সন্দীপ / সমীপম, আগরতলা: যতদিন বাঙালি জাতি থাকবে, সভ্যতা বেঁচে থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি, বিশেষ করে ভাষা-প্রিয় মানুষের মনে চিরকাল জীবিত থাকবেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এভাবেই আবেগ প্রকাশ করেছেন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ রেবতিমোহন দাস। সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের পাশাপাশি ত্রিপুরার অকৃত্রিম অবদান শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন তিনি।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। পৃথিবীর বুকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পায় বাংলাদেশ। ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে সম্পূর্ণ ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ওই দেশটি। নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে নতুন রাষ্ট্রের জন্মে বলিদান দিতে হয়েছে হাজারো মানুষের। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে বাঙালির রক্তে রাঙানো মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করতে গিয়ে শহিদ হয়েছিলেন বহু ভারতীয় জওয়ান। তাই আজকের দিনটি ভারত এবং বাংলাদেশের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার অবদানও ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।
আজকের দিনে সারা ত্রিপুরায় বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সরকারিভাবেই এই দিনটি প্রতিবছর উদযাপিত হয়ে আসছে। আজ মঙ্গলবার আগরতলায় পোস্ট অফিস চৌমুহনিতে শহিদ বেদিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ত্রিপুরা সরকারের পক্ষে পরিবহণ মন্ত্রী প্রণজিত্ সিংহরায়। এদিন তিনি বলেন, আজকের দিনে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে এবং ভারত সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা আত্মবলিদান দিয়েছিলেন আজ তিনি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
এদিকে, আগরতলাস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাই-কমিশনের কার্যালয়ে বিজয় দিবস উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনার মহম্মদ জুবায়েদ হুসেন বলেন, আজকের দিনটি অত্যন্ত আনন্দের, একইসাথে বেদনারও। কারণ, ১৯৭১ সালে আজকের দিনে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু, ওই স্বাধীনতা অর্জনে বহু মানুষের প্রাণ দিতে হয়েছে। তাঁর কথায়, আজ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত বাঙালি নিজ নিজ ভাবে দিনটি উদযাপন করছেন। কারণ, বাংলাদেশের বিজয় দিবস বাঙালি হিসেবে অত্যন্ত গর্বের।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ রেবতিমোহন দাস। তিনি বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বহু মানুষ প্রাণ দিয়েছিলেন। কারণ, তাঁরা ভাষা রক্ষায় যুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, বাংলা ভাষাকে রক্ষা করার জন্য সংগ্রাম পৃথিবীর বুকে নতুন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ মর্যাদা লাভ করে। তবে, ভারত ও ত্রিপুরা পাশে দাঁড়িয়েছিল বলেই তা সম্ভব হয়েছে। তাই, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী এবং ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত শচীন্দ্রলাল সিংহকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে অবদানের জন্য তিনি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
এদিন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, কিছু কিছু মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকেন। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজি নজরুল ইসলাম সবসময় আমাদের হৃদয়ে থাকবেন। তেমনি, যতদিন বাঙালি জাতি থাকবে, সভ্যতা বেঁচে থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি অংশের মানুষ, বিশেষ করে ভাষা-প্রিয় মানুষের মনের মধ্যে জীবিত থাকবেন।