- হবিগঞ্জে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে ওসির চিঠি!
- রেলের জমিতে লীগ নেতাদের অব্যহত স্থাপনা!
- দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ মুছে ফেলেছে ব্যাংক!
- শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনা করায় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে বহিস্কার!
লণ্ডন, যুক্তরাজ্য:: আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই রাষ্ট্রের সকল সেক্টরে দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি প্রবলভাবে গেড়ে বসেছে। দিনকে দিন এর ব্যাপকতা আরও বেড়েছে। ক্ষমতার শেষ সময়ে এসেও যা অব্যহত আছে। বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্বৃত্তায়নের বিভিন্ন খতিয়ান বিভিন্ন সময় জনসমক্ষে তুলে ধরেছে সাপ্তাহিক সুরমা। তারই ধারাবাহিকতায় আরও কিছু খতিয়ান এখানে তুলে ধরা হলো:-
হবিগঞ্জে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে ওসির আমন্ত্রণপত্র!
বিগত ১৫ বছরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডারদের পুলিশে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যার ফলে পুলিশ নিজেই এখন সব ধরনের অপরাধ করছে। পুলিশের পোশাকে এই আওয়ামী দুবৃত্তরা যা করার প্রায় প্রকাশ্যেই করছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি নাজমুল হক কামালের বিরুদ্ধে ৩ কোম্পানির কাছে ১০ লক্ষাধিক টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। গত ১০ অক্টোবর ওলিপুর স্কয়ার ডেনিমস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, একই এলাকার তাফরিদ কটন মিলস্-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এর জিএম এডমিন বরাবরে আপ্যায়ন বাবত ৩ লাখ ৫০ হাজার করে মোট ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চেয়ে তার স্বাক্ষরিত একটি আমন্ত্রণ পত্র প্রেরণ করা হয়। এরপর থেকে উপজেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়, ১৪ অক্টোবর শারদীয় দূর্গাপুজা উপলক্ষে পূজা কমিটির সভাপতি, সহ সভাপতি, কমিটির অন্যান্য সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে আসন্ন শারদীয় দূর্গাপুজা অসাম্প্রদায়িক ভাবে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন এবং বর্তমান সরকারের ভাবমুর্তি অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় পূজা সংক্রান্ত একটি মিটিং এর আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে আপনার উপস্থিত একান্ত কাম্য। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজনদের নাস্তা এবং আপ্যায়নের জন্য কাচ্চি বিরিয়ানি ৩০০ প্লেইট, জিলাপি ৩০ কেজি, মিষ্টি ৩০ কেজি, দই ৩০০ পিস, পানি ৫০ বোতলসহ বিভিন্ন প্রকার ফল ক্রয় বাবত ১ লাখ টাকা ও আগামী ২৮ অক্টোবর সারা বাংলাদেশে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদযাপন উপলক্ষে উক্ত অনুষ্ঠানে অনুমান ৫০০ লোকের সমাগম হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজনদের নাস্তা এবং আপ্যায়নের জন্য ৫শ প্লেইট, ব্যানার, ফেস্টুন, মাইকিং, ফিল্ড ক্যাপ ৫০০টি, কেইক ৫০০টি, মিষ্টি, দই, পানি ৫০০ বোতলসহ ২ লাখ টাকা চেয়ে একই ফরম্যাটে কোম্পানির ৩ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিকট নিমন্ত্রণপত্র দেয়া হয়।
রেলের জমিতে লীগ নেতাদের অব্যহত স্থাপনা!
