ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালতে একটি মামলায় জামিনের পুট আপ ই-মেইলে পাঠালাম। পরদিন মোবাইলে ফোন দিয়ে বলল আমি অতিরিক্ত মহানগর কোর্টের পেশকার। স্যার আপনি কি মামলার আজ শুনানি করবেন? আমি হ্যাঁ বলতেই বলল সাড়ে এগারটায় কোর্টে চলে আসুন। আমি তাকে বললাম বাসায় আছি, তাছাড়া কোর্ট গাউন চেম্বারে। এত অল্প সময়ে পৌঁছাতে পারবো না। তিনি বললেন, গাউন লাগবে না। আপনি সোজা কোর্টে আসুন। বিচারক আপনার মুখ দেখবে, গাউন না।
পৌঁছানোর পর পেশকার তার মোবাইল আমার দিকে এগিয়ে বলল শুনানি করুন। আমি তার মোবাইল দিয়ে শুনানি করলাম। জামিন পেলাম। পেশকারকে তার পাওনা বুঝিয়ে দিলাম।এভাবেই ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন ঢাকা অাইনজীবী সমিতির সাবেক কার্যকরি সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আসাদুজ্জামান বাবু।
একটা বেইল পিটিশন করতে প্রথমে আমাকে জিআর শাখা থেকে দুদিন চেষ্টা করে নথি তুলতে হলো। এরপর বারের নির্দিষ্ট বুথ থেকে ওকালতনামা সংগ্রহ করে কারাগার থেকে স্বাক্ষরের জন্য ড্রেসপাস শাখার মাধ্যমে স্বাক্ষর করিয়ে আনলাম। পিটিশন রেডি করে বারের নির্ধারিত ফরমে দোকান থেকে প্রিন্ট দিলাম। এরপর জামিন আবেদন স্ক্যান করে ইমেইলের মাধ্যমে পাঠালাম। এরপর শুনানির তারিখের জন্য অপেক্ষা। এসব বলছিলেন ঢাকা কোর্টের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম।
কেবল আসাদুজ্জামান বা খাদেমুল ইসলাম নয়, সারা দেশের নিম্ন আদালতের আইনজীবীদের ভার্চুয়াল কোর্টের চিত্র এটি। ভার্চুয়াল বলা হলেও কোর্টে না গিয়ে কাজ করতে পারছেনা আইনজীবীরা। আর এতে আগের তুলনায় ঝামেলা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে অনেক আইনজীবীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভও প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তাই স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করে নিয়মিত কোর্ট চালুর দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সাবেক সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মেহেদী।
এদিকে তারা দুজন প্রধান বিচারপতির কাছে অাবেদন করলেও অনেক আইনজীবীই এতে একমত পোষণ করেছেন। তাদের মতে কেবল শুনানি ভার্চুয়াল পদ্ধিতে হলেও বাকি সব অাগের মতো। তবে শারীরিক দুরুত্বের কথা চিন্তা করে এখনিই নিয়মিত কোর্টের বিরুদ্ধেও রয়েছেন অনেকে। তারা নিয়মিত কোর্টের বদলে পদ্ধতির পরিবর্তন চান। যাতে অাবেদন থেকে শুনানিসহ সকল কাজ অনলাইনে করা সম্ভব হয়।
অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বলেন, বেইল বন্ড কেনা থেকে শুরু করে দাখিল পর্যন্ত সবই স্ব শরীরে কোর্টে উপস্থিত থেকে করতে হচ্ছে। এটা যদি ভার্চুয়াল হয় তাহলে এমন ভার্চুয়াল কোর্ট আমি অন্তত চাই না। মুহুরীদের রীতিমত ঈদ উৎসব লেগেছে! রাতারাতি তারা উকিল বনে গেছেন। কিছু কোর্টে তো ভিডিওর বদলে অডিও শুনানি হচ্ছে।
খাদেমুল ইসলাম বলেন, পুরো পদ্ধতি আগের মতোই। ইমেইলে পাঠানো ও ভিডিও কনফারেন্সে শুনানি এতটুকুই ভার্চুয়াল। এরপর জামিন হলে বেইল বন্ড জমা দেওয়া, না হলে নকল তুলে বিবিধ আপিল করা আবার আগের পদ্ধতিতেই। একটা জামিনের আবেদন করতে ৩/৪ দিন কোর্টে যেতে হলে এই পদ্ধতিতে অাইনজবীবীদের সুরক্ষা কোথায়, এমন পশ্ন তোলেন তিনি।
ফরিদপুর জজকোর্টের আইনজীবী মোসাদ্দেক আহমদ বশির বলেন, একটি মামলা শুনানি করতে একাধিক জায়গায় স্ব-শরীরে যেতে হচ্ছে। ওকালতনামা সংগ্রহ, জেল থেকে সংশ্লিষ্ট আসামির স্বাক্ষর গ্রহণ করতে হচ্ছে। ই-নথি না হওয়ায় সময় মতো নথিও যাচ্ছে না আদালতে।
বশির বলেন, নথি না পাওয়ার অজুহাতের জন্য তদবির করতে সেকশনে যেতে হচ্ছে। এছাড়া আবেদন প্রিন্ট হওয়া থেকে শুরু করে বেইল বন্ড প্রেরণ পর্যন্ত ঘাটে ঘাটে মোটা অংকের ঘুষ প্রদান করতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তাই ভার্চুয়াল কোর্টের উদ্দেশ্য সফল করতে দ্রুত পদ্ধতির পরিবর্তন চান এই আইনজীবী। আস