- ভারত বাংলাদেশকে ধংস করছে
- ‘বয়কট ইন্ডিয়া’ ক্যাম্পেইন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে
বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বাজারে যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার থেকেই ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য বিক্রিতে পিছটান পড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। আর সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, বাংলদেশের ব্যবসা বাণিজ্য, কৃষি, শিল্পসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে দিন দিন ভারতের প্রভাব যে ভাবে বাড়ছে, তাতে দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধের পথে। এতদিন কেউ এসব বিষয়ে কেউ কথা বলেনি। কিন্তু হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের জন্য বিভিন্ন ভাবে আহ্বান দেখে মানুষ ব্যাপক সাড়া দিয়েছে।
দেশের মানুষ বলছেন, শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যই নয়, ভারত আমাদের দেশের রাজনীতি, সমাজ-সংস্কৃতিতেও দিনকে দিন অনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করছে। সুতরাং, বাংলাদেশের সব মানুষেরই উচিৎ এ আহ্বানে সাড়া দেয়। একই সঙ্গে, ভারতকেও বর্জন করা উচিৎ বলেও মন্তব্য তাদের।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা। বন্ধের দিন হলেও ফার্মগেট ওভার ব্রীজের নিচের মীম জেনারেল স্টোরে বেশ ভিড় ছিল ক্রেতাদের। বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে আসা তরুণরাই সাধারণত বেশি ভিড় করে এই দোকানটিতে। এর মধ্যে, নাফিজ নামে এক তরুণ দোকানের বিক্রেতার কাছে চকলেট চাইলেন। বিক্রেতা আরমান কিটক্যাট চকলেট বের করে দিলেন। কিন্তু নাফিজের সরাসরি না। আরমান বললেন, ভাই অরিজিনাল, ইন্ডিয়ান কিটক্যট। নাফিজ বললেন, ভাই বাংলাদেশী নক (অলেম্পিক ফুডস এর চকলেট) দেন। আমি ইন্ডিয়ান চকলেট খাব না। ভারতীয় পণ্য আমি আর কিনব না। ভারত আমাদের শোষণ করে। আমাদের কাছে বিক্রি করে, সেই ব্যবসার টাকায় বর্ডারে আমাদের লোক মারে। আমাদের রাজনীতিটাই ওরা শেষ করে দিয়েছে।
একটু সামনে এগিয়ে গেলেই পশ্চিম তেজতুরি বাজারে ডেইলি স্টার অফিসের পাশের গলি। গলির ভেতরে প্রবেশ করতেই বাজার। সেখানেই বাজার করছিলেন এনসিসি ব্যংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত সাহেব। প্রতি শুক্রবার বাড়ির সবধরনের বাজারই করেন তিনি। তিনিও শুক্রবারের বাজারের তালিকা ধরে পিঁয়াজ, তেলসহ সবই কিনছিলেন। পিঁয়াজের দোকানদার বললেন, দেশীয় পিঁয়াজ ৯০ টাকা। আর ইন্ডিয়ানটা একটু কম আছে। লিয়াকত সাহেব দোকানদারকে বললেন, ইন্ডিয়ানটা ফ্রী দিলেও নিবো না। এবার একটি সুযোগ এসেছে ইন্ডিয়াকে শিক্ষা দেয়ার। আমাদের দেশটাকে ওরা শেষ করে দিয়েছে। আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ সংস্কৃতি সব কিছুতেই ওদের একপ্রকার জবর দখল চলছে। স্বাধীন দেশ হয়েও, আমাদের সব কিছুতে ওদের হস্তক্ষেপ কেন করতে হবে? ফেসবুকে দেখলাম, কিছু মানুষ ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। আমি মনে করি এই আহ্বানে সবাইকে সাড়া দেয়া উচিৎ। না হলে ভারত আমাদের সব দখল করে নেবে।
সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজারে মিলি বেগম এসেছেন সাপ্তাহিক বাজার করতে। মিলি বেগম দোকানীর কাছে সাবান, শ্যম্পুসহ টয়লেট্রিজের একটি তালিকা ধরিয়ে দিলেন। সাথে বললেন, ইন্ডিয়ান কোনো জিনিস দিও না। একই অবস্থা খেঁটে খাওয়া সাধারণ মানুষেরও। তাঁরা বলছেন, প্রথম একটু কষ্ট হবে। কারণ, গরু, চাল, ডাল, পিঁয়াজসহ অনেক জিনিসই ইন্ডিয়া থেকে আসে। দামও কম। দেশী জিনিসের দাম একটু বেশি হলেও, আমরা বুধবার থেকেই ইন্ডিয়ান মাল কেনা বাদ দিয়েছি। আমরা মনে করি, শিক্ষিত ধনিরা যদি ইন্ডিয়াকে না বলে দেয়, তাহলেই কাজ হয়ে যাবে। প্রয়োজনে ওদের গরুর মাংস খাব না। দেশী পিঁয়াজ কিনব। কম খাবো। দেশী খাব। ইন্ডিয়া আউট।