‘নিজের মনে করে’ রেলের জমিতে স্থাপনা গড়েই চলেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এবার পাবনার ভাঙ্গুড়ায় রেলওয়ের জমি দখলের মহোৎসব চলছে। আওয়ামী লীগ নেতারা রেলের জমি দখলে নিয়ে কেউ দু-তিনতলা ভবন করছেন আবার কেউ বিপণিবিতান গড়ে তুলছেন। কেউ কেটেছেন বিশাল পুকুর আবার কেউ পুকুর ভরাট করে দোকান ঘরের জায়গা বানাচ্ছেন। অনেকে আবার চড়া দামে বিক্রি করছেন নির্মাণ করা দোকানও। রেল কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযানে এলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ফলে দখলদাররা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯১৫-১৯১৬ সালে ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেললাইন নির্মাণ হয়। ভাঙ্গুড়া বড়াল ব্রিজ স্টেশনও তখন করা হয়। একই সঙ্গে ভাঙ্গুড়া খাদ্যগুদামে পণ্য পরিবহনের জন্য পৃথক একটি রেললাইন নির্মাণ হয়। ফলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বড়াল নদের দুদিকে কয়েকশ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে। এর কিছু জমি থেকে মাটি কেটে রেললাইনে নেওয়া হয়। বাকি জমিগুলো অব্যবহৃত রয়ে যায়। এরপর জমিগুলো অবৈধভাবে দখলে নিতে থাকেন প্রভাবশালীরা। দিন দিন তৈরি হতে থাকে বিপণিবিতান, দোকান, বাড়িসহ কাঁচা-পাকা বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙ্গুড়া উপজেলা সদরের মাঝ বরাবর বয়ে গেছে বড়াল নদ। নদের একদিকে বড়াল ব্রিজ স্টেশন, অন্যদিকে ভাঙ্গুড়া বাজার। বাজারের মধ্য দিয়ে চলে গেছে খাদ্য গুদামের পৃথক রেললাইন। তবে দু-একটি লোহার পাতের স্মৃতিচিহ্ন থাকলেও লাইনটি এখন আর নেই। লাইনের দুপাশে বড় বড় পাকা ভবন, বাড়ি। বাজারের পেছন দিকে আছে রেলওয়ের ফসলি জমি। এ জমি দখলে নিয়ে করা হয়েছে বিশাল পুকুর। অন্যদিকে আবার পুকুর ভরাট করে তৈরি হচ্ছে নতুন বিপণিবিতান, দোকান। রেলওয়ের জায়গায় অবৈধভাবে প্রায় ৪ হাজার বর্গফুটের বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করেছেন ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মহির উদ্দীন। বড়ালব্রিজ স্টেশনের পশ্চিম পাশে রেল লাইনের অদূরেই গত বেশ কিছুদিন ধরে আরসিসি করে ২৪টি কলাম দিয়ে তিনি এই বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেল সংযোগ রুটের বড়াল ব্রিজ স্টেশনের পশ্চিম পাশের কয়েক একর পুকুর ভরাট করে ওই নেতা বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। রেললাইনের অদূরেই প্রায় ৪ হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে বহুতল ভবন হচ্ছে। এর আগে ওই স্থানে কয়েক একরের একটি পুকুর ছিল যেখানে মাছের চাষাবাদ হত। সেখানে দুবছর আগে ড্রেজার দিয়ে ওই নেতা বালু ফেলে ভরাট করেছিলেন। সে সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। অদৃশ্য কারণে ধামাচাপা পড়ে যায়। দুবছর পর আবার ওই স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। জানা গেছে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওই নেতা কৃষি জমি হিসেবে বাৎসরিক লিজ নিয়েছেন। তবে কৃষি জমি হিসেবে বাৎসরিক লিজ নিয়ে সেখানে বহুতল স্থায়ী ভবন নির্মাণ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মহির উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, রেললাইনের পাশে তো তাই মজবুত করেই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবনের অনুমতি হয়তো রেল কর্তৃপক্ষ দেবে না। তাই বলে জায়গা তো আর ফেলে রাখা যায় না। এদিকে রেলরে জায়গায় উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি একরাম হোসেন ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি শওকত আলী পৃথক দুটি দোতলা বিপণিবিতান করেছেন। শওকত আলীর ভগ্নিপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামিম আহম্মেদ করেছেন বেশ কিছু পাকা দোকান। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আবুল কালাম আজাদ একটি দোতলা বিপণিবিতান এবং ভাঙ্গুড়া থানার পেছনে তিন একর জমি নিয়ে একটি পুকুর খনন করেছেন। বিপণিবিতান ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রেল কর্তৃপক্ষ ভেঙে দিলেও তিনি আবার তা ঠিকঠাক করে ভাড়া দিয়েছেন। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ থেকে ৪০০ মিটার পূর্বে দুবিঘা পরিমাণ একটি খাল দখল করে ভরাট করছেন ভাঙ্গুড়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক। অপর একটি পুকুর ভরাট করে রড সিমেন্টের পিলার তুলে ভবন তৈরির কাজ শুরু করেছেন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম। এগুলোও রেলওয়ের জমি। তবে শুধু দখল, ভরাট, পুকুর কেটে আর ভবন নির্মাণ করেই থামেনি এ প্রতিযোগিতা। দখলের পাশাপাশি অবৈধভাবে তৈরি দোকান কেনাবেচা করছেন অনেকে। ভাঙ্গুড়া বাজারের ব্যবসায়ী হারুণ অর রশিদ বলেন, পুরো বাজারই গড়ে উঠেছে রেলওয়ের জমির ওপর। বড় বড় ভবন ও বিপণিবিতান তৈরি হয়েছে। বহুদিন ধরেই বিপণিবিতানের দোকান কেনাবেচা চলছে। সম্প্রতি তিনি নিজেও ৩০ লাখ টাকায় দুটি দোকান কিনেছেন বলে জানান। তবে এসব কেনাবেচায় বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পের মাধ্যমে কেনাবেচা চলছে।
দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ মুছে ফেলেছে ব্যাংকগুলো!
নির্বাচনের আগে মাত্র তিন মাসে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কৃত্রিমভাবে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো দেখাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া সুবিধা ব্যবহার করে ঋণের তথ্য ব্যালান্স শিট থেকে মুছে ফেলছে ব্যাংক সমূহ। এপ্রিল থেকে জুন এ তিন মাসে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক হালানাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করেছে ৭ হাজার ৩১৯ কোটি টাকার। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ঋণ অবলোপন হয়েছে ১ হাজার ৯৬১ কোটি টাকার। এর ফলে ব্যাংকখাতে সর্বমোট অবলোপন দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। যা ঋণ অবলোপনের রেকর্ড। কাগজ-কলমে ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখাতে ঋণ অবলোপন করে ব্যাংক। দীর্ঘদিন অনাদায়ী গ্রাহকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ব্যালেন্স শিট থেকে মুক্ত করতে ঋণ অবলোপনের পথে ঝুঁকছে সবগুলো ব্যাংক। ব্যাংক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়মানুযায়ী ব্যাংকগুলোর অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। তবে খেলাপির নানা শ্রেণিভেদে ২০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। গত এক দশকে ঋণ বিতরণে নানা অনিয়মের ফলে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অত্যাধিক হারে বেড়ে যায়। এ কারণে ২০১৯ সালে বিশেষ নীতিমালার আওতায় ১০ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু ৫০০ কোটি টাকার কম এমন ঋণে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেয় সরকার। কিন্তু ২০২০ সালে কোভিডের আঘাতের ফলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি বিবেচনায় কয়েক দফায় সুযোগ বাড়ায় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে কোভিডের প্রথম বছর ২০২০ সালে কেউ ঋণের ১ টাকা পরিশোধ না করলেও কাউকে খেলাপি দেখাতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এরপর ২০২১ সালে এ সুযোগ কিছুটা কমিয়ে কিস্তির ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই খেলাপি না দেখাতে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও ঋণখেলাপির হার কমাতে পারেনি ব্যাংকগুলো। গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের অনীহার কারণেই খেলাপি বেড়েছে বলে অভিমত ব্যাংককর্তাদের। তাই ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকেও আর কোনো সুযোগ না দেওয়ার আবেদন রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘খেলাপি যারা তাদের বেশিরভাগই প্রভাবশালী। সুযোগ-সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা লোন পরিশোধ করে না। বিভিন্ন সুযোগ দেওয়ায় এ বছর ঋণ অবলোপনের হার কম। নয়তো এ সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ হতো।’ এ বিষয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থঋণ আদালতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মামলা হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত থাকায় বছরের পর বছর নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। এ ছাড়াও চলমান মামলার বিচারকাজ অযৌক্তিকভাবে মুলতবি রাখা হয়। বিচারকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশে যে মামলাগুলো স্থগিত রয়েছে, সেগুলো স্থগিতাদেশ বাতিলের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে এজন্য উদ্যোগ নিতে হবে। স্থগিত মামলাগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির কাছে দিতে হবে। আইন মন্ত্রণালয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলাপ করে এসব স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।’ এ ছাড়াও অর্থঋণের আদালত ও বিচারক বৃদ্ধি এবং দক্ষ বিচারক দিয়ে এসব মামলার বিচার পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে বলে উল্লেখ করেন অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম।
শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনা করায় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে বহিস্কার!
