- যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের বিক্ষোভ সমাবেশ।
- ১৯৭১ সালের মতই ঐক্যবদ্ধ প্রবাসীরা।
- প্রয়োজনে প্রবাসী সরকার গঠনের দাবি।
- খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের প্রত্যয়।
- ৫০টিরও বেশি দেশে বিক্ষোভ।
- রেমিটেন্স বন্ধের হুমকি।
লণ্ডন, ২৩ জুলাই: ২০২৪ সালের ২২শে জুলাই যেনো যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের ফিরিয়ে নিয়ে গেলো ১৯৭১ সালের ১লা আগস্টে। একাত্তরের ১ আগস্ট যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারের সামনের দেয়ালে টানানো হয়েছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রসহ লাল-সবুজের পতাকা। ব্যানারে লেখা ছিলো- ‘স্টপ জেনোসাইড, রিকগনাইজ বাংলাদেশ’। এভাবে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে যুক্তরাজ্যের ট্রাফালগার স্কয়ার হয়ে উঠেছিলো বাঙালির মুক্তি অর্জনের মুক্তমঞ্চ। ২০২৪ সালের ২২শে জুলাই ট্রাফালগার স্কয়ার হয়ে উঠলো বাঙালির আরেক মুক্তি অর্জনের মুক্তমঞ্চ।
দুপুর থেকেই সেখানে সমবেত হতে শুরু করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা। কেউ বাচ্চাসহ এসেছেন, কেউ স্ত্রীসহ এসেছেন, কেউ পুরো পরিবার নিয়ে এসেছেন, কেউ বন্ধু-বান্ধবসহ এসেছেন, কেউ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এসেছেন। এমনকি শফিক রেহমান দম্পতিও সমাবেশে এসেছেন, যেভাবে তাঁরা ১৯৭১ সালে এসেছিলেন। উদ্দেশ্য শেখ হাসিনার অপশাসন ও দু:শাসন থেকে দেশের মানুষের মুক্তি ও নিরস্ত্র নিরপরাধ ছাত্রদের হত্যাযজ্ঞ বন্ধে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ এবং রেব, পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত গঠন, খুনি হাসিনার পতন ও তার শাস্তি দাবি। ‘Step down Hasina, Save our students’, ‘No more Hasina-no more India’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার-গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘দিল্লি না ঢাকা-ঢাকা ঢাকা’, ‘স্বাধীনতা এনেছি-স্বাধীনতা রাখবো’, ‘রক্তে গড়া বাংলাদেশ-রক্ত দিয়ে রাখবো’, ‘খুন হয়েছে আমার ভাই-খুনি তোদের রক্ষা নাই’, ‘আমার ভাই মরল কেন-খুনি হাসিনা জবাব দে’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত-বৃথা যেতে দিব না’, ‘তোর কোটা তুই নে-আমার ভাইকে ফিরিয়ে দে’, ‘তোর কোটা তুই নে-বাংলাদেশকে মুক্তি দে’, ‘রুশ ভারতের দালালেরা-হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
‘সমাবেশে যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও আশপাশের দেশগুলো থেকে প্রবাসী বাঙালিরা দাবি-দাওয়া সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে যোগ দেন। ট্রাফালগার স্কয়ার ছাড়িয়ে আশপাশের প্রধান সড়কগুলোও লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। সমাবেশ চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এ সময় বিপুল পথচারী ও বিভিন্ন দেশের পর্যটকরাও প্রবাসীদের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, We are demanding justice for the students in Bangladesh who are fighting for their rights. আদালতের রায়ের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, আপিল বিভাগের রায় একটা মশকরা, ৫% হলেও নাতি-পুতি কোটা রাখতে হবে? তিন শতাধিক নিরস্ত্র শিক্ষার্থীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হলো অথচ এই ব্যাপারে আদালতের রায়ে বিন্দুমাত্র কোনো পর্যবেক্ষণ নেই— ভাবতেই অবাক লাগছে। বিচারক এজলাসে উঠলেন আর রায় দিয়ে দিলেন। আর কোন রায়টা দিলেন, যে রায়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই প্রতিধ্বনিত হলো। কেন, আজ আদালত কি পারতেন না স্বপ্রণোদিত হয়ে এই নির্মম-নৃশংস হত্যাকাণ্ডে সুয়োমোটো মামলা করে তদন্তের নির্দেশ দিতে? আদালত কি পারতেন না কোটা নিয়ে রায় দেয়ার আগে রাষ্ট্রপক্ষকে জিজ্ঞেস করতে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অধিকার তাদেরকে কে দিয়েছে? আদালত কি পারতেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘শো কজ ‘করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে? এরকম নারকীয় হত্যাযজ্ঞে আদালত কি এতটুকুও বিচলিত নন? সুয়োমোটো মামলার নজির কি বাংলাদেশে নেই? দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কাছ থেকে এতটুকু মানবিকতা যদি মানুষ না পায় তাহলে জাতি আশ্রয় নেবে কার কাছে? হাসিনার পদত্যাগ ও প্রস্থান ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণের আর একটাই পথ খোলা থাকে: মানুষ গণভবন থেকে ওকে টেনে বের করবে।
বাংলাদেশে ভারতীয় হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বক্তারা বলেন, বীনা সিক্রি এবং হর্ষবর্ধন শ্রিলা’র কথা শুনে বোঝা যায়, যে কোন মূল্যে প্রয়োজনে কাশ্মির বানিয়ে হলেও তারা বাংলাদেশে হাসিনার স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখবে। প্রথমে তারা শাপলা চত্ত্বরের মত রাতের আঁধারে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা চালিয়ে দমন করার চেষ্টা করেছে, সফল হয়নি। উল্টো পুলিশ / রেবের বিরাট সংখ্যক সদস্য নিহত হয়েছে। এরপর তারা হেফাজত বিভাজনের মত আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভাজনের চেষ্টা করেছে, সফল হয়নি। শেষে তারা সেনাবাহিনী নামিয়ে কারফিউ দিয়েছে। জনগন কারফিউ ভেঙে রাস্তা দখলে নিয়েছে। এভাবে লাশের উপর দিয়ে হাসিনাকে ভারত সরকার কিংবা ‘র’ ক্ষমতায় রাখতে পারবে? বিদেশের মাটিতে একের পর এক ‘র’ এর মিশন ফেইল করতে দেখেও তাদের শিক্ষা হচ্ছে না?
সমাবেশে আগত একজন দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম, ৭১ এ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সাধারণ মানুষ সহযোগিতা করেছিলো, আর এখন দেখছি ২৪ এর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সাধারণ মানুষ কিভাবে সহযোগিতা করছে।
উক্ত সমাবেশে প্রবাসীরা দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতই ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি করেন। প্রয়োজনে প্রবাসী সরকার গঠনের দাবি করেন। রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করার হুমকি দেন।