মাহবুব আলী খানশূর, যুক্তরাজ্য: এশিয়া ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে যে সময় হিজাব ও নেকাব পরিধানে নানা বিধি নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে, সে সময় হিজাব পরিধানকে সম্মান জানিয়ে বিরাট এক ভাস্কর্য অবমুক্ত করতে যাচ্ছে খ্রিস্টান প্রধান দেশ ব্রিটেন। আর এই ভাস্কর্যের নাম দেয়া হয়েছে ঃ ‘ দ্যা স্ট্রেন্থ অব দ্যা হিজাব ’ বা ‘হিজাবের শক্তি’। ব্রিটিশ সরকার মনে করে, হিজাবকে সমর্থন জানিয়ে এ ধরনের ভাস্কর্য বিশ্বে এই প্রথম নির্মিত হয়েছে।
ব্রিটেনের স্মারক ভাস্কর্যের জন্য সুপরিচিত বিখ্যেত আর্টিস্ট লুক পেরীর ডিজাইন করা ওই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের স্মেথউইক এলাকায়। ভাস্কর্যটিতে হিজাব পরা একজন মুসলিম নারীকে চিত্রিত করা হয়েছে। এর নির্মাণকাজ পরিচালনা করছে লিগ্যাসি ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস নামে একটি নিবন্ধিত দাতব্য সংস্থা। আগামী অক্টোবরে এই ভাস্কর্যটি সবার জন্য খোলে দেয়া হবে। পাচঁ মিটার লম্বা এবং প্রায় এক টন ওজনের ওই ভাস্কর্যের পাদদেশে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ঃ it is a woman’s right to be loved and respected whatever she chooses to wear. Her true strength is in her heart and mind. (একজন নারী যা পরিধান করতে ভালোবাসেন, সেটা তার অধিকার। তাকে সম্মান করা উচিত। তার প্রকৃত শক্তি তার হ্রদয়ে ও মননে।) ওই লেখার একটু উপরে বাংলায় লেখা রয়েছে ঃ ‘ তোমার পুরোনো পৃথিবীতে তোমার সন্তানকে ধরে রেখো না, চাকা তো নতুন সময়ের শিশু ঃ জীবনানন্দ দাশ ’।
লুক পেরি বার্মিংহাম মেইলকে জানান, নকশাটির ধারণা প্রথমে আমার মাথায় আসে কিছু মুসলিম নারীদের সঙ্গে কথা বলে। কমিউনিটি কানেক্ট ফাউন্ডেশনে আমি তাদের সঙ্গে কাজ করেছিলাম। আমি তাদের কাছে জানতে চাই তারা কোন ধরনের শিল্পকর্ম দেখতে চায়? তারা বলেছিলেন, তাদের কোন প্রতিরূপ নেই, আমাদের মত দেখতে কিছুই নেই। তাই তারা তাদের সন্তানদের এমন জিনিস দেখাতে চান, যা তাদের সংস্কৃতির সাথে যায়। শুধু ধনী শ্বেতাঙ্গদের ইতিহাস তারা জানতে চায় না।
ভাস্কর্যটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডিজাইনার পেরি বলেন, ‘ হিজাবের শক্তি’ এমন একটি অংশ যা ইসলামী বিশ্বাসের হিজাব পরিধানকারী নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, হিজাবী নারীদের সবার সাথে স্বাভাবিক হওয়া প্রয়োজন। তাই ডিজাইনগুলি নিয়ে এই কমিউনিটির সঙ্গে কাজ করা সত্যিই আনন্দের। কারণ আমরা এখনও অবধি এটি দেখতে কেমন হবে তা জানি না। আর যেখানে ভাস্কর্যটি স্থাপিত হচ্ছে সেখানে ‘ইসলামী বিশ্বাস থেকে আসা সম্প্রদায়ের একটি বিশাল অংশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
পেরী আরো বলেন, ‘হিজাব এমন একটি বিষয় যা সম্পর্কে লোকেরা খুব দৃঢ়ভাবে অনুভব করে। নারীরা এতে খুশি এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তবে এটি এমন কিছু নয় যা নিয়মিতভাবে দেখা যায়, বিশেষ করে পাবলিক আর্টে। তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, নতুন ভাস্কর্যটি ‘বিতর্কিত’ হতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী প্রত্যেকের এ বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করা গুরুত্বপূর্ণ। পেরি বৃটিশ ইতিহাসের ভাস্কর্যও ডিজাইন করেছেন, যা মে মাসে উইনসন গ্রিনের কাছাকাছি স্থাপন করা হয়েছিল।
সাধারণ মানুষ ব্যতিক্রমী হিজাবের এই ভাস্কর্য কেমন ভাবে নিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ডিজাইনার পেরী জানান, সাধারন মানুষের প্রতিক্রিয়া সত্যিই সত্যিই খুবই ইতিবাচক। মানুষ ভাস্কর্যের কিছু ছবি দেখেছে, কিন্তু তারা সরাসরি তা দেখেনি। তারা যখন ভাস্কর্যটি দেখবে আমি মনে করি তার সাইজ দেখে তারা সত্যিই মুগ্ধ ও আশ্চর্য হবে। আর সেটি হবে আমার ও তাদের জন্য সত্যিই সন্তোষজনক বিষয়। আমি মনে করি এই কমিউনিটির জন্য একটি ভালবাসা ও গৌরবের অংশ হতে যাচ্ছে ওই ভাস্কর্য।