পঙ্কজকুমার দেব, হাফলং: পার্বত্য ডিমা হাসাও জেলার বর্তমান সঙ্কটে অসম সরকার সবধরনের সহযোগিতা করার পাশাপাশি পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদকে এককালীন তহবিল প্রদান হবে। যাতে করে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি সহজে মোকাবেলা করা সম্ভব হয়। কারণ সড়কপথ থেকে সামগ্রিক পরিকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবে ডিমা হাসাওকে অতি কম সময়ের মধ্যে নতুন করে গড়ে তোলা হবে। এতে ভারত সরকারও সম্পূর্ণ ভাবে সাহায্য করবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশদ আলোচনা হয়েছে। মঙ্গলবার ঝটিকা সফরে এসে উপরোক্ত মন্তব্য করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। পার্বত্য ডিমা হাসাওকে এর আগে এতো বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয় নি। কিন্তু কোভিডের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে পাহাড়কে ফের কয়েক বছর পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। আর মঙ্গলবার জেলার সামগ্রিক ধস বিধ্বস্ত পরিস্থিতির সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করতেই বিশেষ হেলিকপ্টারে করে দিসপুর থেকে হাফলঙে উপস্থিত হন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড০ হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
এদিন হাফলং সরকারী বাগান স্থিত কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় মাঠে সকাল দশটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার অবতরণ করে। সেখান থেকে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী লোয়ার হাফলং হাইস্কুলে থাকা রিলিফ ক্যাম্প পরিদর্শন করার পাশাপাশি ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া লোয়ার হাফলং সড়কপথ পরিদর্শন করেন।ওই পথ হাফলং-দেহাঙ্গী দিয়ুংব্রা- লংকা-গুয়াহাটি সংযোগী সড়কপথ। ভারি বৃষ্টিপাতের জেরে সড়কটির প্রায় একশো মিটারের অধিক এলাকা ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে।
লোয়ার হাফলঙের পথের দুরাবস্থা দেখে মুখ্যমন্ত্রী চমকে উঠেন। কারণ সেখানে এক বিশাল খাদের সৃষ্টি হয়েছে। লোয়ার হাফলং থেকে সরাসরি চলে যান হোকাই পুঞ্জি গ্রামে।হোকাই পুঞ্জিতে গত ১৪ মে ভূমিধসে এক শিশু কন্যা সহ মোট তিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মৃতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পাশাপাশি তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী মৃতের পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করে বলেন যে এককালীন আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়েছে যদিও, তথাপি সরকার এবং পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ সহযোগিতা করবে।হোকাই পুঞ্জি থেকে ফিরে এসে হাফলং আবর্ত ভবনের কনফারেন্স হলে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে জেলার সামগ্রিক ধস বিধ্বস্ত পরিস্থিতি নিয়ে রিভিউ বৈঠক করেন।
বৈঠকে প্রলংয়কারী প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে আলোচনা হয় এবং এতে মুখ্যমন্ত্রী সবধরনের প্রত্যক্ষ সহযোগের আশ্বাস দেন। বৈঠকে পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের সিইএম দেবোলাল গর্লোসা ছাড়া বিধায়ক তথা ইএম নন্দিতা গর্লোসা, সরকারের মুখ্য সচিব যীষ্ণু বরুয়া, পরিষদের চেয়ারপার্সন রাণু লাংথাসা, মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব সমীর কুমার সিনহা, পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের প্রধান সচিব টি টি দাওলাগুপু, জেলা শাসক নাজরিন আহমেদ, পুলিশ সুপার জয়ন্ত সিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।বৈঠক শেষে আবর্ত ভবনে জেলা সদরের সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন যে পার্বত্য জেলার প্রায় সবকটি পথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া জল সিঞ্চন, জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগ ছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের অনেক ক্ষতি হয়েছে। উপরোক্ত ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনা তথা অধ্যয়ন করতে ২৭ মে ভারত সরকারের এক বিশেষজ্ঞ দল হাফলঙে উপস্থিত হবে। এই প্রতিনিধি দল ধস বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করার পাশাপাশি সবকিছু খতিয়ে দেখবেন। এই প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করেই পথঘাট নতুন করে পুনঃনির্মাণ করা হবে।
এছাড়া দুই একদিনের মধ্যেই ইঞ্জিনিয়ার অন্যান্য শীর্ষ আধিকারিকরা হাফলঙে উপস্থিত হয়ে প্ল্যান অ্যান্ড এস্টিমেট তৈরী করবেন।সেই সঙ্গে রাজ্য সরকার শীঘ্রই পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদকে একটি এককালীন পুঁজি প্রদান করবে যাতে করে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করা সম্ভব হয়। তবে এয়ারড্রপিঙের সাহায্যে খাদ্য যোগান তথা জ্বালানি ইত্যাদি সামগ্রী পৌঁছানো প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানান।