ধানমন্ডি, ঢাকা: সমাজের অবহেলিত এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিষ্ঠান ‘সুরভী’র ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। ১৯৭৯ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি বিশিষ্ট সমাজসেবী সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু ‘সুরভি’ প্রতিষ্ঠা করেন। গত ৪৬ বছরে প্রায় ২৮ লাখ শিশুকে দিয়েছে সাক্ষরতা।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু। এছাড়া সুরভির অনেক শুভানুধ্যায়ী, অতিথিবৃন্দও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সুরভি স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্ররাও এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের তত্ত্বাবধান করেন ডা. জোবাইদা রহমান। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে স্কাইপিতে যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় তিনি সুরভির শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সুরভির পরিচালকদের শুভেচ্ছা জানান।
প্রখ্যাত সমাজ সংস্কারক সৈয়দা ইকবাল বানু ১৯৪১ সালে এক সম্ভান্ত্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। শৈশবকাল থেকেই নিপীড়িত, অসহায় মানুষের সেবা করে চলেছেন। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ৬৮ হাজার গ্রামের গ্রামান্তরে, শহরের বহু হাসপাতালে, পথে প্রান্তরে ছড়িয়ে আছে তাঁর সাহায্যের ছোঁয়া।
শিক্ষাজীবনে সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার ডিগ্রি এবং চারুকলা থেকে ফাইন আর্টস এ ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর প্রয়াত স্বামী সাবেক নৌবাহিনী প্রধান ও সাবেক যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান।
ব্যক্তি জীবনে সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু একজন চিত্রকর, লেখক। পিয়ানো বাদক। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে ‘ঝড়াপাতা, মনে পড়ে’ উল্লেখযোগ্য। জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৫ সালে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। তাছাড়াও কাজী মাহাবুব উল্লাহ ট্রাস্ট স্বর্ণপদক, নিপা শিশু ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক, অতীশ দীপংকর পদক, চন্দ্রাবতী পদক, কমলকুড়ী পদক, সন্ধানী পদক, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম পদক, আজিজুর রহমান পাটোয়ারী পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
তাঁর দুই কন্যা সন্তান বড় মেয়ে শাহিনা খান জামান এবং ছোট মেয়ে ডা. জুবাইদা রহমান। যিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী। দুই মেয়েই সুরভি’র সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং মায়ের কাজে অনুপ্রাণিত।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নির্বাহী পরিচালক মো. আবু তাহেরসহ বিভিন্ন সুধীজন। সুরভির প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের আরও বেশি অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার উৎসাহ দেওয়া হয়।
দেশাত্মবোধক গান, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তিসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রাক্তন ছাত্ররা সুরভি স্কুলে তাদের বিগত দিনের মধুর সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। এছাড়াও অতিথিরা বক্তব্য প্রদান করেন। সুরভির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন সৈয়দা ইকবাল মন্দ বানু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থী, অভিভাবক, অতিথি এবং সুরভির কর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠান শেষে র্যাফেল ড্র ও বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।