পশ্চিমবঙ্গ নিউজ ডেস্ক: ইন্ডিয়ায় সবচেয়ে বেশি বিদেশি বন্দি রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে। পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি জেলবন্দীদের ৮৯ শতাংশই বাংলাদেশি নাগরিক।
সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্ডিয়ার ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)’-এর সবশেষ ২০২৩ সালের রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
এনসিআরবি কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইন্ডিয়ার প্রিজন স্ট্যাটিস্টিকস ২০২৩’ অনুযায়ী, ইন্ডিয়ার বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ৬ হাজার ৯৫৬ জন বিদেশি নাগরিকের মধ্যে ২ হাজার ৫০৮ জন অর্থাৎ ৩৬ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে রয়েছেন। রাজ্যটির কারাগারে আটক বিদেশি বন্দিদের মধ্যে অধিকাংশই (৮৯ শতাংশ) আবার বাংলাদেশি নাগরিক। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে তাদের আটক করা হয়।
স্ট্যাটিসটিকস অনুসারে, ২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের মোট ২৫ হাজার ৭৭৪ জন বন্দির মধ্যে ৯ শতাংশ ছিলেন বিদেশি নাগরিক। এর মধ্যে বাংলাদেশি বন্দিদের মধ্যে ৭৭৮ জন দোষী সাব্যস্ত এবং ১ হাজার ৪৪০ জন বিচারাধীন ছিলেন। বিদেশি বন্দির হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মিয়ানমার। রিপোর্ট বলছে, বিচারাধীন বন্দিদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
ইন্ডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৯০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। আবার এর অর্ধেকেরও বেশি সীমান্ত রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে। এই বিস্তীর্ণ সীমান্তের কিছু এলাকা অরক্ষিত হওয়ার কারণে অনুপ্রবেশের ঘটনাও ঘটে। স্বাভাবিক কারণেই পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকদের বন্দি থাকার ঘটনাটিও বেশি।
এনসিআরবির রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি বন্দির সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। ২০২১ সালে দোষী ৩২৯ জন, বিচারাধীন ১ হাজার ১৭৯ জন; ২০২২ সালে দোষী ৪৭১ জন, বিচারাধীন ১ হাজার ৪২৪ জন। এছাড়া ২০২৩ সালে দোষীর সংখ্যা ছিল ৭৯৬ জন, বিচারাধীন ১ হাজার ৪৯৯ জন।
বিদেশি বন্দিদের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের পরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র (৭৭৩ জন), দিল্লি (৭৫১ জন) ও উত্তরপ্রদেশ (৪৮১ জন)।
আইনজীবীদের অভিমত, পশ্চিমবঙ্গে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা বৃদ্ধির একাধিক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে আইনজীবী জোগাড় করতে না পারা, বিচার বিভাগীয় বেঞ্চের অনুপস্থিতি এবং বিচার আদালতের অতিরিক্ত চাপ।
পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই ‘বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিস’-এর (এফআরআরও) নির্দেশে অবৈধ বন্দিদের সেদেশে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু রাজ্যের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের বারবার আবেদন সত্ত্বেও, রাজ্য থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর হার অত্যন্ত কম।”
এনসিআরবির ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের কারাগারগুলোর প্রতিটিতেই অতিরিক্ত বন্দিদের চাপে অবস্থা খুব শোচনীয়। এছাড়াও কারাগারে নারীদের জন্য কম সুযোগ-সুবিধা, কারা কর্মীদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপের ঘটনাও প্রকাশ পেয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের ৬০টি কারাগারে যেখানে ধারণক্ষমতা ২১ হাজার ৪৭৬ জনের, সেখানে বন্দি রয়েছেন ২৫ হাজার ৭৭৪ জন। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের কারাগারগুলোতে শতাংশের বিচারে ধারণক্ষমতার ১২০ শতাংশ বন্দি রয়েছেন, যা অত্যন্ত শোচনীয়।
নারী বন্দিদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। রাজ্যের একমাত্র নারী কারাগারে বন্দি থাকার হার ১১০ দশমিক ২ শতাংশ।