূর্ন লংঘন। এ বিষয়টিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্তের দাবী রাখে।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, এনসিসি ব্যাংকের ফরেন এক্রচেঞ্জ শাখার গ্রাহক রাজ্জাক এন্টারপ্রাইজ বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুন নেওয়াজের এলপিজি স্থাপনা অধিগ্রহন বাবদ ২৬ কোটি টাকা ঋন প্রদানের আবেদন করেন। এর মাঝে ১৬ কোটি টাকা হলো টার্ম ঋন যেটি এলপিজি মেশিনারী,কারখানার জায়গা এবং কোম্পানীর গাড়ী অধিগ্রহনে ব্যবহৃত হবে যেটি আগামী ৮ বছরে পরিশোধযোগ্য। আর ১০ কোটি টাকা ঋন চলতি মূলধন হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে জানানো হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আবেদন করা এই ঋন অনুমোদনের জন্য এনসিসি ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক এবং বর্তমান চেয়ারম্যান মো: নুরুন নেওয়াজ নিজেদের পরিচয় গোপন করে এনসিসি ব্যাংকের ফরেন এক্রচেঞ্জ শাখায় ঋন অধিগ্রহনের আবেদনটি করেন। ঋন অধিগ্রহনের জন্য যে অর্কিট এনার্জি লিমিটেড কোম্পানীর ব্যানারে আবেদন জানিয়েছিলেন সেই কোম্পানীটির মালিক ছিলেন মো: নূরুন নেওয়াজ নিজেই। এ কোম্পানীর অন্যান্য পরিচালকরা হলেন তার ছেলে মো: সাজ্জাদ নেওয়াজ এবং তার স্ত্রী শাহিদা নেওয়াজ। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এ ঋন প্রস্তাবনা উপস্থাপনা করা হয়। এই কোম্পানী অর্কিড এনার্জি লিমিটেড’র মালিক হলেও তিনি তা তারা সম্পূর্ন গোপন করেন। তথ্য গোপন করে নিজ ব্যাংক হতে অধিগ্রহনের নামে ঋন জালিয়াতির চেস্টা পুরো ব্যাংকিং সেক্টরে চাঞ্চল্যের সৃস্টি করে। যা ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ এর ধারার সম্পূর্ন লংঘন। সংশ্লিস্ট আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, ব্যাংক কোম্পানী ১৯৯১ সালের ২৭ এর ধারা মতে, ব্যাংকের কোন পরিচালক সরাসরি কিংবা গোপনে নিজ ব্যাংক হতে কোন ধরনের ঋন নেয়া বা নেয়ার চেস্টা করতে পারেন না। মো: নুরুন নেওয়াজ নিজে পরিচালক হয়ে তড়িগড়ি করে অন্য কোম্পানীর ছদ্মাবরনে জালিয়াতির মাধ্যমে অধিগ্রহনের নামে নিজ কোম্পানীর কথা গোপন করে ঋন অনুমোদন করিয়ে নেয়ার চেস্টা ব্যাংক কোম্পানী আইনের সম্পূর্ন লংঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এতবড় গুরুতর একটি জালিয়াতির সাথে যুক্ত পরিচালককে কি করে শাস্তির পরিবর্তে চেয়ারম্যান হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয় তা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্নের সৃস্টি হয়েছে। সংশ্লিস্টরা জানান, ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘনিষ্ঠভাজন হিসেবে পরিচিত বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুন নেওয়াজ ফেনী-১ আসনের আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর আত্বীয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরে রাতকে দিন করতেন। তিনি সব সময়ই বলতেন আমি শেখ মুজিবের সৈনিক। আমার কেউ কিছু করতে পারবে না। এসব বলেই সমস্ত অপকর্ম সম্পন্ন করে আসছিলেন মো নুরুন নেওয়াজ। ফ্যাসিস্ট সরকারের এমন একজন দোসর কি করে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের সুযোগে নতুন করে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হতে পারে তা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেগ হয়েছে। মো নুরুন নেওয়াজের এসব অবৈধ কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় সে ব্যাংকের অন্যান্য পরিচালক ও কর্মকর্তাদের দীর্ঘ ১৬ বছর বিভিন্নভাবে হুমকী ও হয়রানী করে আসছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ক্ষমতাসীনদের যোগসাজসের ভিত্তিতে বর্তমান চেয়ারম্যান মো নুরুন নেওয়াজ এনসিসি ব্যাংকের সমস্ত টেন্ডার জালিয়াতি ও শত শত লোক নিয়োগ করে এনসিসি ব্যাংককে দূর্নীতির এক আখড়ায় পরিনত করে আসছিলেন। ফলে ব্যাংকটিতে গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুন্নসহ যে কোন সময় চরম বিপর্যয়ের সৃস্টি হতে পারে।
বর্তমান চেয়ারম্যান মো নুরুন নেওয়াজের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে দৃস্টি আকর্ষন করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর এবং ১৪ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের অফিস হতে পত্র মারফত এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে ২৮ অক্টোবর চেয়ারম্যান নির্বাচনে বোর্ড মিটিংয়ের পর দেয়ার অনুমোদন করিয়ে নেন। জানা যায়, ২৮ অক্টোবর ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচনী বোর্ড মিটিংয়ে কয়েকজন পরিচালক কেন তাদের এই তদন্তের বিষয়টি এবং তদন্তে পাওয়া রিপোর্ট সম্পর্কে জানানো হয়নি তা জানতে চান। কিন্তু সে সময় নূরুন নেওয়াজের সকল অপকর্মের অন্যতম সঙ্গী খায়রুল আলম চাকলাদার অন্যান্য পরিচালকদের বিষয়টি বেশী না ঘাটাতে সবাইকে হুমকী দেন। বরং উক্ত বোর্ড মিটিংয়ে দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্টকে পাশ কাটিয়ে নুরুন নেওয়াজ নিজেকে চেয়ারম্যান এবং দেশের অন্যতম প্রধান ঋন খেলাপী আব্দুল মোনেম কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইন উদ্দিন মোনেমকে ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষনা করেন। অথচ ব্যাংক কোম্পানী অনুসারে এদের কেহই পরিচালক থাকার যোগ্য নন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত অনুসন্ধানে বর্তমান অবৈধ চেয়ারম্যান নুরুন নেওয়াজ, তার ছেলে সাজ্জাদ উন নেওয়াজ,তাদের সঙ্গী খায়রুল আলম চাকলাদার এবং অপর পরিচালক আব্দুস সালামের বিভিন্ন জালিয়াতি,দূর্নীতি,অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। ভাইস-চেয়ারম্যান মইনউদ্দিন মোনেমের কোম্পানী ইগলুসহ বিভিন্ন কোম্পানীগুলো ইতিমধ্যে ব্যাংক খেলাপীতে পরিনত হয়েছে। ঋন প্রদানে ব্যর্থতায় তার অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানগু ব্যাংক সিলগালা করে দিলেও সে এখনো ব্যাংক পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল রয়েছে। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান মো নুরুন নেওয়াজ এবং মইন উদ্দিন মোনেমের বক্তব্যের জন্য কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।