তারেকুর রহমান, ঢাকা: শীত জেঁকে বসেছে। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। কর্মপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ছুটিও শেষপ্রান্তে। বছরের এ সময় ভ্রমণপিপাসুরা বেরিয়ে পড়েন প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে। ঘর হতে দুই পা ফেলার কথা মনে হলেই আমাদের মনে প্রথমে আসে কক্সবাজারের নাম। সমুদ্রের নীল জলরাশি, দীর্ঘ সৈকত, পাহাড়, বন, জলপ্রপাত এবং প্রবালদ্বীপের এমন দুর্দান্ত প্যাকেজ দেশের আর কোথাও মিলবে না। সব মিলিয়ে পর্যটনবান্ধব কক্সবাজার শহরও কম আকর্ষণীয় নয়। এই শহরের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্য। সাগরপাড়ের এই শহর শুধু দেশের পর্যটকদের কাছেই নয়, বিদেশের ভ্রমণপ্রেমীদেরও হাতছানি দিয়ে ডাকে। সেই ডাকে সাড়া দিতে চাইলে বেরিয়ে পড়ার এখনই সময়। মনে রাখতে হবে, কক্সবাজারের প্রতিটি স্থানই অনন্য। বেশির ভাগ পর্যটক সমুদ্রসৈকত ঘুরে চলে আসেন। ফলে কক্সবাজারে আরো অনেক দর্শনীয় স্থান না-দেখাই রয়ে যায়।
জাহাজপুরা গর্জন ফরেস্ট
কক্সবাজার মানেই ‘সমুদ্রের শহর’ কথাটি সঠিক নয়। সমুদ্র তো আছেই, তবে সমুদ্রের একঘেঁয়েমি কাটাতে আপনি শহরের আশপাশেও ঢুঁ দিতে পারেন। শহর থেকে মেরিনড্রাইভ সড়ক দিয়ে ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী গর্জন বৃক্ষের বাগান। বাগানে প্রায় ৬ হাজার গর্জন গাছ রয়েছে। একেকটি গাছ লম্বায় ৭০ থেকে ৮০ ফুট। ফলে বাগানের একটু গহীনে সূর্যের আলো-আঁধারের অপরূপ দৃশ্যে আপনি মুগ্ধ হবেন! শতবর্ষী গাছ এবং সেখানকার সবুজ অরণ্যে গড়া পার্ক পর্যটকদের অন্য রকম ভালোলাগার জায়গা।
কক্সবাজার থেকে সরাসরি রির্জাভ গাড়িতে ৪ হাজার টাকার মধ্যে জাহাজপুরা যাওয়া যাবে। স্থানীয় বাসে গেলে কক্সবাজার থেকে শামলাপুর জনপ্রতি ১৫০ টাকা, শামলাপুর থেকে ২০ টাকা লাগবে ফরেস্টের সামনে যেতে। ইচ্ছে করলে এখানে আপনি রাত কাটাতে পারেন ‘ছুটি’ ইকো রিসোর্টে। সেখানে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। সামুদ্রিক কোরাল, ফাইশ্যা, সুরমা, লইট্টা, চিংড়ি এবং অন্যান্য পাঁচমিশালি মাছের ফ্রাই এবং কারি সেখানকার স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে পাওয়া যাবে।
মেরিন ড্রাইভ
কক্সবাজার-টেকনাফ দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভের দৈর্ঘ্য ৮০ কিলোমিটার। সড়কটি বঙ্গোপসাগরের পাশ দিয়ে কক্সবাজারের কলাতলী সৈকত থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি বর্তমানে পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ সড়ক। পশ্চিম পাশে বিশাল সমুদ্র আর পূর্বে পাহাড়। সমুদ্র আর পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে এই সড়ক। যে কোনো যানবাহনে ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যে ঘুরে আসা যাবে ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘের সড়কটি। পুরো মেরিন ড্রাইভ ঘুরে বেড়াতে রিজার্ভ গাড়ি নিলে ৬ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। লোকাল গাড়িতে গেলে কক্সবাজার থেকে সাবরাং জনপ্রতি ৩০০ টাকা খরচ হবে।
সড়ক ভ্রমণে পথিমধ্যে কেউ কিছু খেতে চাইলে অসংখ্য রেস্তোঁরা রয়েছে এখানে। সামুদ্রিক হরেক রকমের মাছের ফ্রাই, কারি ও ভর্তা পাবেন। তবে খাওয়ার আগে দাম জেনে নেওয়া ভালো। আর রাত্রিযাপনের জন্য বিভিন্ন ইকো রিসোর্ট রয়েছে। মনমতো বেছে নিলেই হবে।
