- মালয়েশিয়ায় পণ্য বয়কট, কেএফসি’র ১০০ আউটলেট বন্ধ
- ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিল কলম্বিয়া
- স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে যা বললেন বিট্রিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান বিক্ষোভ আরও দানা বাঁধছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের অন্তত আরও ৭ দেশে। যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএল ও ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁবু গেড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউবেক ক্যাম্পাসে। দেশটির মন্ট্রিলের কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও ফিলিস্তিনপন্থীরা বিক্ষোভ করছেন। এছাড়া মিসরের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি জন কায়রো ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয়েছে। এরপর ফ্রান্সের সায়েন্সেস পো অ্যান্ড সারবোন ও ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজ ক্যাম্পাস এবং ইতালির স্যাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও হয়েছে বিক্ষোভ।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সপ্তাহ দুয়েক আগে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসে অস্থায়ী শিবির বসিয়েছেন। কয়েক দিন ধরে চলা এ বিক্ষোভ দমনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। তারা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শত শত শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছেন। কিছু কিছু ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর শক্তিপ্রয়োগ করেছেন পুলিশ সদস্যরা। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্যেও ক্যাম্পাসগুলোতে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় সমর্থন দেওয়া ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে অভিযানে গাজায় যুদ্ধবিরোধী ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় বহু বিক্ষোভকারীকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরাইল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানি এবং ব্যক্তিকে বর্জনের ডাক দিয়ে চলছে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাবু গেঁড়ে ধারাবাহিক প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা। এ ঘটনায় সোমবার বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সময় দুপুর ২টার মধ্যে শিবির ছেড়ে না গেলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলেও আলটিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আলটিমেটামে কাজ না হওয়ায় নিউইয়র্ক সিটিপুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অভিযান চালায়। পুলিশ প্রবেশের পর ২ ঘণ্টার মধ্যে হ্যামিল্টন হল ও ওই তাবু শিবির থেকে সবাইকে হটিয়ে দিয়ে সেগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় বহু বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতারদের হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে পাহারা দিয়ে পুলিশের বাসগুলোতে তুলে নেওয়া হয়।
মালয়েশিয়ায় পণ্য বয়কট, কেএফসি’র ১০০ আউটলেট বন্ধ ঘোষণা
ইসরাইলকে সমর্থন ও ক্ষোভের মুখে মালয়েশিয়ার অন্যতম ফাস্টফুড চেইন রেস্টুরেন্ট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কেএফসি। গত কয়েকমাস ধরে দেশটিতে চলমান ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুতে শুরু হওয়া ইসরাইল পণ্য বয়কটকারীদের অভিযোগ, প্রথম থেকে অন্যায্যভাবে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন করে আসছে কেএফসি। তারই জের ধরে, কিউএসআর ব্র্যান্ডস মালয়েশিয়া হোল্ডিংস বারহাদ, টানা কয়েক মাস খুলে রাখার চেষ্টার পর দেশব্যাপী ১০০ টিরও বেশি কেএফসি’র আউটলেট সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দেশটির কেলান্তান রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে এ বয়কট। সেখানে প্রায় ৮০% বা ২১টি আউটলেট বন্ধ করা হয়েছে, এরপর জোহর রাজ্যে ১৫টি আউটলেট বন্ধ রয়েছে। এদিকে দেশটির তীব্র বয়কটে কেএফসি ছাড়াও, স্টারবাকস এবং ম্যাকডোনাল্ডের মতো আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড গাজায় চলমান সহিংসতার মধ্যে ইসরায়েলকে সমর্থনের কারণে তীব্র বয়কটের মুখে পড়েছে।
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিল কলম্বিয়া
ফিলিস্তিনের গাজায় হামলার কারণে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। স্থানীয় সময় বুধবার তিনি এ ঘোষণা দেন। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে জড়ো হওয়া মানুষের সামনে পেত্রো বলেন, তার দেশ বৃহস্পতিবার ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাচ্ছে। গাজায় হামলার শুরু থেকেই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচনা করে আসছেন পেত্রো। তিনি অন্যান্য দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসছেন।
লোকভর্তি জনসমাগমস্থলে পেত্রো তার ঘোষণায় বলেন, আপনাদের সামনে প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিচ্ছেন যে, আগামীকাল আমরা ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কগুলো ছিন্ন করব…’। পেত্রো তার বক্তব্যে ইসরাইলের রাষ্ট্রপ্রধানকে গণহত্যাকারী বলে আখ্যা দেন। পেত্রো আরও বলেন, গাজার এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের কোনো দেশ নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না।
গত বছরের অক্টোবরে গাজায় হামলার পরপরই ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দক্ষিণ আমেরিকার আরেক দেশ বলিভিয়া। সেসময় কলম্বিয়া, চিলি ও হন্ডুরাসসহ দক্ষিণ আমেরিকার আরও কয়েকটি দেশ ইসরাইল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এদিকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইসরাইল। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাটজ অভিযোগ করে বলেছেন, পেত্রোর এই ঘোষণা ‘ইহুদিবিদ্বেষী ও ঘৃণায় পরিপূর্ণ’। তার এই পদক্ষেপ হামাসের জন্য পুরস্কার।
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে যা বললেন বিট্রিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গত বছরের অক্টোবর মাসে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর নতুন করে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আলোচনা সামনে আসে। দ্বি-রাষ্ট্র তথা দুটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকেই ওই অঞ্চলে শান্তির উপায় হিসেবে দেখছেন অনেকে। তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ‘কঠিন হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার বার্তাসংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে হাউস অব লর্ডসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক অধিবেশনে ক্যামেরন বলেন, পশ্চিম তীরে ইসরাইলের নির্মিত অবৈধ বসতি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। হাউস অব লর্ডসের এই কমিটির সাত বছরের পুরোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান ‘অসম্ভব’ হয়ে উঠতে পারে এবং ‘কোনো পক্ষের কাছেই আর এটি কার্যকর হবে না’। এই রিপোর্টের বিষয়ে ক্যামেরন বলেন, ‘পশ্চিম তীরে ইসরাইলের বসতি স্থাপনের কারণে এটি (ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা) কঠিন হয়ে উঠছে, তাই প্রযুক্তিগতভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং আমাদের এটি সম্পর্কে ভাবতে হবে।’
ব্রিটিশ এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘… এটা কঠিন হয়ে গেছে, কিন্তু এটা অসম্ভব নয়… ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রকে সাহায্য করার জন্য স্বীকৃতি দেয়াটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে শুধুমাত্র সবাই স্বীকৃতি দিয়ে একটি রাষ্ট্র তৈরি করতে পারে না। এমন জিনিসগুলো নির্ধারণ করতে হবে যা আসলে একটি রাষ্ট্র তৈরি করে: একটি সরকার, তাদের শাসন করার ক্ষমতা …।’
ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি আসবে না মন্তব্য করে ক্যামেরন বলেন, ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তা স্থিতিশীলতা নেই। সুতরাং আপনি যদি দেখেন, উদাহরণস্বরূপ, সৌদিরা ইসরাইলের সঙ্গে এই স্বাভাবিকীকরণ চুক্তির করার চেষ্টা করেছে, এটি স্পষ্টতই সৌদি আরবের জন্য একটি বিশাল পদক্ষেপ, ইসরাইলের জন্যও বড় পদক্ষেপ, তবে এই পদক্ষেপের একটি অংশ হবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র তৈরি করা।