১৯৯৯ সালে বালু নদীতে অনেক মাছ ধরেছি। দূষণের ফলে ধীরে ধীরে মাছের সংখ্যা কমতে কমতে শেষ। এ নদীতে সাঁতার কেটে বড় হয়েছি। আমাদের মা-বোনেরা এ নদীর পানি ব্যবহার করে রান্নাসহ প্রয়োজনীয় সব কাজ সারতেন। বর্তমানে বালু নদীর পানির এতই বেহাল দশা যে, এ পানি আমরা এখন ছুঁয়েও দেখি না।
অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই কথাগুলো বলছিলেন নদী তীরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ আয়োজিত ‘নদী দূষণ এবং নারীর সমস্যাসমূহ’ শীর্ষক ‘নদী-কথনে’ এ সব কথা বলেন তিনি। বালু নদীর পাড়ে খিলগাঁওয়ের ত্রিমোহনী ইটখোলায় অনুষ্ঠিত হয় এ নদী-কথন।
নদী-কথনে বারোগ্রাম (বালু নদীর পাড়ের ১২টি গ্রাম) সমিতির সভাপতি সুরুজ মিয়া বলেন, নব্বইের দশকে এই নদীর মোহনায় আমরা গোসল করতাম, মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ঢাকা শহরের বিষাক্ত বর্জ্য নড়াই, জিরানি খাল আর দেবদোলাই খাল দিয়ে বালুতে এসে পড়ে। আমরা এ পানি আর দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে পারি না। শহরের শিক্ষিত মানুষের বর্জ্য আমরা আমাদের বুকের উপর দিয়ে যেতে দিতে পারি না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শারমিন্দ নিলোর্মী বলেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ সভ্যতাই পানি বা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। পানির প্রবাহের সঙ্গে এর মানের সম্পর্ক ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্যতার অভাবে দরিদ্র নারী ও শিশুরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। নদীকে বাঁচাতে আন্দোলন করতে হবে। আর কোনো আন্দোলনই ব্যর্থ হয় না। তার কোন না কোন প্রভাব সমাজে থেকে যায়।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, বালু নদীর দূষণ নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এসব এলাকার মানুষের আন্দোলন দীর্ঘদিনের। আমরা চাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়ে বালু নদী আবার দূষণমুক্ত হবে। সারা পৃথিবীর সব পানি, পৃথিবীর সব মানুষকে বাঁচাতে হবে। যে অবস্থায় আমরা পানি ও প্রকৃতি পেয়েছি, আগামী প্রজন্মকে অন্ততপক্ষে সে অবস্থায় দিয়ে যেতে হবে।
সাংবাদিক সাদিয়া চৌধুরী বলেন, শিল্প-কারখানা হবে, তবে এসবের বর্জ্যগুলো যেন পরিশোধিত হয়ে নদীতে আসে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা কৃষিকাজ করতেন। কিন্তু আজ আমরা উন্নয়ন মানেই মনে করি রাস্তাঘাট নির্মাণ আর কারখানা স্থাপন। কিন্তু কারখানার বর্জ্যে দূষিত নদীকে আমরা বাঁচাতে পারছি না। নদী বাঁচাতে আমাদের আরও বেশি আন্দোলন করতে হবে।
নদী-কথনে আরও উপস্থিত ছিলেন যুব বাপার কেন্দ্রীয় সদস্য তানজিলা আহমেদ, সাবেক নাসিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য আসমা খাতুন, বারোগ্রাম সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।