মাথিনের কূপ
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাফ নদীর কোল ঘেঁষে টেকনাফ থানা চত্বরে মাথিনের কূপ অবস্থিত। আঠারো শতকের শেষ ভাগে টেকনাফে পানির অভাব পুরণের জন্য মাত্র একটি সুপেয় পানির কূপ ছিল। থানা প্রাঙ্গণের এক কূপ থেকে রাখাইন তরুণীরা প্রতিদিন পানি নিত। পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্য কলকাতা থেকে এই থানায় বদলি হয়ে আসেন। ঘটনাচক্রে এই কূপে পানি নেওয়ার সময় ধীরাজের সঙ্গে রাখাইন তরুণী মাথিনের পরিচয় হয়। এরপর দুজনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরের ঘটনা ইতিহাস সচেতন পাঠকের অজানা নয়। সেই হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আজও রয়েছে সেই কূপ। এবং এই কূপ ঘিরেই গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্র।
ধীরাজ ও মাথিনের প্রেমের নিদর্শনটিকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সংরক্ষণ করে ‘মাথিনের কূপ’ নামকরণ করেন। টেকনাফ গেলে এই কূপ না-দেখে কেউ ফেরেন না। কূপের পাশে ধীরাজের ভাস্কর্য ও প্রেমকাহিনি লেখা রয়েছে।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ শহরের থানার সামনে গেলেই মাথিনের কূপের দেখা মিলবে। শ্রেণি ভেদে বিভিন্ন যানবাহনের কক্সবাজার থেকে সিট ভাড়া ২৫০ টাকা। তবে চাঁদের গাড়িতে রিজার্ভ করে গেলে ৩ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হবে। মাথিনের কূপ দেখতে গেলে যদি রাত্রিযাপন করতে চান তবে টেকনাফ শহরে ছোট-বড় অনেক আবাসিক হোটেল ও কটেজ রয়েছে। সেখানে থাকতে পারবেন।
নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের তাজা এবং সুস্বাদু মাছের জন্য টেকনাফের খ্যাতি রয়েছে। এখানে সামুদ্রিক কোরাল, পোয়া, সুরমা, লইট্টা, চিংড়ি, এবং অন্যান্য পাঁচমিশালি মাছের ফ্রাই ও কারি স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে পাওয়া যায়।
নেচার পার্ক
টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়ার এলাকায় ‘টেকনাফ নেচার পার্ক’ অবস্থিত। এটি টেকনাফ শহর থেকে ৯ কিলোমিটার উত্তরে। পর্কের সবুজ সমারোহে পাহাড়ি পরিবেশ দেখলে যে কারো প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। টেকনাফ শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ২৫০ টাকার মধ্যেই এ পার্কে যাওয়া যাবে। এখানেও থাকা এবং খাওয়া এবং যাতায়াত টেকনাফ শহরকেন্দ্রিক।
টেকনাফ জেটি
টেকনাফ শহরের পূর্বপাশে নাফ নদীর উপরে টেকনাফ জেটি অবস্থিত। টেকনাফ গেলে এই জেটি দেখে আসতে ভুলবেন না। জেটিতে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে মিয়ানমার দেখা যায়। এমনকি মিয়ানমারের অভ্যান্তরে পাহাড়-পর্বত ও লোকজনের আনাগোনাও দেখা যায়।
স্বপ্নতরী পার্ক
কক্সবাজারের রামুতে অবস্থিত প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুটের ‘স্বপ্নতরী পার্ক’ নতুন বিনোদন স্পট হিসেবে নজর কেড়েছে। ৩ একর জায়গাজুড়ে পার্কটিতে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় দিনদিন বাড়ছে। স্বপ্নতরী রামু উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বপাশে রশিদনগর গুচ্ছগ্রামসংলগ্ন পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। স্বপ্নতরী জাহাজ ঘিরে নান্দনিক এই পার্কে শিশুসহ নানা বয়সের মানুষের জন্য রয়েছে ব্যতিক্রমী বিনোদন ব্যবস্থা। উঁচু পাহাড় থেকে আশপাশের সবুজেমোড়া সৌন্দর্য দেখা যাবে।
