হাবিবুর রহমান, ঢাকা: ডলারকে হটিয়ে রুপি এবং টাকায় লেনদেন আরও বৃদ্ধি করার তাগিদ উঠে এলো ভারত ও বাংলাদেশের বৈঠকে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, আমরা রুপিতে বাণিজ্যের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি, তা আরও বাড়িয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা দরকার।
তিনি বলেন, বর্তমানে ভারত অন্যান্য দেশ থেকে যেসব দ্রব্য আমদানি করে, তার মধ্যে যেগুলো বাংলাদেশে পাওয়া যায় সেগুলো আমরা বাংলাদেশ থেকে আমদানি করতে আগ্রহী।
বাংলাদেশের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্যের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি, তা আরও বাড়িয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
ঢাকায় শিল্প মন্ত্রকে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। এসময় শিল্প মন্ত্রক ও ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট আধিকারীকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উভয় পক্ষ ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ভারত মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। এসএমইখাতকে দু’দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা একে অন্যের কাছ থেকে শিখতে পারি।
বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী বলেন, আমরা টেকনোলজিখাতে এবং সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল সরবরাহের জন্য ভারতের সহযোগিতা নিতে পারি।তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিএসটিআই এবং বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ডে (বিএবি) সঙ্গে ভারতের সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা দরকার।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের সার কারখানাগুলোতে সার উৎপাদিত হচ্ছে এবং আমদানিকৃত সারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। আশা করি, আগামী মৌসুমে সারের কোনো সংকট হবে না।
এদিকে বাংলাদেশ জানিয়েছে, অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানিতে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে চিনে রপ্তানি বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ শতাংশেরও বেশি।
তবে ভারতে এ সময় রপ্তানি কমে গেছে ১৪ শতাংশের মতো। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ছয় মাসে চিনে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলারের মতো।
আগের তুলনায় রপ্তানি বাড়ার ফলে দেশ হিসেবে চিনের হিস্যা আরও বেড়েছে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ে চিনের অংশ এখন ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদ উল্লাহ আজিম জানান, চিনে শীতের পোশাকের চাহিদা বেশি। শীতে সোয়েটার জাতীয় পোশাক বেশি রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে।
এ ধরনের পোশাকের মূল্য সাধারণ পোশাকের দ্বিগুণেরও বেশি। এ কারণে চিনে রপ্তানি বেশি হয়েছে। অন্যদিকে ভারতে শীতের পোশাকের চাহিদা কম। সে কারণে সাধারণ পোশাকই সেখানে বেশি যায় যেগুলোর দাম তুলনামূলক কম। ১০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক ছাড়াও অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয় ৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের।
৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াপণ্য রপ্তানি হয়। এর বাইরে হোম টেক্সটাইল, প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে গত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ভারতে রপ্তানির পরিমাণ ৯৮ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ১১৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ ভারতে রপ্তানি ১৪ শতাংশের মতো কমে গেছে।