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। গত বুধবার তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ জনস্বার্থে বাতিল করা হলো। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মনজুর আহমেদকে তিন বছরের জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, ২০১৩’–এর ধারা ৫(২) এবং একই আইনের ধারা ৫(৩) অনুযায়ী তিনি এ নিয়োগ পান। যোগদানের তারিখ থেকে এ নিয়োগ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। মনজুর আহমেদ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে যোগ দেন ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি। সে হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দেড় বছর আগে তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করল সরকার। মনজুর আহমেদ চৌধুরী দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে নদী দখল নিয়ে বক্তব্যের কারণে বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছিলেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি সরাসরি নাম না উল্লেখ করে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সমালোচনা করেন। ওই দিন তিনি বলেন, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে যাঁরা বালু উত্তোলন করছেন, তাঁদের সঙ্গে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে। সেদিন তিনি বলেছিলেন, হায়েনারা দল বেঁধে মেঘনায় হামলে পড়েছে। মেঘনা থেকে আবার বালু তোলার চেষ্টা চলছে। এখানে শত শত ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হবে। এতে নদীর ক্ষতি হবে, মাছের ক্ষতি হবে, পরিবেশের ক্ষতি হবে। এদের থেকে নদীকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। সরকার নিয়োগ দিয়েছে, আবার সরকারই বাতিল করেছে। তিনি বলেন, নদী রক্ষায় কতটা সততার সঙ্গে কাজ করেছি, তার বিচার জনগণ করবে। ২০২২ সালে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে মোবাইল কোর্টের (ভ্রাম্যমাণ আদালত) মাধ্যমে বিচার করে কারাগারে পাঠানোর কথা বলেছিলেন মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেছিলেন, প্রতিদিন ঢাকা শহরের মানুষ ৫০ লাখ কেজি মল ও ১৫০ কোটি লিটার মূত্র উৎপাদন করে। ঢাকা ওয়াসার দায়িত্ব ছিল এগুলো শোধন করা, কিন্তু এগুলো সিটি করপোরেশনের পানিনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে নদ-নদীতে গিয়ে পড়ে। পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঢাকা ওয়াসার এই ব্যর্থতার কারণে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চান বলে উল্লেখ করেছিলেন মনজুর আহমেদ চৌধুরী। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় খাল পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, খালের ময়লা-আবর্জনা যাতে নদীতে গিয়ে না পড়ে সে জন্য খালের মুখে নেট দিতে বলা হয়েছিল। উত্তর সিটি করপোরেশন এখনো সে কাজ করেনি। এ জন্য করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধেও তিনি একই ধরনের শাস্তির কথা বলেন। মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘ওয়াসার এমডি, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে মোবাইল কোর্টের সম্মুখীন করব আমরা, চাইব যেন তাঁদের ছয় মাসের জেল, চার লাখ টাকা জরিমানা হয়।’ এর বাইরেও বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমালোচনা করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ।
সংবাদ সূত্র: ইনকিলাব, জাগো নিউজ, ঢাকা পোস্ট ও প্রথম আলো।