কক্সবাজার শহর অথবা রামু স্টেশন থেকে রামু উপজেলার রশীদনগর হাইওয়ে সড়কের পাশেই এ পার্ক অবস্থিত। কক্সবাজার শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে সাড়ে ৩০০ টাকায় পার্কে যাওয়া যাবে। চাঁদের গাড়ি কিংবা প্রাইভেট কার নিয়ে গেলে ৩ হাজার টাকা লাগবে। স্বপ্নতরী পার্কে গেলে সেখানে থাকার তেমন প্রয়োজন পড়ে না বলে রাত্রিযাপনের উন্নত ব্যবস্থা নেই। কেউ থাকতে চাইলে রামু এসে থাকতে হবে।
নিভৃতে নিসর্গ পার্ক
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় পর্যটকদের নতুন আকর্ষণের নাম ‘নিভৃতে নিসর্গ পার্ক’। এটি চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। মাতামুহুরী নদী ও পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠেছে পার্কটি। প্রায় ১০০ একর জায়গা নিয়ে গড়া পার্কটি পর্যটকদের নজর কেড়েছে। কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া জিদ্দাবাজার থেকে পূর্বে ১০ কিলোমিটার গেলেই মিলবে এ পার্কের দেখা।
বিনোদনের জন্য পার্কে পাহাড়ের মাঝখানে মাটি কেটে বেশ কয়েকটি কৃত্রিম লেক তৈরি করা হয়েছে। লেকে রাখা হয়েছে ছোট ছোট নৌকা আর কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা। লেকের নীল জলে নৌকা ভাসিয়ে দেখা যাবে চারপাশের সাদা পাথরের পাহাড়।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটকরা কক্সবাজার শহরে না গিয়ে চকরিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে যেতে পারেন। চকরিয়া স্টেশন থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা জীপ রিজার্ভ করে সরাসরি পার্কে যাওয়া যাবে। এ ছাড়া লোকাল ওয়েতে মানিকপুর হয়ে ৪০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায় এই পার্কে। এই পাহাড়ি এলাকায় কোনো আবাসিক হোটেল নেই। পর্যটক বা দর্শনার্থী থাকতে চাইলে চকরিয়া শহরে এসে থাকতে হবে। চিংড়ির জন্য চকরিয়া বিখ্যাত। তাই রেস্তোরাঁ থেকে সুস্বাদু চিংড়ি ও সামুদ্রিক মাছ দিয়ে উদরপুর্তি করলে ঠকবেন না।
ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের অবস্থান। ১৯৯৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত। এখানে পশুপাখি মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করে। এটি বাংলাদেশের প্রথম সাফারি পার্ক। পার্কে সুরক্ষিত পরিবেশে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও সিংহ রয়েছে। পার্কে বেশ কিছু হাতি আছে, যারা পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। চিত্রা হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির হরিণও দেখতে পাবেন। কয়েকটি ভালুক সুরক্ষিত এলাকায় আছে। কুমির ও অন্যান্য জলজ প্রাণী দেখতে পাবেন। এ ছাড়াও রয়েছে ময়ূর, টিয়া, হাঁসসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। গাড়িতে চড়ে সরাসরি বন্যপ্রাণীদের দেখা এবং পার্কে বেড়াতে গিয়ে বিশ্রামের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা পার্কে রয়েছে।
কক্সবাজার থেকে সরাসরি ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে যাওয়া যায়। এতে প্রতিজন ৭০ টাকা ভাড়া লাগবে। রিজার্ভ গাড়িতে গেলে ২ হাজার টাকা খরচ হবে। পার্কের আশেপাশে বনবিভাগের রেস্টহাউস এবং পর্যটক বা দর্শনার্থীরা রাত্রিযাপন করতে চাইলে চকরিয়া শহরে থাকতে পারেন।
রামু বৌদ্ধ বিহার
