সরকারি-বেসরকারি (পিপিপি) অংশীদারিত্বে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল পরিচালনার উদ্যোগকে মানবতাবিরোধী ও সংবিধানবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
পাট, পাটশিল্প ও পাটচাষী রক্ষায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের আয়োজনে জাতীয় কনভেনশনে তিনি এ মন্তব্য করেন। শনিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর পল্টনে মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এ কনভেনশন।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জাতীয় কনভেনশনে বলেন, কারখানা বন্ধ করে আবার ব্যক্তি মালিকানায় কারখানা চালু হবে তা কিন্তু না। আদমজীর ক্ষেত্রে আমরা যা দেখেছি। এটা (পিপিপি) লুটপাটের একটা আয়োজন। সেটা করার জন্য তারা (সরকার) ফন্দিফিকির করেছে। করোনাকালে এটা মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানের ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, উৎপাদন যন্ত্র, ব্যবস্থা, বণ্টন প্রণালীসমূহের মালিকানা হবে রাষ্ট্রীয় মালিকানা। অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান প্রধান ক্ষেত্র লইয়া গতিশীল রাষ্ট্রীয় খাত সৃষ্টি করতে হবে। সেদিক থেকে দেখলে এটা (পিপিপি) কিন্তু সংবিধানবিরোধী পদক্ষেপও।
সিপিবি সভাপতি বলেন, অফ সিজনে লো কোয়ালিটির পাট কিনে টাকা মেরে দেয়, একটা মাথাভারী প্রশাসন, এসব কারণেই লোকসান হচ্ছে। দুর্নীতি, ভুলনীতি ও লুটপাট- এ তিনটা জিনিস হল এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এগুলো বন্ধ করেন, পাটশিল্প লাভজনক হয়ে যাবে।
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদও পিপিপির সমালোচনা করে বলেন, পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে দেবে, কিন্তু বেসরকারি খাতে নিশ্চয়তা নাই। বেসরকারি খাতে যারা নিচ্ছেন তাদের লক্ষ্য একটাই, পাটকলগুলোর বহু হাজার টাকার জমি দখল, সম্পদ দখল। বিভিন্ন শিল্পের জমি বিতরণ কর্মসূচির জন্য মসিউর রহমানের নেতৃত্বে একটা কমিটি হয়েছে অনেক আগেই। তাদের ধারাবাহিকতায় আজকের এ পলিসি।
আনু মুহাম্মদ বলেন, আমাদের শিল্পায়নের দরকার ছিল, কর্মসংস্থান দরকার ছিল। পাট শিল্প পরিবেশবান্ধব শিল্প। পাট শিল্প বিকশিত হলে বাংলাদেশে নতুন শিল্পায়নের যাত্রা হতো, কৃষিও তো শক্তিশালী জায়গায় যেতে পারত। বিরাট ভবিষ্যৎ হতে পারত। সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলো শেষ করে দিল।
কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ।
পরে বক্তব্য রাখেন বাসদের (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক।
কনভেনশনে খুলনা, যশোর, সিরাজগঞ্জ, ডেমরা, নরসিংদী, চট্টগ্রামের পাটকল শ্রমিক নেতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার এবং বাম গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতারা মিলনায়তনে উপস্থিত থেকে ও ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য রাখেন।





