একসময়ের বামদুর্গ। সেখানেই ফুটেছিল ঘাসফুল। সময় যত গড়িয়েছে জেলায় ঘাসফুলের রমরমা ততই বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে ততই শুকিয়েছে লালদুর্গ। সেই শূন্যস্থান পূরণে দ্রত উঠে এসেছে গেরুয়া শিবির। সেই গেরুয়া শিবিরই গত লোকসভা নির্বাচনে বড় ধাক্কা দিয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে। তাঁদেরই দল থেকে লোক ভাঙিয়ে এনে তাঁকে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে এনে দিল্লিতে পাঠিয়ে দিয়েছে পদ্মশিবির। আর মাস দশ পরেই ভোট রাজ্য বিধানসভার। এবার লড়াই হবে এস্পার ওস্পারের। তাই সময় থাকতে থাকতেই হিন্দুত্বের তাসেই গেরুয়া শিবিরকে মাত দিতে উঠে পড়ে লেগেছে জোড়াফুল শিবির। আর সেই মাত দেওয়ার অস্ত্র হয়ে উঠেছে তুলসি গ্রাম। উত্তরবঙ্গের বুকে কোচভূমির রাজনীতিতে নয়া আমদানি তুলসির চাষ। জানা গিয়েছে, মারণ ভাইরাস নভেল করোনার প্রতিরোধে রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি আমলা মহলেও ভীষণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে আয়ুশ ক্বাথ। পুলিশ থেকে আমলা, সবাই দিনে দু’বার করে এই ক্কাথ খাচ্ছেন। কিন্তু সেই ক্কাথ তৈরির প্রধান উপকরণ তুলসি পাতারই যোগান নেই রাজ্যে। দক্ষিনবঙ্গের ফুলচাষীরা যা তুলসি গাছ চাষ করে তার বেশির ভাগটাই চলে যায় পুজোর জন্য যোগান দিতে দিতে। আলাদা করে আয়ুশ ক্কাথের জন্য তুলসি জোগাড় করাটাই বড় সমস্যা হয়ে উঠছিল। এই সমস্যাকে কাটাতে এক ঢিলে তিন পাখি মারার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। ঠিক করা হয় রাজ্য সরকার ১২টি গ্রামকে বেছে নেবে যেখানে পরিযায়ী শ্রমিকেরা সংখ্যায় বেশি থাকেন। তারপর ১০০ দিন প্রকল্পের মাধ্যমে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের দিয়েই তুলসি গাছের চাষ করানো হবে। সেই সঙ্গে লক্ষ্য থাকবে বিজেপিকে কড়া বার্তা দেওয়া। কারন হিন্দুত্বের ধ্বজ্জাধারী বিজেপির পক্ষে এই তুলসি গাছের চাষের বিরোধীতা করা সম্ভব হবে না।
এই সব কিছু ভেবেই রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের খাস তালুক নাটাবাড়িতে ১২টি গ্রামকে বেছে নেওয়া হয় তুলসি চাষের জন্য। নাটাবাড়ি-১ ও নাটাবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে যথাক্রমে ৭টি ও ৫টি গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই গ্রামের ৮ হাজারটি পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে তুলসি গাছের চারা। সেই সঙ্গে এই ১২টি গ্রামেরই ১৫০ জন বাড়তি চাষীকে বেছে নেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পে যোগদানের জন্য যাদের অন্তত ১ বিঘা করে জমি আছে। এই চাষীদের দেওয়া হচ্ছে তুলসি গাছের বীজ, যা তাঁরা জমিতে ফেলে চাষ করবেন। তবে তার আগে এই চাষী ও পরিযায়ী শ্রমিকদের তুলসির চাষ নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তুলসি পাতা শোকাবার জন্য সোলার-ড্রাইং ইউনিট এবং একটি স্টোরেজ গুদামও তৈরি করা হবে। একটি তুলসী প্রসেসিং প্ল্যান্টও তৈরি করা হবে, যেখানে আয়ুশ ক্বাথ, তুলসী অর্ক, তুলসী তেলের মতো দ্রব্য উত্পাদিত হবে বলে জানা গিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তুলসীর বিপুল চাহিদা। এক কেজি শুকনো পাতার বর্তমান দাম ৪০-৫০ টাকা। কিন্তু এখন টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না তুলসি। এই ১২টি গ্রামের সাড়ে ৮ হাজার পরিবারকে এখন এই তুলসি চাষেই লক্ষ্মীলাভের রাস্তা দেখাতে চাইছে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে তৃণমূলও সচেষ্ট থাকছে তুলসি দিয়ে পদ্মকে জব্দ করে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় কিস্তিমাত করতে।