রামু বৌদ্ধ বিহার কক্সবাজার জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী বিহার। এটি রামু উপজেলায় অবস্থিত। পুরাকীর্তিসমৃদ্ধ রামুতে রয়েছে অনেক প্রাচীন বৌদ্ধ নিদর্শন। রামুতে সর্বমোট ৩৫টি বৌদ্ধ মন্দির ও জাদি রয়েছে। এ ছাড়া রামু রাবার বাগান ঘুরে ভ্রমণ আরো আনন্দদায়ক করার সুযোগ তো আছেই।
রামুর উত্তর মিঠাছড়ির পাহাড়চূড়ায় রয়েছে গৌতম বুদ্ধের ১০০ ফুট লম্বা সিংহশয্যা মূর্তি। আর মাত্র ২ কিলোমিটার অদূরেই কেন্দ্রীয় সীমাবিহার নতুন করে নির্মিত হয়েছে। কিছুটা দক্ষিণে এগিয়ে গেলেই রয়েছে নজরকাড়া লালচিং ও সাদাচিং বৌদ্ধ বিহার। এছাড়াও আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোট-বড় আরও অনেক বৌদ্ধ বিহার। এখানে দেখার মতো ঐতিহ্যবাহী ও উল্লেখযোগ্য মন্দির ও বিহারগুলো হলো উত্তর মিঠাছড়ি ১০০ ফুট বৌদ্ধ মূর্তি, রামু সীমা বিহার, লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার, রাংকূট বৌদ্ধ বিহার, শ্রী শ্রী রামকুট তীর্থ ধাম ও শ্রীকুল পুরাতন বৌদ্ধ বিহার ইত্যাদি।
কক্সবাজার শহর থেকে কাছে হওয়ায় পর্যটকরা সাধারণত কক্সবাজার এসে রামু বৌদ্ধ বিহার দেখতে যায়। সেখানে ঘুরতে যাওয়ার সহজ উপায় হলো রিজার্ভ গাড়ি নেওয়া। তাহলে জনপ্রিয় স্থানগুলো সহজে ও অল্প সময়ে দেখা যাবে। ৪-৫ ঘণ্টা সময় নিয়ে গেলে মোটামুটি অনেকগুলো বৌদ্ধ বিহার ঘুরে দেখা যায়। কক্সবাজার থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়েও বৌদ্ধ বিহার থেকে অনায়াসে ঘুরে আসা যাবে। স্থানীয় যানবাহনে রামু যাওয়ার জনপ্রতি ভাড়া ৪০ টাকা। রিজার্ভ নিয়ে গেলে ৫০০ টাকা লাগবে।
আদিনাথ মন্দির
মহেশখালীর গোরকঘাটার মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় আদিনাথ মন্দির অবস্থিত। সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে এই মন্দিরের রয়েছে আধ্যাত্মিক গুরুত্ব। হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবতা মহাদেবের নামানুসারে মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে ‘আদিনাথ’। এই মন্দির কমপ্লেক্সের ভেতরে রাখাইন বৌদ্ধ বিহার ও মসজিদ আছে। এজন্য অনেকে মন্দিরটিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক হিসাবে আখ্যায়িত করেন। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে শিব চতুর্দশী উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী মেলা বসে এখানে। তখন হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।
কক্সবাজার শহর থেকে অটোরিকশা অথবা সিএনজি চালিত অটোরিকশা নিয়ে যেতে হবে কস্তুরাঘাট বা ৬ নম্বর জেটি ঘাটে। ঘাট থেকে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়ায় স্পিডবোট করে মহেশখালী ঘাটে যেতে হবে। স্পিডবোট রিজার্ভ নিলে ১ হাজার টাকা নেবে। যেতে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট সময় লাগবে। বিভিন্ন রেস্টহাউস ও পর্যটকদের রাত্রিযাপনের জন্য মহেশখালী বাজারে কম দামে আবাসিক হোটেল রয়েছে।
সোনাদিয়া দ্বীপ
কক্সবাজারের আকর্ষণীয় স্থানসমূহের মধ্যে সোনাদিয়া দ্বীপ অন্যতম। ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় বনের সমন্বয়ে গঠিত এই দ্বীপ। কক্সবাজার গিয়ে এ দ্বীপে না গেলে ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যায়। মহেশখালী উপজেলার প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের অপরূপ এই দ্বীপ সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ও মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। সোনাদিয়া দ্বীপ দেশের প্রধান শুঁটকি মাছ উৎপাদন কেন্দ্র। শীতে হাজার হাজার জেলে ঘাঁটি গেড়ে মাছ শুকিয়ে শুঁটকি বানানোর জন্য এই দ্বীপে আসে।