এদিকে বাংলাদেশে ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামের যে ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে সেটি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে দেশটির প্রতি বিরোধীদের মনোভাবে বিস্ময়কর পরিবর্তন এসেছে। সম্প্রতি ভারতের ইউটিউবার পালকি শর্মার শো’তে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারত বিতাড়ণ বা ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন প্রথম শুরু করে মালদ্বীপ। এবার সেটি বাংলাদেশে শুরু হয়েছে। বিশেষ করে দেশটির বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এটি লুফে নিয়েছে। এই দলটির দীর্ঘদিন দেশ শাসন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা ২০০৯ সালে ক্ষমতা হারায় এবং ২০১৪ সালের নির্বাচন তারা বর্জন করে। ২০১৯ সালে তারা ৫টি আসন পায়। সুতরাং এই দলটি এখন সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালানো ‘বয়কট ইন্ডিয়া’ ক্যাম্পেইনটি একটি একাউন্ট (পিনাকী ভট্টচার্য্য) শুরু করেছেন। যে একাউন্ডটিতে ৫০ হাজারেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে। অন্য একটি একাউন্ট থেকেও ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্পর্কিত হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইন চালানো হয়। ওই একাউন্ট থেকে চালানো প্রচারণায় বলা হয় ইন্ডিয়া বাংলাদেশকে ধংস করছে।
ভ্যানটেজের সঙ্গে করা ওই অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক পালকি শর্মা ফাস্টপোস্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। ভ্যান্টেজ হল ফার্স্টপোস্টের একটি গ্রাউন্ড ব্রেকিং নিউজ, মতামত এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স শো। বিশ্বব্যাপী শ্রোতাদের জন্য, ভ্যান্টেজ-৩৬০ ডিগ্রি দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে বড় খবর কভার করে, যা দর্শকদের একটি অনন্য ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে বিশ্ব ঘটনাগুলির প্রভাব মূল্যায়ন করার সুযোগ দেয়।
খবরের গতানুগতিক ধারা ভেঙ্গে, ভ্যানটেজের লক্ষ্য হল প্রচলিত প্রজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করা এবং বৈশ্বিক বিষয়ে একটি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা। সেইসঙ্গে আদর্শকে অস্বীকার করা এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গির দরজা খুলে দেওয়া। পালকি শর্মার ওই শো’তে বলা হয়, নয়াদিল্লি এটি উল্লেখ করেনি যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। গত দশকে বাংলাদেশ সমানতালে ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করেছে। দিল্লির সঙ্গে বাংলাদেশের ভবিষ্যত জড়িত এ বিষয়টি অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পালকি শর্মা বলেন, শেখ হাসিনার নতুন কেবিনেটেও ভারতের প্রতি সংবেদনশীল মন্ত্রী রয়েছে। যা এর আগের কেবিনেটেও ছিলো। এর মধ্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন যিনি অনেক সঙ্কটকালীন সময়ে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়া সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাকের কথাও বলা হয় ওই শো’তে।
তবে এই দুইজন এবারের মন্ত্রিসভায় না থাকা এবং পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের শক্ত উপস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করে পালকি শর্মা এই ভারত বিরোধী ক্যাম্পেইন যে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সেটিও ইঙ্গিত করেন। প্রায় সাড়ে ৪ মিনিটের ওই বিশ্লেষণে উঠে আসে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও চীনের নতুন মেরুকরণের বিষয়টিও।
পালকি শর্মা ছাড়াও অন্যান্য ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারণা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।