জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: গাজায় যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েল আবারও হামলা চালিয়েছে। এতে নতুন করে প্রাণহানি ঘটেছে। এই হামলাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে গাজা কর্তৃপক্ষ। ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি টিকিয়ে রাখতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে।
গাজার প্যালেস্টাইনিয়ান সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, পূর্ব গাজা সিটির তুফাহ এলাকার পূর্বদিকে আল-শায়াফ অঞ্চলে দুটি পৃথক ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। সংস্থাটির দাবি, “ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায় যখন ওই ব্যক্তিরা নিজেদের বাড়ির অবস্থা দেখতে যাচ্ছিলেন।” খবর আলজাজিরার।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা শুজাইয়া এলাকায় তথাকথিত ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করে সৈন্যদের কাছে চলে আসা এবং হুমকি সৃষ্টি করা যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে।”
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে ইসরায়েলি সেনারা ওই রেখার পেছনে অবস্থান করছে। তবে গাজা সিটির বাসিন্দারা রেখাটির অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্ত, কারণ কোনো দৃশ্যমান চিহ্ন নেই।
৫০ বছর বয়সী সামির তুফাহ এলাকায় থাকেন। তিনি বলেন, “পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আমরা মানচিত্র দেখেছি, কিন্তু বুঝতে পারছি না রেখাগুলো কোথায়।”
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধবিরতির পর থেকে একাধিক সহিংসতা ঘটেছে। গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাবে, এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় যুদ্ধবিরতির শর্ত ভাঙার অভিযোগে ইসরায়েল ও হামাস একে অপরকে দায়ী করছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, রবিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশুসহ ৪২ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল বলছে, এই হামলা ছিল হামাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের প্রতিশোধ হিসেবে। তাদের দাবি, রাফাহ এলাকায় হামাস যোদ্ধারা গুলি চালিয়ে দুই ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছিল, যার জবাব হিসেবেই এই বিমান হামলা চালানো হয়।
তবে হামাস ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, রাফাহর ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত অংশে তাদের কোনো ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এবং সেখানকার কোনো ঘটনার জন্য তারা দায়ী নয়।”
সংগঠনের এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ইসরায়েল যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার অজুহাত তৈরি করছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা এরইমধ্যে ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, এবং গাজায় নিহত বন্দিদের মরদেহ হস্তান্তরের কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে। তবে এমন ধ্বংসযজ্ঞের কারণে এই প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের বাধার মুখে পড়ছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার হামাসের কাছ থেকে নিহত ১৩তম বন্দির মরদেহ গ্রহণ করেছে রেড ক্রস, পরে সেটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রবিবার ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো বন্ধ করার হুমকি দেয়। তবে পরে জানায়, তারা যুদ্ধবিরতির শর্ত বাস্তবায়ন পুনরায় শুরু করেছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক জানান, গাজায় ত্রাণ পাঠানো পুনরায় শুরু হয়েছে, যদিও তিনি কী পরিমাণ সহায়তা পৌঁছেছে তা উল্লেখ করেননি।
আলজাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজযুম সোমবার জানান, ইসরায়েল এখনও গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন সামরিক চেকপয়েন্টে ট্রাকগুলো আটকে রাখা হয়েছে, যেগুলো নানা ধরনের মানবিক সহায়তা সামগ্রীতে ভর্তি।
তিনি আরও জানান, সোমবার ইসরায়েলি সেনারা খান ইউনুসের পূর্বাঞ্চলে হামলা চালিয়েছে, যা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি করেছে যে যুদ্ধবিরতি হয়তো টিকবে না।
এদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এক্সে দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, “গাজায় এই ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের স্পষ্ট ঘটনাগুলো তদন্তের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।