তিনদিকে নীল সাগর, লাল কাঁকড়া, কেয়া বন, সব মিলিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করেছে। বিভিন্ন অতিথি পাখি ও জলচর পাখিরও দেখা মিলবে দ্বীপে। এই দ্বীপে সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারেন।
কক্সবাজার কস্তুরী ঘাট থেকে স্পিডবোট বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে যাওয়া যায়। মহেশখালী ঘুরেও যাওয়া যায় এবং শহর থেকে সরাসরি বোট রিজার্ভ করেও যাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগই শহর থেকে সরাসরি যায়। তবে মহেশখালী থেকে গেলে প্রথমে ভাড়া লাগবে প্রতিজন ৭৫ টাকা।
মহেশখালী ঘাটে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে গোরকঘাটা বাজারে। ভাড়া ২০ টাকা। এরপর যেতে হবে ঘটিভাঙ্গায়, মহেশখালীর গোরকঘাটা থেকে ঘটিভাঙার দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। ৩-৪ জন হলে একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ঘটিভাঙ্গা যাওয়া যায়। ভাড়া ১৫০-১৭০ টাকা। সেখান থেকে আবার ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সোনাদ্বিয়া দ্বীপে যেতে হয়। চাঁদনি রাতে ক্যাম্পিংয়ের জন্য সেরা জায়গা সোনাদিয়া দ্বীপ। সেখানে কোনো আবাসিক হোটেল নেই। সাগরপারে ক্যাম্পিং করে তাবু টাঙিয়ে থাকা যাবে।
কক্সবাজারে পর্যটন আকর্ষণের অভাব নেই। কক্সবাজার শহরে সমুদ্রসৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্ট উপভোগ করার পাশাপাশি সর্ববৃহৎ নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লী, নান্দনিক কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন মনভরে দেখার সুযোগ রয়েছে।
কীভাবে যাবেন
কক্সবাজার যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে সরাসরি বাস, ট্রেন বা বিমান সেবা রয়েছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিমান ভ্রমণ সবচেয়ে দ্রুত। সময় লাগবে ১ ঘণ্টা। এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। সময় লাগবে ৮-১০ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে আপনি ট্রেনেও এখন সরাসরি কক্সবাজার আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
কক্সবাজারে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। উচ্চমানের রিসোর্টগুলোর মধ্যে ওশান প্যারাডাইস, কক্স টুডে, লংবিচ, সায়মান, রামাদা অন্যতম। মধ্যমমানের হোটেলের মধ্যে সি-গাল, সি-প্যালেস, বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজ, রয়েল পার্লের সুপরিচিতি রয়েছে। বাজেট ফ্রেন্ডলি হোটেলও কক্সবাজারে প্রচুর রয়েছে। একটু দরদাম করে নিলে বিভিন্ন গেস্টহাউস বা ছোট কটেজে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
কী খাবেন
কক্সবাজারে খাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে নানা রকম সমুদ্রজাত খাবার। কোরাল, সুরমা, লইট্টা, চিংড়ি, এবং অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ ও এগুলোর ফ্রাই এবং কারি স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি ও পিঠা স্থানীয় বাজার থেকে কেনার সুযোগ রয়েছে।