করোনা ভাইরাসকে (কভিড-১৯) বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এক বিধ্বংসী আঘাত হিসেবে দেখছেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, শত কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এই মহামারি। ম্যালপাস মনে করেন, চলমান এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় এক দশক স্থায়ী হতে পারে। খবর বিবিসি।
গত মাসে (মে) ম্যালপাস আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, করোনার প্রভাবে অন্তত ৬ কোটি মানুষ ‘চরম দারিদ্র্যে’ পতিত হতে পারেন। একজন মানুষের যখন দিনপ্রতি খরচের সামর্থ্য ১ দশমিক ৯ ডলারেরও (১ দশমিক ৫৫ পাউন্ড) নিচে নেমে আসে তখন তাকে ‘চরম দারিদ্র্য’ হিসেবে অভিহিত করে থাকে বিশ্বব্যাংক।
শুক্রবার (৫ জুন) বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ম্যালপাস এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ৬ কোটির বেশি মানুষের দৈনিক খরচের সামর্থ্য ১ পাউন্ডেরও নিচে নেমে আসতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এটা (করোনা ভাইরাস) অর্থনীতির জন্য এক বিধ্বংসী আঘাত হেনেছে। মহামারির ভয়াবহতার পাশপাশি দেশে দেশে সবকিছু বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে শত কোটি মানুষের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটাই ভীষণ উদ্বেগের। এর সরাসরি পরিণতি হলো আয় কমে যাওয়া। এছাড়াও স্বাস্থ্য ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরিণতি তো রয়েছেই। এই সবকটির প্রভাবই অত্যন্ত তীব্র।’
ম্যালপাস মনে করেন, যেসব মানুষের কিছু করার সামর্থ্য সীমিত, তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার কথায়, ‘আমরা দেখছি যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার যেন উড়ছে, অথচ দরিদ্র্য দেশগুলোতে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষ অনানুষ্ঠানিক কাজও পাচ্ছে না। এর পরিণতিটা এক দশকের মতো স্থায়ী হতে যাচ্ছে।’
বিশ্বব্যাংক ও এর সহযোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোতে সাহায্য দিয়ে চলেছে, কিন্তু তারা একে পর্যাপ্ত মনে করছেন না। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন গরীব দেশগুলোকে ঋণ সাহায্য দেয় সেই আহ্বানও জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে এই ঋণ দেয়ার আগে তারা যেন শর্তগুলো পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়, কেননা আরো অনেক বিনিয়োগকারীও এমন অর্থনীতিতে বিনিয়োগে আত্মবিশ্বাসী।
বিশ্বব্যাংকের যুক্তি হলো, অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অবদানও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাংক মনে করে, বিনিয়োগ ও সহযোগিতার ফলে বিভিন্ন খাতে অনেক নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
ম্যালপাস স্বীকার করেন, করোনার ফলে বিশ্ব বাণিজ্যে যে ক্ষতি হয়েছে এবং বাণিজ্য খাতে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তার ভাষ্যে, ‘যখন বাণিজ্য সীমিত হয়ে আসে, তখন উৎকন্ঠা ও বৈষম্য তৈরি হয়। আমি নিশ্চিত, বৈশ্বিক অর্থনীতি ভবিষ্যতে আবারো পুরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হবে, তবে তা মোটেও করোনার আগের মতো হবে না।’
তবে ম্যালপাস আশাবাদী, এই বিপর্যয় পৃথিবী কাটিয়ে উঠবে, কেননা মানুষ মানিয়ে নিতে পারে আর তারা সহনশীলও। তার কথায়, ‘আমি মনে করি, একটি পথ বের করে নেয়া সম্ভব। এজন্য অবশ্য সরকার ও দেশগুলোকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’